ঢাকা,  সোমবার  ১৭ জুন ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

দমের পশুর গোশত নিজে খেতে পারবে কি?

প্রকাশিত: ১১:৩০, ২৫ মে ২০২৪

দমের পশুর গোশত নিজে খেতে পারবে কি?

ফাইল ছবি

হজে দুই ধরনের দম দেয়া হয়। এক. দমে শোকর। যেমন- হজে তামাত্তু ও হজে কিরানের দম। অর্থাৎ, এই দুই প্রকারের হজ আদায়কারীর জন্য হজের ওয়াজিব আমল হিসেবে পালন করা কোরবানি। 

দুই. দমে জিনায়াত ও ইহসার। অর্থাৎ, হজে কোনো বিধান পালনে ভুল-ত্রুটির কারণে যেই দম বা পশু কোরবানি আবশ্যক হয়।

দম কী?
দম বলতে সাধারণভাবে একটি পুরো বকরি, ভেড়া , দুম্বা কিংবা গরু, মহিষ ও উটের এক সপ্তমাংশ বোঝায়।

উট, গরু ও ছাগল; এই তিন শ্রেণির প্রাণীর যেকোনো একটি দিয়েই দম আদায় করা যায়। তবে সর্বোত্তম হলো দমের জন্য উট নির্বাচন করা। তারপর গরু, এরপর ছাগল।

দমের পশুর গোশত খাওয়ার বিধান

ইহরাম বাঁধার পর হজের বিধান পালনে বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে যে দম আবশ্যক হয়, এ প্রকারের দমের পশুর গোশত হজ পালনকারী নিজে খেতে পারবে না। তার বাবা-মা, সন্তানেরা এবং কোনো ধনী ব্যক্তিও খেতে পারবে না। এটি গরীব মিসকীনদের মাঝে বণ্টন করে দিতে হবে। 

আর দমে শোকর অর্থাৎ, তামাত্তু ও কিরান হজ পালনকারী যে কোরবানি বা দম দিয়ে থাকেন তার গোশত দমদাতাসহ অন্য যে কোনো ব্যক্তিই খেতে পারবেন। 

(আলবাহরুর রায়েক ৩/৭২; মানাসিক ৩৯৩-৫; ফাতহুল কাদীর- ৩/১৬১, ৩/১৬২, রদ্দুল মুহতার- ২/৬১৬, আল বাহরুর রায়েক- ৩/৭৮)

যেসব কারণে দম ও সদকা ওয়াজিব হয়

>> হজ ওমরা বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে মক্কা বা হারাম শরিফে গমনকারী ব্যক্তি ইহরাম ছাড়া মিকাত অতিক্রম করলে তার কর্তব্য মিকাতের বাইরে এসে ইহরাম বেঁধে যাওয়া। তা না করলে তার ওপর দম ওয়াজিব।

>> ইহরাম অবস্থায় মাথা, চেহারা, দাড়ি, হাত, হাতের তালু, পায়ের গোছা, রান ইত্যাদি বড় অঙ্গের পূর্ণ স্থানে খুশবু লাগালে দম ওয়াজিব হয়।

নাক, কান, গোঁফ, আঙ্গুল প্রভৃতি ছোট অঙ্গেও বেশি পরিমাণ খুশবু লাগালে দম ওয়াজিব হয়। তবে ছোট অঙ্গে অল্প পরিমাণ খুশবু লাগালে দম নয় বরং সদকা ওয়াজিব।

>> শরীরের বিভিন্ন স্থানে খুশবু লাগালে দেখতে হবে যদি তা একত্র করলে বড় কোনো অঙ্গের সমপরিমাণ হয়ে যেত বলে মনে হয়, তাহলে দমও দিতে হবে।

>> যদি কাপড়ে খুশবু লাগায় বা খুশবু লাগানো কাপড় পরিধান করে তাহলে তাহলে খুশবুর পরিমাণ এক বর্গবিঘত বা তার বেশি হলে এবং পূর্ণ এক রাত বা পূর্ণ একদিন পরিধান করলে দম ওয়াজিব হবে। আর খুশবুর পরিমাণ তার চেয়ে কম হলে বা পূর্ণ একরাত বা একদিনের থেকে কম  সময় পরিধান  করলে সদকা ওয়াজিব হবে। 

>> ইহরাম অবস্থায় মাজন বা পেস্ট ব্যবহার করলে যদি সেই মাজন বা পেস্টে খুশবুর পরিমাণ পরিমাণ কম থাকে তাহলে মাকরুহ হবে। তবে এ কারণে সদকা দিতে হবে না।

আর যদি খুশবুর পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে দম দিতে হবে।

>>ঘ্রাণযুক্ত কিছু পুরো কপালে লাগালে দম দিতে হবে।

>> ইহরাম অবস্থায় নারীরা হাতে মেহেদি লাগালে দম ওয়াজিব হবে। পুরুষেরা পুরো হাতের তালু বা পুরো দাড়িতে মেহেদি লাগালে দম ওয়াজিব হবে।

>> পুরুষের শরীরের মাপে বানানো হয়েছে এমন সেলাইযুক্ত পোশাক ইহরামের সময় স্বাভাবিক নিয়মে পুরো একদিন বা একরাত বা এর থেকে বেশি পরলে দম ওয়াজিব হবে। এর থেকে কম (সর্বনিম্ন এক ঘণ্টা) পরলে সদকা ওয়াজিব হবে। আর এক ঘণ্টার থেকে কম পরলে নিয়মিত সদকা নয় বরং এক মুষ্টি গম সদকা করলেই হবে। (অর্থাৎ, সামান্য কিছু পয়সা দান করলে হবে)।

>> ইহরাম অবস্থায় পুরুষের পায়ের মধ্যবর্তী উঁচু হাড় ঢাকা পড়ে এমন জুতো , বুট বা মোজা পূর্ণ একদিন বা পুরো একদিন বা একরাত পরিমাণ পরে থাকলে দম ওয়াজিব হবে। তার থেকে কম হলে সময় হলে সদকা ওয়াজিব হবে।

>> ইহরাম অবস্থায় পুরো একদিন বা একরাত বা এর বেশি সময় পুরো মাথা, থুতু, চেহারা বা অন্তত চার ভাগের একভাগ কোনো কাপড়ে ঢেকে রাখলে দম ওয়াজিব।  আর এর কম হলে সদকা ওয়াজিব।

>> ইহরাম অবস্থায় মাথা বা দাড়ির চুলে এক চতুর্থাংশ কিংবা এর বেশি মুণ্ডন করলে বা কাটলে বা উপড়ালে দম ওয়াজিব। এর কম হলে সদকা ওয়াজিব।

>> পুরো ঘাড় বা পুরো বগল বা নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করলে দম ওয়াজিব। আর এর কম পরিমাণ হলে সদকা ওয়াজিব।

>> অজু করার সময় বা কোনোভাবে মাথা বা দাড়ির তিনটি চুল পড়ে গেলে এক মুষ্টি গম পরিমাণ সদকা করতে হবে। আর ইচ্ছাকৃত উপড়ালে প্রত্যেক চুলের বিনিময়ে এক মুষ্টি পরিমাণ দিতে হবে। আর তিনের অধিক উপড়ালে পূর্ণ সদকা দিতে হবে।

>> রান্নার সময় চুল জ্বলে গেলে সদকা করতে হবে।

>> রোগের কারণে বা ঘুমের মধ্যে চুল জ্বলে গেলে কিছু ওয়াজিব হয় না।

>> আঙ্গুলের নখ কাটলে প্রতিটির বদলে একটি করে সদকা করতে হবে।

>> ভাঙ্গ নখ কাটলে কিছু ওয়াজিব হয় না।

>> উত্তেজনার সঙ্গে কোনো নারীকে চুমু দিলে বা পরস্পরের লজ্জাস্থান মিলিত করলে দম ওয়াজিব হয়, বীর্যপাত হোক বা না হোক। তবে এ কারণে হজ ফাসেদ হবে না।

>> উকুফে আরাফার আগে সহবাস করলে দম ওয়াজিব। এ কারণে হজ ফাসেদ হয়ে যাবে। তবে এ বছর হজের অবশিষ্ট কাজগুলো যথারীতি পালন করতে হবে। পরের বছর হজের কাজা আদায় করতে হবে।

>> জানাবাত বা হায়েজ-নেফাস অবস্থায় তাওয়াফে জিয়ারত করলে পূর্ণ গরু বা উট দম দিতে হবে।

>> ইহরাম অবস্থায় একটি উকুন মারলে একটি রুটি বা খেজুর দান করতে হবে। দুটো বা তিনটি উকুন মারলে এক মুষ্টি গম পরিমাণ দান করতে হবে।

আর তিনের অধিক উকুন মারলে পূর্ণ একটি সদকা দিতে হবে।

>> ৯ জিলহজ সূর্যাস্তের আগে আরাফা ময়দানের সীমানা ত্যাগ করলে দম দিতে হবে। তবে সূর্যাস্তের আগেই আবার আরাফার সীমানার ভেতর ফিরে এলে দম দিতে হবে না।

>> ‍সুবহে সাদিকের আগে মুজদালিফা ত্যাগ করলে দম দিতে হবে। (অসুস্থ ও নারীদের দম দিতে হবে না।)

>> যদি কেউ সব কয়দিনে রমী (কঙ্গর নিক্ষেপ) ত্যাগ করে বা কোনো একদিনে পুরো রমী ত্যাগ করে, বা অল্প কিছু রমী আদায় না করে তাহলে তাকে দম দিতে হবে।

>> কিরান ও তামাত্তু হজ আদায়কারীদের জন্য দমে শোকর বা হজের কোরবানি ওয়াজিব। কেউ আদায় না করলে দম দিতে হবে।

>> কিরান ও তামাত্তু হজকারীদের জন্য ১০ জিলহজ প্রথম বড় জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপ, তারপর কোরবানি, তারপর মাথা মুণ্ডনো- এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ওয়াজিব এবং ইফরাদ হজকারীর জন্য প্রথমে কঙ্কর নিক্ষেপ তারপর মাথা মুণ্ডানো এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ওয়াজিব। এতে আগে-পরে বা উল্টাপাল্টা হলে দম ওয়াজিব।

>> ১১ ও ১২ জিলহজ সূর্য ঢলার আগেই কঙ্গর নিক্ষেপ করলে সূর্য ঢলার পর আবার কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে। অন্যথায় দম দিতে হবে।

>> ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগেই হলক বা কছর করে নেওয়া ওয়াজি। বিলম্ব করলে দম ওয়াজিব।

>> বিদায়ী তাওয়াফ ওয়াজিব। না করলে দম দিতে হবে।

>> হারামের সীমানায় নিজে থেকে জন্মানো কোনো গাছ কাটা বা ভাঙ্গ নিষেধ। কাটলে বা ভাঙ্গলে সদকা ওয়াজিব।