ঢাকা,  মঙ্গলবার  ৩০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের পূজা ভাবনা

প্রকাশিত: ২০:৫২, ২০ অক্টোবর ২০২৩

হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের পূজা ভাবনা

ছবি- সংগৃহীত

সনাতন ধর্ম হিন্দুধর্মের প্রকৃত নাম হিসাবে গণ্য হয়। সংস্কৃত এই শব্দবন্ধটির অর্থ হল ‘চিরন্তন ধর্ম’ বা ‘চিরন্তন পন্থা’। এর অনুসারীরা সনাতন ধর্মকে অপরিবর্তনশীল (যা ছিল, আছে এবং থাকবে) বলে মনে করেন। বারো মাসে তেরো পূজা হিসেবে প্রচলিত সনাতন ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের শুরু হয়েছে। পাঁচ দিনব্যাপী এই উৎসবকে ঘিরে কী ভাবছেন উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা, কী পরিকল্পনা তাদের— সেসব বিষয় তুলে ধরেছেন হাবিপ্রবি প্রতিনিধি অলংকার গুপ্তা।

পূজা আনন্দ পরিবারেই

বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের এমবিএ এর ছাত্র দিপু রায় বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীর সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আজ থেকে শুরু হয়ে পাঁচ দিনব্যাপী এই পূজাকে ঘিরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে এক অন্যরকম উৎসাহ আনন্দ বিরাজ করছে। পূজার আনন্দ পরিবারের মধ্যে বিদ্যামান। এছাড়াও অষ্টমী এবং নবমীতে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে পূজার মন্ডপে ঘুরে-ঘুরে প্রতিমা দর্শন করার অনুভূতি সবসময় অন্যরকম হয়। শুনেছি দিনাজপুরের আশেপাশে অনেক বড়-সড় আয়োজনের পূজা হচ্ছে। সব মন্ডপ ঘুরে দেখার ইচ্ছা আছে। সবকিছু মিলিয়ে আশা করছি পূজা অনেক ভালো কাটবে। 

ধর্মীয় আচারের সঙ্গে মিল রেখে অনুষ্ঠান করব 

গণিত বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র প্রসেনজিত বিশ্বাস বলেন, ছোট বেলায় যেমন ঘুরতাম, দলবেঁধে ঠাকুর দেখতাম সেই আনন্দগুলো কমে গেছে। পূজায় অঞ্জলি দিব, মন্দিরে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান গুলোর সঙ্গে মিল রেখে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করব। পরিবারের সঙ্গে মেলা দেখতে যাব। এ সবেই পূজা আনন্দের। একইসঙ্গে ঠাকুর এর কাছে প্রার্থনা করি যেন শক্তির আরাধনার মধ্যে দিয়ে অশুভ শক্তির নাশ হয় এবং শুভ শক্তির জাগরণ ঘটে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যেন সুন্দরভাবে নিরাপত্তার সাথে পূজা করতে পারে— এটাই চাওয়া একজন সনাতনী হিসেবে। সেই সাথে সকলকে শারদীয় শুভেচ্ছা।

নিরাপত্তার ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে সচেতন হতে হবে

ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ১৯তম ব্যাচের ছাত্র তুষার চন্দ্র রায় জানান, বছরের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজাকে ঘিরে প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা পরিকল্পনা থাকে। তবে পূজা এলেই সনাতনীদের মাঝে নিরপত্তা নিয়ে ভয় কাজ করে। প্রতিবার পূজার সময় বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা ভাঙচুরসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকে। এজন্য ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে সচেতন হতে হবে। আর এই মহোৎসবের অন্যতম মাহাত্য হোক সবাই একত্রিত হয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়া। সেই সঙ্গে সবাইকে জানাই শারদীয় প্রিতি ও শুভেচ্ছা। মায়ের কাছে সবার মঙ্গল কামনা করি। 

দুর্গাপূজা দেবশক্তি ও স্বার্থশক্তির পাঠ শেখায়

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মেধস কান্তি রায় বলেন, দুর্গাপূজা বর্তমানে উৎসব আকারে পালন করা হলে এর মধ্যে লুকায়িত আছে এক আধ্যাত্মিক সত্য। দেবশক্তির সম্মিলিত রূপ দেবী দুর্গা স্বর্গরাজ্য দখলকারী মহিষাসুরকে বধ করে স্বর্গ পুনরুদ্ধার করার যে পৌরাণিক কাহীনি দেখতে পাই সেখানেই এই সত্য চিত্রিত হয়েছে। বাস্তব জীবনেও তাই সর্বদা ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়,  ধর্ম-অধর্মের যুদ্ধ চলছে। আসুরিক শক্তি স্বার্থের কারণে সহজেই ঐক্যবদ্ধ থাকে তাই অধিকাংশ সময় দেবশক্তির উপর বিজয় প্রাপ্তহয়। দুর্গাপূজার দ্বারা এই শিক্ষাই পাই যেদিন দেবশক্তি সর্বশক্তি দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হবে সেই আসুরিক শক্তির উপর বিজয় প্রাপ্ত হবে। একজন মানুষের মধ্যেও এই দুই প্রবৃত্তি রয়েছে। তাই বাহ্যিক জগৎ ও আত্মিক জগৎ উভয়ের ক্ষেত্রেই দেবশক্তির বিজয় প্রাপ্ত হওয়াটা জরুরি। বর্তমান যুদ্ধে লিপ্ত বিশ্বের প্রেক্ষাপটে সর্বত্র এই দেবীমাহাত্ম্য প্রচার হওয়া জরুরি। তবেই যুদ্ধের পর শান্তি আসবে। সবাই কে দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

মহালয়ার আগের দিনে এন্টেনা ঠিক করতাম

পরিসংখ্যান বিভাগের পার্থ সারথী সরকার বলেন, পিতৃপক্ষের সমাপ্তির পর মাতৃপক্ষের সূচনা ঘটেছে। মহালয়ার এই পূর্ণ লগ্নে প্রতি বছরের ন্যায় চণ্ডীপাঠ শুনেছি। রেডিওতে বা টিভিতে নয়, ল্যাপটপে। শুনছি সেই চিরচেনা ব্যক্তি, শ্রী বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র’র কণ্ঠে। হঠাৎ ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে ছোটবেলায়। মনে পড়ছে ছোটবেলার সেই মহালয়ার দিনগুলো। দিদি আর আমি, মহালয়ার আগের দিন রাতে বাবার সাহায্য নিয়ে টিভিতে (সাদাকালো টিভি), ন্যাশনাল চ্যানেল (পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের একটি সম্প্রচার চ্যানেল) সংযোগ করতাম টিভির সাথে যুক্ত এন্টেনা নাড়িয়ে, যেন পরদিন ভোর বেলায় মহালয়া দেখতে/শুনতে কোনো বাধার সৃষ্টি না হয়। চণ্ডীপাঠ শেষ হতে হতে সূর্যোদয় হতো।

সমবয়সীদের সাথে হাঁটতে বের হতাম। তাদের সাথে কথোপকথন চলতো, কখনো কখনো তা তর্কের পর্যায়ে চলে যেতো, কীভাবে মা দেবী দুর্গা আবির্ভূত হলেন, কীভাবে মহিষাসুরকে বধ করলেন, এসব নিয়ে চলতো আড্ডা। প্রযুক্তির এই যুগে হাতের মুঠোয় চলে এসেছে পুরো বিশ্ব। অনলাইনে সার্চ করলেই মুহূর্তের মধ্যে সব তথ্য, তথ্য সংক্রান্ত স্থিরচিত্র, চলচ্চিত্র পাওয়া সম্ভব। কিন্তু ফেলে আসা সেই ছোটবেলা, সেইসব দিন ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। দিনগুলো এখন মস্তিষ্কের কোনো একগুচ্ছ নিউরনের সংযোগস্থলে স্মৃতি হয়ে জমে আছে। 

জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্য নিয়ে বাড়ি থেকে দূরে অবস্থান করছি। সবার পূজা ভালো কাটুক, মহাবিশ্বে শান্তি বজায় থাকুক। শুভ শারদীয়া।

অঞ্জলি প্রণাম সিঁদুরেই পূজার আনন্দ

মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের সুমি রানী সরকার লতা জানান, নতুন জামা, খাওয়া দাওয়া, মন্ডপে ঘুরাঘুরি সব মিলিয়ে পূজার আনন্দ অন্য রকম। পরিবারের সাথে অঞ্জলি দিতে পারি, মাকে প্রণাম করতে পারি, দশমীতে সিঁদুর খেলতে পারি, মায়ের বিসর্জন দেখতে পারি এতেই আমার পূজা সার্থক। নিজের এলাকার পূজা উদযাপন করবো। সকল অশুভ শক্তির নাশ হোক, শুভ শক্তির উদয় হোক এই প্রার্থনাই করি।

কৃষি অনুষদের ছাত্রী অনুরাধা রায় বলেন, বয়সের সাথে পাল্লা দিয়ে আবেগময় উৎসবগুলোর উপর আবেগ কমছে। এটার যোগসূত্র পূজার সাথেও রয়েছে। এবার ভার্সিটির ক্লাস করলাম পঞ্চমী পর্যন্ত। এবার পূজোর কেনাকাটাও করেছি ক্লাস, ল্যাবের ফাঁকেই। এখন বাকি পরিবার ও আশেপাশের সবার সাথে পূজার আনন্দ ভাগ করা। সবাই সুষ্ঠ সুন্দর উৎসব পালন করতে চায়। সনাতনীরাও সেটাই কামনা করে। আশা করি পূজো মন্ডপগুলো নিরাপদ থাকবে। সবাই পূজা ভালো হোক।