ঢাকা,  সোমবার  ১৭ জুন ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

কঠোর হচ্ছে সরকার

ওজন বাড়ছে পলিশ চালে, থাকে না পুষ্টিগুণও

প্রকাশিত: ১৪:৩৭, ২৪ মে ২০২৪

ওজন বাড়ছে পলিশ চালে, থাকে না পুষ্টিগুণও

ফাইল ছবি

দেশে দফায় দফায় চাল পলিশ (ছাঁটাই) করা হয়। সেই চালে থাকে না নির্দিষ্ট পুষ্টিমান। এসব চাল খাওয়ার ফলে বাড়ে ওজন— বলছেন পুষ্টিবিদরা। বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তারা বলছে, আগামী আমন মৌসুম থেকে চাল দুই দফার বেশি পলিশ বা ছাঁটাই করলে মুখোমুখি হতে হবে শাস্তির।

চাল পলিশ কী

পরিষ্কার ও ঝকঝকে চাল পেতে তা পলিশ করা হয়। এ পদ্ধতিতে চালের ওপরের যে আবরণ থাকে তা তুলে ফেলা হয়। দেশে সর্বোচ্চ পাঁচ দফা পর্যন্ত চাল পলিশ করা হয় বলে জানা গেছে।

পলিশ করলে কী হয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) ১০ জন গবেষকের এক যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে, চাল পলিশের ফলে মানুষ পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পলিশ চালে থাকে মূলত কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা।

‘বাংলাদেশের জনপ্রিয় উচ্চফলনশীল জাতের সেদ্ধ ও চকচকে (পলিশ) চালে পুষ্টি উপাদানের তারতম্য’ শীর্ষক গবেষণাটি নিয়ে একটি নিবন্ধন গত নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী ফুডস–এ প্রকাশিত হয়।

গবেষণাটিতে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় উচ্চফলনশীল পাঁচটি জাতের চালের পুষ্টিগুণ দেখা হয়। জাতগুলো হলো- বিআর–১১, ব্রি ধান–২৮, ব্রি ধান–২৯, ব্রি ধান–৪৯ ও ব্রি ধান–৮৪। জাতগুলোতে জৈবিকভাবে যে পরিমাণ শর্করা, খনিজ উপাদান, ভিটামিন থাকার কথা, সেই পরিমাণে আছে কি না, তা পরীক্ষা করেন বিজ্ঞানীরা। দেখা যায়, শুধু ব্রি ধান–৮৪ প্রক্রিয়াজাত করতে গিয়ে খনিজ উপাদান ও সব ধরনের ভিটামিন অটুট থাকছে। বাকি জাতের ক্ষেত্রে পলিশ করার ফলে পুষ্টিকর উপাদান বাদ পড়ছে।

গবেষকরা জানান, বিষয়টি খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে।

পলিশ চালে বাড়ে ওজন

চাল পলিশ করলে নির্দিষ্ট পুষ্টিগুণ থাকে না। ফাইবার না থাকায় মানুষের ওজন বাড়ে।

এ বিষয়ে বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান শামছুন্নাহার নাহিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, নরমালি আপনি যখন চালকে পলিশ করবেন তখন যে ক্ষতিটা হয় সেটি হচ্ছে, চালের অনেকগুলো পুষ্টি লস হয়। ফাইবার লস হয়, ভিটামিন বি লস হয়। এগুলো লস হয়।

“আল্টিমেটলি পলিশ চালে যেটা হয় সেটা হচ্ছে, ওজন বাড়তে থাকে। যেহেতু ফাইবার থাকে না, সে কারণে ওজন বাড়তে থাকে। কারণ, কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে ফাইবার না থাকলে সুগার থেকে শুরু করে সবকিছুতেই হ্যাম্পার হয়।”

কঠোর হচ্ছে সরকার

চালের অনিয়ন্ত্রিত পলিশ করা বন্ধে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কঠোর হচ্ছে সরকার। আগামী আমন মৌসুম থেকে এ বিষয়ে দায়ীদের শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, চালের পলিশ ইস্যুতে আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে। ন্যাচারাল কোনো খাদ্যকে কৃত্রিমভাবে গুণগত মান পরিবর্তন করে বাজারজাত করা যাবে না।

“আপনি যখন চালকে তিন-চারবার পলিশ দিয়ে ওপর থেকে পুষ্টি অথবা ন্যাচারাল গুণ নষ্ট করে দিলেন, সে বিষয়ে শাস্তির বিধান আছে। আমরা এ বিষয়ে সরকারি পরিপত্র বা বিধিমালা করে বাস্তবায়ন করব। সবার জন্য বিষয়টি বোধগম্য করে দেব।”

তিনি বলেন, স্বাভাবিক পলিশ করা যাবে। তবে, কতটুকু করা যাবে তা বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে হবে। বেশির ভাগ মানুষ গ্রামে যেটা খান সেটা হচ্ছে দুবার পালিশ করা চাল। কিন্তু কিছু কিছু আছে যেটা সুপার শপে বিক্রি হয়, একদম সিল্কি করা চাল। সে চাল তিন ও চারবার পলিশ করা। পলিশ করে একদম পিচ্ছিল হয়ে যায়, সেগুলো আমরা ডিসকারেজ করব। কোন পর্যায় পর্যন্ত করা যাবে, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেব। কারণ, পুষ্টিগুণ কতটুকু থাকবে সেটা হচ্ছে মূল বিষয়।

“আমি বিশেষজ্ঞ নই। তবে, আমার ধারণা দুবার পলিশ এলাও করা যাবে। এ বিষয়ে আলাদা পরিপত্র অথবা নীতিমালা জারি করা হবে।”

সচিব আরও বলেন, ‘‘এটা আগামী আমন মৌসুম থেকে অর্থাৎ চার মাস পর কার্যকর হবে। এর মধ্যেই আমরা আশা করি সংশ্লিষ্ট  বিধিমালা বা পরিপত্র করে ফেলতে পারব।’’

বিধিমালা করলেও আইন অনুযায়ী শান্তি থাকবে— উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘শাস্তি হয় আইন অনুযায়ী। বিধিমালাতে বিভিন্ন বিধি থাকে।’’

আইনে কী আছে

খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন- ২০২৩ অনুযায়ী, খাদ্যদ্রব্য থেকে কোনো স্বাভাবিক উপাদান সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে অপসারণ বা পরিবর্তন করলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

আইনের ৩নং ধারায় বলা হয়েছে, “যদি কোনো ব্যক্তি- (ক) কোনো অনুমোদিত জাতের খাদ্যশস্য হইতে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যকে উক্তরূপ জাতের উপজাত পণ্য হিসেবে উল্লেখ না করিয়া ভিন্ন বা কাল্পনিক নামে বিপণন করেন; (খ) খাদ্যদ্রব্যের মধ্য হইতে কোনো স্বাভাবিক উপাদানকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে অপসারণ করিয়া বা পরিবর্তন করিয়া উৎপাদন করেন বা বিপণন করেন; (গ) খাদ্যদ্রব্যের সহিত মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কৃত্রিম উপাদান মিশ্রণ করিয়া উৎপাদন করেন বা বিপণন করেন; (ঘ) খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক ইস্যুকৃত খাদ্যশস্য ব্যবসার লাইসেন্স ব্যতীত বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স দ্বারা কোনো ব্যবসা পরিচালনা বা লাইসেন্সে উল্লিখিত পরিমাণের অধিক পরিমাণ খাদ্যশস্য বিপণন করেন; তাহা হইলে উহা হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনূর্ধ্ব ২ (দুই) বৎসর কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।”

সংগৃহিত - ঢাকা পোস্ট