ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

প্রেম, বিয়ে ১৯ মাস পর লাশ

প্রকাশিত: ১১:৩৮, ২১ ডিসেম্বর ২০২১

প্রেম, বিয়ে ১৯ মাস পর লাশ

মাহমুদা খানম আঁখি (২১) একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। ১৯ মাস আগে প্রেম করে বিয়ে করেন আইনজীবী আনিসুল ইসলামকে (৩২)। বিয়ের পর যৌতুকের জন্য শুরু হয় নির্যাতন। সর্বশেষ পাশবিক নির্যাতনে তার পেটের নাড়িভুড়ি ছিঁড়ে যায়। ওই অবস্থায় তালাবদ্ধ ঘরে তাকে আটকে রাখা হয়। নিজের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করায় মা-বাবার সাথে যোগাযোগ ছিল না তার। একা ঘরেই ছটফট করে মৃত্যুর আগ মুহূর্তে স্বামী নিয়ে যান হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা জরুরি ভিত্তিতে তাকে বাঁচাতে অপারেশন করেন। অপারেশন শেষে তার অবস্থা আরও খারাপ হলে তাকে আইসিইউতে নেয়ার পরামর্শ দেন তারা।
কিন্তু স্বামী আনিসুল তাকে সাধারণ বেডে ফেলে রাখেন। খবর পেয়ে মান-অভিমান ভুলে হাসপাতালে ছুটে যান আঁখির পরিবারের সদস্যরা। বেসরকারি একটি হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হয় তাকে। তবে ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। আইসিইউতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বেসরকারি সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির এলএলবি দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী আঁখি। শনিবার সকালে হাসপাতালে নেয়ার পর তিন হাসপাতাল ঘুরে রোববার সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে চান্দগাঁও থানার ওসি মইনুর রহমান জানিয়েছেন, খাদ্যনালী ছিঁড়ে যাওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে। তাৎক্ষণিক পুলিশ স্বামী আনিসুল ইসলামকে পাকড়াও করে। গতকাল সোমবার তাকে আদালতে তোলা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার এসআই মো. জাকির হোসেন বলেন, আজ মঙ্গলবার তাকে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর এমন নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস ও তার স্বজনদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। আঁখি নগরীর সৈয়দ শাহ রোডের ল্যান্ডমার্ক হাউজিং সোসাইটির রেজিয়া টাওয়ারের বাসিন্দা মদিনা প্রবাসী মফিজুর রহমানের কন্যা। তিন সন্তানের মধ্যে আঁখি ছিল দ্বিতীয়। আঁখির স্বামী নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন পাঠানিয়াগোদা শওকত আবাসিক এলাকার মাসুদা খাতুন ভবনের তৃতীয় তলার বাসিন্দা। তার গ্রামের বাড়ি বাঁশখালীর জলদিতে।
মামলার বাদী ও আঁখির বড় ভাই নগরীর প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবির ছাত্র মো. মিজানুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, দীর্ঘদিন প্রেম করার পর ১৯ মাস আগে আঁখির সাথে আনিসুল ইসলামের বিয়ে হয়। তবে এ বিয়ে আমাদের পরিবার মেনে না নিয়ে তার সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আমরা জানতে পারি, বিয়ের পর থেকে স্বামী আনিসুল ও তার মা ফরিদা আক্তার এবং বোন হামিদা বেগম নির্যাতন করেন। নিজের পছন্দে বিয়ে করায় স্বামীর নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করতো সে।
তাকে প্রায় মারধর করা হত। তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়। যাতে করে কারও সাথে যোগাযোগ করতে না পারে সেজন্য তাকে তালাবন্দ করে রাখা হত। সর্বশেষ এক সপ্তাহ আগে তার ওপর চরম নির্যাতন চালানো হয়। উপর্যপুরি লাথিতে তার নাড়িভুড়ি ছিঁড়ে যায়। এ অবস্থায় তাকে তালাবদ্ধ ঘরে ফেলে রাখা হয়। প্রচন্ড ব্যথায় সে চিৎকার করতে থাকে। অবস্থার চরম অবনতি হলে শনিবার সকালে তাকে বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার চিকিৎসকরা দ্রুত তাকে অপারেশনের জন্য চমেক হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে জরুরি অপারেশন হয়।
ডাক্তারদের পরামর্শে তাকে আইসিইউতে না রেখে সাধারণ বেডে ফেলে রাখা হয়। এ খবর পেয়ে আমরা ছুটে যাই এবং তাকে নগরীর পাঁচলাইশ সার্জিস্কোপ হাসপাতালের আইসিইউতে নিয়ে যাই। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেখানে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় রোববার রাতেই আঁখির স্বামী, শাশুড়ি ও ননদকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন বাদী মিজানুর রহমান।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মইনুর রহমান বলেন, আঁখির ভাই মিজানের মামলায় আসামি আনিসুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে আঁখির খাদ্যনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে, দ্রুত রিপোর্ট পাওয়া যাবে।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন