ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ফাঁদ যখন রক্তদান

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ২২ জুলাই ২০২২

অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ফাঁদ যখন রক্তদান

রক্ত প্রতারক হতে সাবধান

‘রক্ত দিন, জীবন বাঁচান’, ‘এখন যৌবন যার, রক্তদানের শ্রেষ্ঠ সময় তার’, ‘তুচ্ছ নয় রক্তদান, বাঁচাতে পারে একটি প্রাণ’,-রক্তদান নিয়ে এরকম হাজারো নীতিকথা রয়েছে। মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচাতে মানুষ কোনো রকম সুবিধা ছাড়াই রক্ত দান করে। কিন্তু এই রক্ত দেওয়াকে ঘিরে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

সিলেট থেকে রাজধানীর ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে রোগী নিয়ে এসেছেন রাজু আহমেদ। রোগীর হার্টের অপারেশন করা হবে। চিকিৎসক অপারেশনের দিন ছয় ব্যাগ ‘বি’ পজেটিভ রক্ত সংগ্রহ করে রাখতে বলেছেন।

হাতে মাত্র একদিন সময়। ঢাকায় রাজু আহমেদের তেমন পরিচিত কেউ নেই। দুই-একজন যারা আছেন তাদেরকে বলেছেন। রাজু আহমেদ তার ফেসবুকে নিজের ফোন নম্বর দিয়ে ‘বি’ পজেটিভ রক্ত চেয়ে পোস্ট দেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সেই পোস্ট দেখে অনেকেই রক্ত দেওয়ার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

দুই-একজন রক্ত দিতে চলেও এসেছেন। এভাবে ফোন আসছে। রক্তদাতারা আসছেন। চার ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ হলো। রাজু আহমেদ রক্তদাতাদের ফল-জুস খেতে দিয়েছেন। তারপর রেস্টুরেন্টে নিয়ে নাস্তাও করিয়েছেন। চলে যাওয়ার সময় রক্তদাতাদের হাতে এক হাজার করে টাকাও দিয়েছেন খুশি হয়ে।

আরও দুই ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ বাকি। মোবাইলে একটি কল এলো সাভার থেকে। তিনি জানালেন, তার রক্তের গ্রুপ বি পজেটিভ। তিনি রক্ত দিতে চান। কিন্তু গাজীপুর থেকে এসে রক্ত দেবেন- এজন্য আসার ভাড়া ৭০০ টাকা আগে বিকাশে পাঠাতে হবে।

রাজু আহমেদ প্রথমেই তার টাকা চাওয়ার কথা শুনে ভালোভাবে নিতে পারেননি। তিনি ডোনারকে বললেন, ‘সাভার থেকে আসতে তো ভাই ৭০০ টাকা লাগবে না। আপনি বাসে চলে আসেন। আমি আপনার যাওয়া এবং আসার ভাড়া দিয়ে দেব।

ডোনার বলেন, ‘আমি সিএনজি করে আসব।’ রাজু বলেন, ‘ভাই রক্ত নেওয়ার খুব তাড়া নেই, আপনি ধীরেসুস্থে বাসে করেই আসেন’।

একথা শোনার পর তিনি ফোন কেটে দেন। তারপর যতবার ফোন দেওয়া হয় নম্বর বন্ধ।

হাসপাতালে বসেই রক্ত সংগ্রহ করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন রাজু আহমেদ। এরপর আবার একটি ফোন আসে গাজীপুর থেকে। যথারীতি তিনি আসেন এবং রক্ত দেন। তাকে নাস্তা খাওয়ার পর বসে রোগী সম্পর্কে কথাবার্তা বলছিলেন। রাজু আহমেদ সাভার থেকে যিনি রক্ত দিতে আসবেন বলে ৭০০ টাকা আগে পাঠাতে বলেছিলেন তার সম্পর্কে বললেন। এসময় এই রক্তদাতাও তার একটি অভিজ্ঞতার কথা বলেন রাজু আহমেদের কাছে।

তিনি বলেন, ‘ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনেই আমার এক আত্মীয়ের হার্টের অপারেশন করা হয়। এটা করোনার যখন ভয়াবহ অবস্থা, ঠিক সেই সময়ে আমি ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলাম। আমারও বি পজেটিভ রক্তের প্রয়োজন ছিল ৯ ব্যাগ। গাজীপুর থেকে এক লোক ফোন করে রক্ত দিতে আসে। তার নাম আলামিন। সেসময় রক্ত নেওয়ার আগে করোনা টেস্ট করানো হতো। আড়াই হাজার টাকা লাগত করোনা টেস্ট করাতে। টেস্টের রেজাল্ট পাওয়া যেত দুই দিন পর। তারপর রক্ত নেওয়া। আলামিন এলো। তার করোনা টেস্ট করালাম। নাস্তা খাইয়ে বললাম, ভাই দুইদিন পর রক্ত নেওয়া হবে করোনার রেজাল্ট দেখার পর। এই বলে তার হাতে ৫০০ টাকা দিলাম। তিনি ১৫০০ টাকা দাবি করেন। বলেন, আমার সিনজিতে আসতে এবং যেতে ১৫০০ টাকা খরচ। এটা দিতে হবে। তখন আলামিনের কাছে অনুরোধ করে ১১০০ টাকা দিই এবং বলি দুইদিন পর আসেন রক্ত দিতে। ঐদিন আপনাকে পুষিয়ে দেব। তিনি চলে যান। আর আসেন না। ফোন করেও আর পাইনি। যতবার কল করেছি নম্বর বন্ধ পেয়েছি।’

একথা রাজু আহমেদ শোনার পর বলেন, ‘আমাকে যিনি কল করেছিলেন তার নামও আলামিন। তখন গাজীপুরের ওই রক্তদাতা নিজের ফোনে খুঁজতে লাগলেন আলামিনের নম্বর। সেই সময়েই আলামিনের নম্বর সেভ করে রেখেছিলেন। খুঁজে পেয়ে মিলিয়ে দেখেন একই নম্বর।

আরো পড়ুন