ঢাকা,  শনিবার  ২৭ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

৫ দফা না মানলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি বিএনএর

প্রকাশিত: ১৮:৪২, ৩১ মে ২০২৩

৫ দফা না মানলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি বিএনএর

ছবি: সংগৃহীত

বেতনের ৩০ শতাংশ ঝুঁকি ভাতা, নার্সিং পেশায় স্পেশাল ক্যাডার সার্ভিস চালুসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ)। ১০ জুনের মধ্যে তাদের এই দাবি না মানলে ১১ জুন থেকে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুমকি দেন সংগঠনটির নেতারা।

বুধবার (৩১ মে) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এই দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খাঁন মো. গোলাম মোরশেদ, বাংলাদেশ বেসিক গ্র্যাজুয়েট নার্সেস সোসাইটির সভাপতি নাসিমুল হক ইমরান, স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের মহাসচিব ইকবাল হোসেন সবুজসহ আরও অনেকে।

৫ দফা দাবিগুলো হলো

১. স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘ডিপ্লোমা ইন পেসেন্ট কেয়ার টেকনোলজিস্টদের’ ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সের সমমানের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে এইচএসসি পাসের পর তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সকে স্নাতক ডিগ্রিতে রূপান্তর করতে হবে।

২. গ্র্যাজুয়েট নার্সদের জন্য নার্সিং পেশায় স্পেশাল ক্যাডার সার্ভিস (সেবা ক্যাডার) চালু করা এবং প্রথম শ্রেণির শূন্য পদগুলোতে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।

৩. সরকারি চাকরিতে কর্মরত নার্সদের মূল বেতনের ৩০ শতাংশ ঝুঁকি ভাতা নিশ্চিত করা, অন্যান্য টেকনিক্যাল পেশাজীবীদের ন্যায় চাকরির শুরুতে অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট প্রদানের সুবিধা বহাল রাখতে হবে।

৪. সরকারি নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউটগুলোতে সব প্রকার সংযুক্তি, অতিরিক্ত দায়িত্ব, চলতি দায়িত্ব, নিজ বেতনের আদেশ বাতিল পূর্বক অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, প্রভাষক, ডেমোনেস্ট্রেটর, নার্সিং ইন্সট্রাক্টর পদগুলোতে নিয়োগ দিতে হবে। ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ ভাতা প্রদানসহ বিএসসি ইন নার্সিং শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ ভাতা ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করতে হবে।

৫. নীতিমালা অনুসরণ না করে যে সব বেসরকারি নার্সিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তাদের অনুমোদন বাতিল করা এবং দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

মানববন্ধনে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে নার্স নেতারা বলেন, উল্লেখিত দাবিসমূহ ১০ জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন না হলে ১১ জুন থেকে সারাদেশের সব পেশাজীবী নার্স ও নার্সিং শিক্ষার্থীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবেন। এমনকি পরবর্তীতে প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

বক্তারা বলেন, বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পড়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে সরকারি নার্সিং কলেজে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সাইন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সে পড়ার সুযোগ লাভ করতে হয়। এরপর তিন বছরে ১৭টি মেডিকেল রিলেটেড সাবজেক্ট ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করে চূড়ান্তভাবে পাস করতে হয়। এই সময়টাতে আবার ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিসও ঠিক রাখতে হয়। একজন শিক্ষার্থীকে কতটুকু কষ্ট করে পাস করতে হয়েছে সেটা বর্ণনা করার ভাষা নেই।

বক্তারা আরও বলেন, কোর্স শেষে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছয় মাস ইন্টার্নশিপ করতে হয়। সবশেষে কম্প্রিহেনসিভ বা লাইসেন্সিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে রেজিস্টার্ড নার্সের মর্যাদা অর্জন করতে হয়েছে। কিন্তু যখন দেখি এসএসসি পাস করা, কোনো ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করা, বাংলা মিডিয়ামে পড়াশোনা করা, আর শুধুমাত্র ছয় মাস ইন্টার্নি করা তথাকথিত পেসেন্ট কেয়ার টেকনোলজিকে (পিসিটি) ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সাইন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সের সমমান দেওয়া হয় তখন আমাদের কষ্টের আর সীমা থাকে না।

মানববন্ধনে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খাঁন মো. গোলাম মোরশেদ বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সংবিধানের মৌলিক অধিকার অবমাননা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটি গ্রুপকে এইচএসসি পাসের পর ডিপ্লোমা ইন নার্সিং কোর্সে ভর্তি করার পর একাডেমিক সনদ সরবরাহ করছে। অপরদিকে আবার আরেকটি গ্রুপকে এসএসসি পাসের পর কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে ডিপ্লোমা ইন পেসেন্ট কেয়ার টেকনোলজিস্টদের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বৈষম্যমূলকভাবে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সের সমমর্যাদা দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। আমরা মনে করছি নির্বাচনের আগে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শেখ হাসিনা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা করার উদ্দেশ্যে সাধারণ নার্সদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করার জন্য এই কাজ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এই ধরণের কর্মকাণ্ডে আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একই সঙ্গে আমরা বিশ্বাস করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই ধরনের পক্ষপাতমূলক প্রজ্ঞাপন অনতিবিলম্বে বাতিল করে নার্সিং সমাজে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে।

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা নার্সিং কলেজ স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সভাপতি রাকিবুল হোসেন রাকিব, সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটসের মহাসচিব সাব্বির মাহমুদ তিহানসহ আরও অনেকে।