ঢাকা,  সোমবার  ১৭ জুন ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

অনুমতি ছাড়া কেনা যাবে না অটো রাইস মিল

প্রকাশিত: ১৬:৫৮, ২৫ মে ২০২৪

অনুমতি ছাড়া কেনা যাবে না অটো রাইস মিল

ফাইল ছবি

* ধান-চালের দাম বৃদ্ধির তীর কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর দিকে
* পুরাতন মিল কিনলেও মিলবে না লাইসেন্স
* বেশি দামে ধান-চাল কিনে মজুত করে আরো বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ
* মজুত সিন্ডিকেটে বাজারে সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা

দেশে ধান ও চালের দাম বৃদ্ধির জন্য কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়ী করে আসছেন সংশ্লিষ্ট মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা। এ পরিপ্রেক্ষিতে এসব প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকারের অনুমতি ছাড়া অটো রাইস মিল কিনতে পারবে না কোনো কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। এছাড়া পুরাতন রাইস মিল কিনেও নিজেদের নামে চালিয়েও দেওয়া যাবে না- বাজারে সিন্ডিকেট ঠেকাতে এমন কঠোর নিয়ম আনতে যাচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

যেভাবে বাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো
গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের পর হঠাৎ করেই দেশে ধান-চালের বাজার বেসামাল হয়ে ওঠে। মণপ্রতি ধানের দাম বাড়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, আর চালের দাম বাড়ে কেজিপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা। অথচ সদ্য শেষ হওয়া আমন মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়।

এ পরিপ্রেক্ষিতে কুষ্টিয়া, নওগাঁ এবং দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিযোগিতা কমিশনের তিনটি টিম ধান-চালের বাজারে তদন্ত চালায়। তদন্তে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ধান-চালের বাজারে সিন্ডিকেটের চিত্র উঠে আসে।

তদন্ত দলের একজন সদস্য বলেন, দেশের যেসব জেলায় ধান বেশি হয় সেসব জেলায় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রয় প্রতিনিধি রয়েছে। তাদের মাধ্যমে ধান-চাল কেনা হয়। তারা বেশি দামে ধান-চাল কেনেন। এরপর সেগুলো গুদামজাত করা হয়। অনেকে চাহিদার বেশি গুদামজাত করেন।

ঐ কর্মকর্তা বলেন, চাল কেনার ক্ষেত্রেও প্রতিযোগিতা করে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো একসঙ্গে অনেক চাল কেনেন। এরপর বিক্রি করছেন বেশি দামে। খোলা বাজারে যে চাল ৬৫-৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হয়, সেই চাল প্যাকেটে ভরলেই দাম হয়ে যাচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। এর বেশিও বিক্রি করা হয়। এজন্য বাজারে এর একটা প্রভাব পড়ে।

তিনি আরো বলেন, তারা গুদামে রেখে ধান-চালের কৃত্রিম সংকট দেখান। এছাড়া বেশি দামে ধান-চাল কেনার কারণেও বাজারে প্রভাব পড়ে। এভাবেই বাজারে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। 

কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে খাদ্যমন্ত্রীর বৈঠক
গত ২২ জানুয়ারি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়। এ সময় সিটি গ্রুপ, স্কয়ার, প্রাণ আরএফএল, মেঘনা গ্রুপ, এসিআই, আকিজ এসেনশিয়াল-এ ৬টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হয়।

বৈঠকে প্রতিনিধিদের উদ্দেশে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, মিলারদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলাম, তারা বলেছে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতা করে ধান কিনছে ও মজুত করছে। মিলাররা আপনাদের দিকে আঙুল তোলে।

তিনি আরো বলেন, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ভ্যালু অ্যাড করে বাজারে পণ্য বিক্রি করে। সে কারণে তারা বেশি দামে বাজার থেকে ধান কেনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বাজার থেকে অল্প পরিমাণ ধান কিনলেও তার প্রভাব পড়ে খুব বেশি, তখন অন্যরাও বেশি দামে ধান কিনতে বাধ্য হয়। এটা বাজারের জন্য অশুভ।

কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, বাজারে প্রতিযোগিতা করে ধান কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে। ক্যাপাসিটির বেশি অবৈধ মজুত করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

নিয়ন্ত্রণে আনতে উদ্যোগ
এ বিষয়ে খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, কোনো কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান সরকারের বিশেষত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া অটো রাইস মিল কিনতে পারবে না। এটা টাকা থাকলেও কিনতে পারবে না। কেউ বিক্রি করতে চাইলেও কিনতে পারবে না (অনুমতি ছাড়া), অনুমতি লাগবে। সরাসরি পুরাতন লাইসেন্সকে নিজের লাইসেন্স হিসেবেও চালিয়ে দিতে পারবে না। তাকে নতুনভাবে কর্পোরেট লাইসেন্স নিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই এমনটা করা হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণ এই অর্থে না যে তাদের দমিয়ে রাখার জন্য অথবা ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য। তারা যে কাজটি করছে সেটি কীভাবে করছে এবং এখানে জনগণ প্রতারিত হচ্ছে কি না সেটি দেখার জন্যই। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে আমরা বসেছিলাম। সরকারি নিয়ম-নীতির মধ্যে থাকার বিষয়ে তারা আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন।