ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

মমিকে বিরক্ত করলেই মৃত্যু অনির্বায!

প্রকাশিত: ১১:২২, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

মমিকে বিরক্ত করলেই মৃত্যু অনির্বায!

ছবিঃ অন্তর্জাল (প্রতীকী)

মিশরের নাম শুনলেই যে কারো ভাবনায় চলে আসে ‘মমি’। জানেন কি? মমি মানেই হচ্ছে মিশরের পিরামিডের কোনো গুপ্তঘর। যেখানে গেলেই দেখা মেলে শত শত কফিনবন্দি মমি। মিশরের পিরামিডের ভেতরে এ পর্যন্ত অনেক ফারাও, তুতানখামেনসহ বিভিন্ন মানুষ, পশু-পাখির মমির সন্ধান পাওয়া গেছে।

 

তুতানখামেনের মমি

সেকালে মানুষের ধারণা ছিল মৃত্যুর পর আবারো ফিরে আসা যায়। সেখানেও আছে আরেক জীবন। এজন্য শরীর নষ্ট হতে দিতেন না তারা। সংরক্ষণ করে রাখতেন। মমির সঙ্গে খাবার, পোশাক, গয়না, টাকা-পয়সাসহ পোষা কুকুর-বিড়ালকেও দিয়ে দিতেন। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক.কমের তথ্য, কম বয়সী এক মেয়ের মমি ধ্বংস করে নিজের ওপর অভিশাপ নামিয়ে এনেছিলেন এক প্রত্নতাত্ত্বিক।

মমি নিয়ে রহস্য যেন বাড়তেই থাকে। যারা মমি তৈরির কাজে যুক্ত থাকতেন তাদের জীবন এক নির্মম নিষ্ঠুরতা শিকার হত। ওয়ার্ল্ড হিষ্ট্রি-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি মমি তৈরি করতে লাগত ৪০ থেকে ৭০ দিন। মমি তৈরি করার জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং রসায়নে পারদর্শী হতে হতো কর্মীদের। মমি তৈরি করতে মৃতদেহ ইবুতে আনার পর তালের তৈরি মদ ও নীল নদের পানি দিয়ে পরিষ্কার করা হতো মৃতদেহ। এই কাজ করতেন, তাদের বলা হতো ‘স্ক্রাইব’। তাদের কাজ ছিল শুধু মৃতদেহ পরিষ্কার করা। অর্থাৎসমাজের রীতি মেনে মৃতদেহের শুদ্ধির কাজ করতেন স্ক্রাইবরা।

 

স্লিটারদের পরিণতি হতো গুরুতর আহত অথবা মৃত্যু

মৃতদেহের শরীরে গর্ত করার এই কাজ করতেন ‘স্লিটার’ নামের একদল কর্মী। মিশরীয়দের বিশ্বাস ‘স্লিটার’ হলো অকৃতজ্ঞ প্রজা। মৃতদেহে স্ক্রাইবদের এঁকে দেওয়া চিহ্নিত অংশের মাংস কেটেই দৌড়াতে শুরু করতেন স্লিটাররা। আর স্লিটারদের মাথা লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে থাকতেন উপস্থিত জনতা। স্লিটারদের পরিণতি হতো গুরুতর আহত অথবা মৃত্যু।

মমির কারিগরদের এমন করুণ পরিণতি হলেও মমি নিয়ে মিশরীয় সমাজে বিভিন্ন বিশ্বাস কঠোরভাবে মানা হত। অনেক বেশি রহস্যঘেরা মমি হচ্ছে তুতানখামেনের মমি। মিশরের অনেকেই বিশ্বাস করেন, তুতানখামেন মমিকে যারা বিরক্ত করবে, তাদের মৃত্যু অনির্বায। এই বিশ্বাসটা তৈরি হয়েছিল ১৯২২ সালে প্রথম তুতানখামেনের মমি আবিষ্কারের পর থেকে। খননকার্যে ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ হোয়ার্ড কার্টারের নেতৃত্বে যে সব কর্মী যুক্ত ছিলেন, ঘটনাচক্রে তাদের মধ্যে ২১ জনের মৃত্যু ঘটেছিল।

তুতানখামেন সমাধির রহস্য ভেদ করার চেষ্টা চালিয়েছে একালের বিজ্ঞানীরা। এখন পর্যন্ত সমাধির একটি গুপ্তপথের সূত্র খুঁজে পেয়েছেন তারা।  তাদের অনুমান তুতানখামেনের সমাধিতে আরো দু্ইটি গোপন কক্ষ রয়েছে। যার মধ্যে একটি হতে পারে রানি নেফাতিতির সমাধি।

 

মিশর সভ্যতার ইতিহাসে নতুন মোড় ঘুরে যায় তুতানখামেনের মমি আবষ্কারের পর।

তুতানখামেন ছিলেন মিশর সম্রাজ্যের কণিষ্ঠতম ফারাও। খ্রিষ্টপূর্ব ১৩৩২ থেকে ১৩২৩ সাল পর্যন্ত তার রাজত্বকাল ছিল। তিনি কীভাবে মারা গিয়েছিলেন এ নিয়ে বিভিন্ন প্রত্নতত্ত্ববিদের নানা মত রয়েছে। কেউ মনে করেন সাপের কামড়ে মারা গিয়েছিলেন। আবার কেউ বা বলেন ম্যালেরিয়াতে তিনি মারা যান। আবার প্রত্নতত্ত্ববিদদের একাংশ বিশ্বাস করেন, ভারী কিছুতে চাপা পড়ে মারা গিয়েছিলেন এই ফারাও।

তুতানখামেনের মৃত্যু ঘিরে নানা ধোঁয়াশা তৈরি হলেও মমি আবিষ্কারের পর তাকে নিয়ে আম জনতার মনে কৌতূহল বেড়েছে আরো। কারণ, ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ হোয়ার্ড কার্টারের নেতৃত্ব তুতানখামেনের যখন মমি আবিষ্কারের সময় তার সমাধি প্রায় অক্ষত অবস্থায় ছিল। মিশরের বেশির ভাগ পিরামিডে থাকা মূল্যবাণ সম্পত্তি লুঠ হয়ে গেলেও তুতেনখামেনের সমাধিতে পাওয়া গিয়েছিল বিপুল সম্পত্তি। নানা গুরুত্বপূর্ণ নথি। মিশর সভ্যতার ইতিহাসে নতুন মোড় ঘুরে যায় তুতানখামেনের মমি আবষ্কারের পর।

 

চলছে গবেষণা

তুতানখামেনের মমি ঘিরে চলছে আরো গবেষণা। গবেষণা করতে গিয়ে কেন মানুষ মারা গেল, এর পেছনে কী কারণ থাকতে পারে-সেই উত্তর জানতে গবেষণাকেই বেছে নেয়া হয়েছে।

কিন্তু নীল নদের বাসিন্দাদের অনেকের মনে চিন্তা একটাই। যারা বিশ্বাস করেন এই সমাধিতে ঢোকার চেষ্টা করার ফল কখনো ভালো হয় না, তাদের আশঙ্কা,  তুতানখামেনের সমাধিতে অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে আবার ১৯২২ সালের মতো কোনো বিভিষীকা ফিরে আসবে না তো! নতুন করে অভিশাপের ছায়া পড়বে না তো মিশরবাসীদের উপর! বিজ্ঞানমনস্ক চোখ এসব মানতে চায় না কিন্তু বিশ্বাসেরও তো শক্তি আছে। বিশ্বাসতো সহজে টলানো যায় না!

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক.কম,  ওয়ার্ল্ড হিস্টি এবং আনন্দবাজার