ঢাকা,  শনিবার  ২৭ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

স্বপ্নের সেতু: নৌরুট ব্যবহারকারীদের মাঝে স্বস্তি

প্রকাশিত: ১২:২৫, ৩০ মে ২০২২

স্বপ্নের সেতু: নৌরুট ব্যবহারকারীদের মাঝে স্বস্তি

স্বপ্নের পদ্মা সেতু

আব্দুল্লাহ আল মামুন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তার গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায়। সালটি ছিল ২০১৭। হঠাৎ বাড়ি থেকে ফোন আসে তার বাবা খুব অসুস্থ। খবর পেয়েই তিনি ঢাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। ঢাকার গাবতলী থেকে হানিফ পরিবহনের বাসে করে বরিশালে আসার পথে তার একমাত্র বিড়ম্বনা হয় ফেরি। দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা ফেরিঘাটে অপেক্ষা করতে হয় তাকে। এর মধ্যে বাড়ি থেকে খবর আসে তার বাবা আর নেই। মৃত্যুর খবর পেয়ে গাড়ি থেকে নেমে বাই লাইনে তাকে আসতে হয় বরিশালে। সেই দুর্ভোগ আর দুর্দিন তাকে আজও কাঁদায়।

অবশেষে দুর্ভোগের ফেরি সরে যাচ্ছে। নির্মাণ করা হয়েছে পদ্মা সেতু। ভাবতে গেলে বাবার মৃত্যুর খবর নতুন করে নাড়া দেয় তাকে। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। আর এরই মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে ফেরির দুর্ভোগ। লাখ লাখ মানুষ আজ সস্তি পাচ্ছে। আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি সময়মতো আমার অসুস্থ বাবার পাশে থাকতে পারিনি। তার মৃত্যুর প্রায় ৩ ঘণ্টা পর বাড়িতে পৌঁছি। আর একটু দেরি হলে হয়তো বাবাকে শেষ দেখাটাও দেখতে পারতাম না। আজ প্রধানমন্ত্রীকে আমি ধন্যবাদ জানাই। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে পদ্মা সেতু নির্মাণ করায়।

এমনিভাবে ২০১২ সালে হালিমা খাতুনের লাশ দেখতে পারেননি তার ছেলে মানিক হাওলাদার। তিনি মায়ের মৃত্যুর সময় পাশে থাকতে পারেননি। দেখতে পারেননি মায়ের লাশটিও।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো রোগীকে ঢাকা পাঠানো হচ্ছে উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু চিকিৎসা নিতে ঢাকা যাওয়ার পথেই মারা যাচ্ছে অনেক রোগী। এর কারণ হিসেবে স্বজনরা বলছেন, ফেরির কারণে সময়মতো ঢাকার হাসপাতালগুলোতে রোগী নিয়ে যেতে না পারার কারণে রোগী মারা যাচ্ছে। তবে এখন আর সে চিন্তা নেই। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হলে অসুস্থ স্বজনকে ঢাকায় নিয়ে যেতে আর সময় লাগবে না। দুর্ভোগ লাঘব হবে সাধারণ মানুষের।

বরিশাল নগরীর সিঅ্যান্ডবি রোড এলাকার লিটু খলিফা বলেন, ১ ঘণ্টার কাজের জন্য ঢাকায় গেলে একটি দিন শেষ হয়ে যায়। কাজ শেষ করে বরিশাল ফিরতে আরও একদিন লাগে। এখন আমরা কাজ শেষ করে দিনে দিনে বাড়ি ফিরতে পারব। দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্ন আজ সত্যি হয়েছে।

সেতু চালুর দিন-ক্ষণ ঘোষণায় এই নৌরুট ব্যবহারকারী যাত্রীদের চোখ-মুখে স্বস্তির ঝিলিক! আসছে কোরবানির ঈদে ঘরে ফিরতে দুর্ভোগে পড়তে হবে না যাত্রীদের। পদ্মা পার হতে মধ্যরাত থেকে বসে থাকতে হবে না ঘাটে। সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজির শিকার হতে হবে না। আর ফেরিতে পার হতে ‘ভিআইপি’ যন্ত্রণায় অসহায় হতে হবে না! লঞ্চ, ফেরিতে গাদাগাদি করে পার হতে হবে না পদ্মা নদী! লঞ্চ-ফেরি-স্পিডবোটে পার হওয়া যাত্রীদের অভিমত এমনই। এসব কারণেই পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সেতু। স্বপ্ন দেখছে পদ্মার দ্বার উন্মোচর হলে বরিশাল অর্থনৈতিকভাবে আরও এগিয়ে যাবে। দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি সড়কপথের সংযোগন স্থাপন হবে। বাড়বে ব্যবসা-বাণিজ্য। বরিশাল থেকে মাওয়া রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী, পণ্যবাহী পরিবহনের চালক-মালিকরা বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও ভোলা থেকে ঢাকায় যেতে সময় কমে যাবে প্রায় দেড় থেকে ২ ঘণ্টা। আর যাত্রীসেবার মানও বাড়বে কয়েকগুণ। মাওয়া ফেরি ও সরু সড়কপথের কারণে এ অঞ্চলে বিলাসবহুল পরিবহন সংযোজন যারা এতদিন করতে পারেননি, তারা পদ্মা সেতু চালু হলেই বিনিয়োগ করবেন। আর এ বিনিয়োগকে সফল করে তুলতে এর পেছনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটনশিল্প।
বরিশাল নগরীর রূপাতলী বাস টার্মিনাল এলাকার পরিবহন চালক সোহাগ বলেন, কুয়াকাটার সমুদ্রসৈকতে ঢাকা থেকে যেতে সময় লাগবে মাত্র ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। অর্থাৎ কক্সবাজারের থেকে অর্ধেকেরও কম সময় লাগবে কুয়াকাটায় আসতে। আবার বরিশাল, পিরোজপুর ও ঝালকাঠির ভাসমান বাজার অর্থাৎ ফ্লোটিং মার্কেট কিংবা শাপলার বিল দেখতে ঢাকা থেকে আসতে তেমন একটা সময়ের প্রয়োজন হবে না। পদ্মা সেতু চালু হলে সরাসরি বরিশাল থেকে ঢাকা যেতে (ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার) সময় লাগবে মাত্র ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা। কারণ ৬ কিলোমিটারের পদ্মা সেতু পার থেকে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিট লাগবে, যা এখন ফেরিতে লাগাছে দেড় থেকে ২ ঘণ্টা।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন