ঢাকা,  শুক্রবার  ০৩ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

অসময়ে তরমুজ চাষে সফল নীলফামারীর ৩ কৃষক

প্রকাশিত: ১১:৫৪, ২৯ মে ২০২৩

অসময়ে তরমুজ চাষে সফল নীলফামারীর ৩ কৃষক

ফাইল ছবি

দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে মাচায় ঝুলছে লাউ-কুমড়া। কিন্তু কাছে গিয়ে একটু ভালো করে দেখলে দেখা যাবে এগুলো লাউ বা কুমড়া নয়। মাচায় জাল দিয়ে মোড়ানো ব্যাগের ভেতরে ঝুলছে হলুদ-সবুজ-ডোরাকাটা রসালো তরমুজ। প্রথমবারের মতো অসময়ে উৎপাদিত তরমুজ চাষ করে সাড়া ফেলেছেন নীলফামারীর তিন কৃষক। কৃষি বিভাগের সহায়তায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করে প্রথমবারেই সাফল্য পেয়েছেন কৃষকেরা। এতে অনেক কৃষকই এই তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সুত্রমতে, নীলফামারী জেলা শীতপ্রধান হওয়ায় জেলার কোথাও স্বাভাবিক সময়ে তরমুজ চাষ করেন না কৃষক। কিন্তু গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে এ অঞ্চলের আবহাওয়া এবং মাটি উপযোগী। দেশের অন্যান্য জেলায় স্বাভাবিকভাবে জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম পর্যন্ত তরমুজের বীজ রোপণ করা হয়। কিন্তু নীলফামারীতে মার্চের প্রথম সপ্তাহে তরমুজের বীজ রোপণ করা হয়। কৃষি বিভাগের অনুপ্রেরণায় এবার জেলা সদরের তিনজন কৃষক ৩৪ শতাংশ জমিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করেছেন।

জেলায় প্রথমবারের মতো তরমুজ চাষ করা তিন কৃষকের মধ্যে অন্যতম কানিয়ালখাতা গ্রামের কৃষক সামছুল হক (৩৫)। নিজের কৃষিজমি ২৬ শতক হলেও বাৎসরিক চুক্তি নিয়ে চার বিঘা জমিতে শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসল ফলান তিনি। এবার ১৫ শতাংশ জমিতে চাষ করেছেন গ্রীষ্মকালীন তরমুজ। জমিতে চারা রোপণের ৭৫ দিনে অসংখ্য ছোট-বড় তরমুজে ভরেছে তার ক্ষেত। জেলায় পরীক্ষামূলক চাষে এমন সফলতা সাড়া ফেলেছে এলাকায়। তেমনি ব্যাপক লাভের আশা করছেন ওই কৃষক।

সরেজমিনে দেখা যায়, ক্ষেতে বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মাচা। সেই মাচায় অসংখ্য ছোট বড় তরমুজ ঝুলে আছে। তরমুজগুলোর রং বাহারি। কোনোটির গায়ে ডোরাকাটা দাগ, কোনোটি হলুদ, কোনোটি আবার কালচে সবুজ। 

কৃষক সামছুল হক বলেন, ‘আমি প্রতিবছর বেগুন, পটোল, ঢ্যাঁড়স, মিষ্টিকুমড়াসহ অন্যান্য শাকসবজির আবাদ করি। এই বছর প্রথম ১৫ শতাংশ জমিতে তরমুজের আবাদ করেছি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে অফিসার এসে আমাকে বলছেন, এই আবাদটা করেন আপনার জন্য ভালো হবে। চাষ করার পর থেকে কৃষি অফিস থেকে দেখাশুনার দায়িত্ব সব করে আমি শুধু একটু শ্রম দিয়েছি। আমার এখানে রোগবালাইও নেই, ফলনও ভালো আছে। ১৫০টা তরমুজ গাছ রয়েছে। এতে ৬০০ এর বেশি তরমুজ আছে। আমি মাত্র খরচ করেছি ১৬ হাজার টাকা। ভালো লাভ আসবে। আগামী বছর আমি বাড়ির কাছে চাষ করবো। এবার তো অল্প করেছি বাড়ির কাছে এক বিঘা জমি তরমুজ চাষ করবো।’ 

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এস এম রাকিব আবেদীন বলেন, ‘আমার কর্মরত পৌরসভা ব্লকে ৭ শতক জমিতে পরীক্ষামুলক এ তরমুজ চাষ করা হয়েছে। চাষ করে যেটি দেখতে পেলাম, এই পৌরসভা ব্লকে আবহাওয়া ও মাটির যে গুণাগুণ এতে এই তরমুজগুলো ভালো চাষ করা যাবে। আর তরমুজের যত্নে বিষয়ে আমরা যারা লাউ-কুমড়া চাষ করি, তারা কিন্তু সহজেই তরমুজ চাষ করতে পারবো। যেহেতু একই পরিবারের ফসল এগুলো, একই ধরনের পোকার আক্রমণ ও রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এখানে যদিও রোগ হয়নি কিন্তু মাছি পোকার আক্রমণ খুব বেশি হয়েছে। নিরাপদ পদ্ধতিতে ফ্যারামণ ট্যাপ ও ব্যাগিং করা হয়েছে। শুধু এগুলো করা হয়েছে পোকার জন্য কিন্তু আমরা কোনো কীটনাশক ব্যবহার করিনি। আমি বলতে পারি আমার এই ব্লকে এই তরমুজটি অনেক ভালো চাষ হবে এবং ভবিষ্যতে আমি এটি অবশ্যই সম্প্রসারণ করার চেষ্টা করবো।’ 

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক আহমেদ বলেন, ‘আমরা নীলফামারী সদর উপজেলায় প্রথমবারের মতো গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করেছি। তিনজন উদ্যোমী কৃষককের মাধ্যমে এই তরমুজ চাষ করেছি। এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে আমরা আছি এবং বীজ, সার সহ অনান্য খরচ আমরা দপ্তর থেকে দিয়েছি। গ্রীষ্মকালীন তরমুজ সারা দেশে লাভজনক ফসল, আমরা দেখতে চাচ্ছি কৃষকেরা এই অঞ্চলের মাটি চাষ করতে পারছে কিনা। কিভাবে কৃষকদের লাভবান করা যায় সেটা আমরা দেখছি। যেহেতু নীলফামারীতে আগে তরমুজ চাষ হয়নি এখন বর্তমানে যা দেখছি খুব ভালো অবস্থা কৃষক সন্তুষ্ট আছে। উদাহরণ হিসেবে যদি বলি সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের কৃষক শামছুক হক তার ওখানে ১৫ শতক জমিতে তরমুজের গাছ হয়েছে ১৫০টি। হিসাব করে দেখলাম প্রতিটি গাছে চারটি করে তরমুজ ধরে এবং প্রতি তরমুজ যদি তিন থেকে সাড়ে তিন কেজি ওজন হয় তাহলে এই তরমুজটা প্রায় এক লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবে। এই তরমুজটি স্বল্পমেয়াদী ফসল ৮০ থেকে ৯০ দিনের মাথায় হারভেস্ট করা যায়।’