ঢাকা,  সোমবার  ১৭ জুন ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

গাজীপুরে প্রতারণার শিকার দুই ব্যবসায়ী

প্রকাশিত: ২১:২৩, ২৪ মে ২০২৪

গাজীপুরে প্রতারণার শিকার দুই ব্যবসায়ী

ফাইল ছবি

প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে দুই গার্মেন্টস ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতারক চক্র বিদেশি সংস্থার ঋণ দেয়ার কথা বলে কৌশলে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দু’জনের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ তোলা হয়েছে। প্রতারক চক্রের হাত থেকে রক্ষার আকুতি জানিয়ে ওই দুই ব্যবসায়ীর পরিবার ঘুরছেন এখানে সেখানে।

অভিযোগ দিয়েছেন পুলিশে। দ্বারস্থ হয়েছেন আদালতের। এ ঘটনায় দুই পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী, বিচার বিভাগ ও পুলিশ বিভাগের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত কামনা করেছেন। হাউ মাউ করে কেঁদে তারা বলছেন ‘বাঁচান, বাঁচান, আমাদের বাঁচান’। আর অভিযুক্তরা বলছেন, তাদের কাছ থেকেই ব্যবসা ও কারখানার শেয়ারের নাম করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে উল্টো মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করা হচ্ছে। টাকা নেয়ার প্রমাণসহ তারা আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী এলাকার দুই মিনি গার্মেন্টস ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন ও কবির হোসেন অভিযোগে জানান, আমাদের সরলতার সুযোগে বিশ্বাস স্থাপন করে প্রতারণা করে সর্বস্বান্ত করেছে একটি প্রতারক চক্র। আমরা বাঁচতে চাই, আমাদের বাঁচান।

ওদের বিচার চাই। অভিযোগে জানা গেছে, নগরের কোনাবাড়ী এলাকার মিনি গার্মেন্টেসের মালিক কবির হোসেন ও গিয়াস উদ্দিনকে ব্যবসার বিপরীতে ঋণ দেয়ার কথা বলে প্রতারণা করে তাদের দু’জনের কাছ থেকে কয়েক মাস আগে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেয়। এদের মধ্যে কবির হোসেনকে ঢাকার একটি হোটেলে নিয়ে এবং গিয়াস উদ্দিনকে কোনাবাড়ী এলাকার হোটেলে নিয়ে ছল চাতুরি করে টাকা হাতিয়ে নেয়। এদের মধ্যে গাজীপুরে বসবাসরত ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়ার বাসিন্দা ভুক্তভোগী কবির হোসেনের কাছ থেকে গত ৪ঠা জানুুয়ারি ৬৫ লাখ টাকা ও বরিশালের উজিরপুরের বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিনের কাছ থেকে গত বছরের ডিসেম্বরে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। চক্রটি টাকা হাতিয়ে নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, কৌশলে চেক ও স্ট্যাম্প হাতিয়ে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে দুই কোটি টাকার মামলা দায়ের করে টাকা আদায়সহ জেল খাটানোর অব্যাহত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। ভিকটিম দু’জনই এখন নিরুপায়।

ভুক্তভোগীরা আরও জানায়, কবির হোসেন ও গিয়াস উদ্দিন এই দু’জনের কাছে দুই কোটি টাকা পাবে এমন ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে চক্রটি ইতিমধ্যে পৃথক দু’টি মামলা করেছে। এদের একটির বাদী গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানার অন্তর্গত লাটশালা গ্রামের শাহাদাৎ হোসেন সাজু। অপর মামলা গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে।? তার কাছেও এক কোটি টাকা পাবে বলে এই মামলাটি দায়ের করেছে চাঁদপুরের চাপিনা গ্রামের ফরিদ উদ্দিন। তারা কবির হোসেন ও গিয়াস উদ্দিনের কাছে পৃথক দুই কোটি টাকা পাবে দাবি করে চেক এবং স্ট্যাম্প আদালতে দাখিল করে মামলা দু’টি দায়ের করেছে। ইতিমধ্যে গিয়াস উদ্দিনের মামলায় ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে। সম্প্রতি তাকে বিমানবন্দর থানা পুলিশ আটক করে আদালতে পাঠালে জামিনে মুক্তি পান। প্রতারক চক্রের সদস্যরা এখন বিভিন্ন লোকজন নিয়ে কবির হোসেন ও গিয়াস উদ্দিনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টাও চালাচ্ছে। এদিকে ব্যাংকের চেক এবং স্ট্যাম্প প্রসঙ্গে ভিকটিম কবির হোসেন ও গিয়াস উদ্দিন জানান, তাদের দু’জনেরই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল শাহাদাৎ হোসেন সাজুর সঙ্গে। 

সাজু প্রতারক চক্রের সদস্য তা তারা জানতেন না। কবির হোসেন জানান, সাজু তার সঙ্গে কাজ করতো। সাজুর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। ব্যবসায়িক মন্দাভাব চলায় সাজু বিদেশি সংস্থা থেকে ঋণ তুলে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে একদিন ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। পরিচয়ের সূত্র ধরে ঋণ দেয়ার আশ্বাস দেয় এবং ঢাকায় যেতে বলে। তাদের কথামতো সাজুকে নিয়ে একদিন ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করার পর তারা সংস্থার কথিত ক্লায়েন্ট করে। পরে দুই লাখ টাকা জমা দিলে ৪ লাখ টাকা ঋণ দিবে জানালে তিনি ২ লাখ টাকা জমা দিয়ে ৪ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। এভাবে তিন চার বার টাকা উঠান। হঠাৎ সাজু কবির হোসেনকে জানায়, ‘আপনি কোম্পানির গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন, এখন এক কোটি টাকাও গ্রহণ করতে পারেন। তাদের কথায় আমি বিশ্বাস করে আমার মিনি গার্মেন্টস এবং জমা-জমি বিক্রি করে, বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে ৫০ লাখ টাকা নিয়ে ঢাকায় এলাকায় যাই। 

সেখানে তারা একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে দুপুরে উন্নতমানের খাবার খাওয়া শেষে জুস খেতে দেয়। জুসের সঙ্গে বিশেষ কোন মেডিসিন বা নেশা জাতীয় কিছু মিশিয়ে আমাকে হিপ্রোটাইস করে স্ট্যাম্প এবং চেকে স্বাক্ষর করতে বলে। আমি সরল বিশ্বাসে স্বাক্ষর দেই। এ সময় তারা আমাকে ১ কোটি টাকা ভর্তি দেখিয়ে একটি ব্যাগ নিয়ে আমার বাসায় আসে। পরদিন সকালে সদ্য বানানো ব্যাংকের টাকা কিছুটা ভেজা আছে জানিয়ে টাকার ব্যাগ চুলা জ্বালিয়ে ট্রেরের ওপর বেশকিছু সময় গরম করে টাকার ব্যাগ খুলতে বলে। তাদের কথামতো ভোরে গ্যাসের চুলার ওপর ট্রেরের মধ্যে টাকার ব্যাগ রাখার ৫-৭ মিনিটের মধ্যে বিকট শব্দ এবং ধোয়ায় বিস্ফোরণ ঘটে। বোঝা গেল, ব্যাগে কোনো টাকা ছিল না। ব্যাগে ছিল বালু আর বারুদ। পরে বুঝতে পারি তারা আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে।’ 

গিয়াস উদ্দিন জানান, কারখানার জন্য পাঁচ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার কথা বলে প্রতারণা করে ৫০ লাখ টাকা, কারখানার কাগজপত্র ও ব্যাংকের চেক হাতে নিয়েছে। তারা দু’জনেই জানান, প্রতারণা করে এসব হাতিয়ে নেয়ার আগে ওই চক্রের কয়েকজনের সঙ্গে পরিচয় হয়। ওই চক্রটির কবলে পড়ে জমা-জমি, গার্মেন্টস কারখানা হারিয়ে তারা এখন নিঃস্ব প্রায়। পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা এখন চরম বিপাকে। সংসার চাকা ঘোরাতে অপারগ হয়ে পড়ছেন। একদিকে ব্যাংক ঋণ অন্যদিকে কথিত দেনাদারদের চাপে দিশাহারা। এসব ঘটনায় কবির হোসেন ও গিয়াস উদ্দিনের পক্ষ থেকে প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে পৃথক জিডি এবং মামলাও দায়ের করা হয়েছে।

কবির হোসেন আর গিয়াস উদ্দিন পুরো ঘটনাটি নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করেছেন। যাতে দেশে আর কেউ এমন চক্রের দ্বারা প্রতারিত ও হয়রানির শিকার না হন। এ বিষয়ে ওই দুই ব্যবসায়ীর দেয়া অভিযোগের প্রধান আসামি শাহাদাত হোসেন সাজু জানান, ‘তারা অভিযোগ করেছে, আমরাও মামলা করেছি। আসলে প্রতারণা কে করেছে, তা আদালত প্রমাণ করবে। আমরা কোনো প্রতারণা করিনি। তাদের অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। তারা বরং আমাদের টাকা মেরে এখন উল্টো অভিযোগ করছে। আমরা তাদের প্রতারণার জন্য আদালতে মামলা করেছি।’