ঢাকা,  সোমবার  ১৭ জুন ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

চালকবিহীন হেলিকপ্টারের আবিষ্কারক বিজ্ঞানী হুমায়ুন এখন কিশোরগঞ্জে

প্রকাশিত: ১১:৪১, ২৫ মে ২০২৪

চালকবিহীন হেলিকপ্টারের আবিষ্কারক বিজ্ঞানী হুমায়ুন এখন কিশোরগঞ্জে

সংগৃহিত ছবি

বিশ্বের সর্বাধুনিক চালকবিহীন হেলিকপ্টার ও বিমান আবিষ্কারক বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. হুমায়ুন কবির দীর্ঘ ২০ বছর পর জন্মভূমি বাংলাদেশে এসেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানিতে ঊর্ধ্বতন বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। 

শুক্রবার (২৪ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার বড় আজলদী গ্রামে নানা বাড়ির সামনে ফসলের মাঠে স্ত্রী-সন্তানসহ হেলিকপ্টারে অবতরণ করেন তিনি। ২০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিজ এলাকায় এসেছেন তিনি। তাকে একনজর দেখতে বিভিন্ন বয়সের হাজারো নারী-পুরুষ ও শিক্ষার্থীর ভিড় জমে। 

এসময় তাকে স্বাগত জানাতে পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রেনু, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক আব্দুল মান্নান, পাকুন্দিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান টিটু ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ গ্রামের হাজারো মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. হুমায়ুন কবিরের বাবার বাড়ি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের নাগেরগ্রামে হলেও শৈশব ও কৈশোর কেটেছে জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলা চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বড় আজলদী গ্রামের নানার বাড়িতে। কারণ সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার বাবা-মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ হওয়ায় তাকেও বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. হুমায়ুন কবির কর্মরত রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় অগাস্টা এরোস্পেস কর্পোরেশনে প্রধান প্রকৌশলী হিসাবে। তিনি বিশ্বের প্রথম রিমোট কন্ট্রোল হেলিকপ্টারের উদ্ভাবক।

জানা যায়, বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির ১৯৮৬ সালে রিমোট নিয়ন্ত্রিত এইচ-৫ হায়েন্স হেলিকপ্টার আবিষ্কার করেন। ফিলাডেলফিয়ায় অগাস্টা এরোস্পেস কর্পোরেশনে প্রধান প্রকৌশলী হিসাবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতিরক্ষা প্রকল্পে নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন।

তিনি সর্বশেষ ২০০৪ সালের ৫ মার্চ তিনি কিশোরগঞ্জে এসেছিলেন। সেসময় তাকে পাকুন্দিয়া ও কটিয়াদীতে নাগরিক গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। 

বিজ্ঞানী ড. হুমায়ুন কবির ১৯৫৬ সালে ময়মনসিংহ জেলার মধ্যে রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপে প্রথম হন। বিভিন্ন বাড়ি লজিং থেকে ১৯৭০ সালে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৭২ সালে উচ্চ মাধ্যমিকেও কৃতিত্বপূর্ণ রেজাল্ট করেন। পরে আইএ পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত পদার্থ বিদ্যা বিভাগে ভর্তি হন। গণিত শাস্ত্র ও গবেষণার প্রতি তার আকর্ষণ ছিল বেশি। তাই ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স শেষ না করেই তিনি পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএস করার জন্য ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটনে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড. হুমায়ুন কবির এ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি অর্জন করেছেন। হুমায়ুন কবির ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন অস্টিনের টেক্সাস ইউনিভার্সিটি থেকে। তার গবেষণার বিষয় ছিল মহাশুন্যযান ও রকেট বিজ্ঞান।

১৯৮৬ সালে বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির আবিষ্কার করেন রিমোট নিয়ন্ত্রিত এইচ-৫ হায়েন্স হেলিকপ্টার।

বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবিরের মামা বলেন, স্বাধীনতার পরে সুখিয়া বাজারে বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির তার নানার সঙ্গে তেল বিক্রি করেছে। আজকে সে নামকরা বৈজ্ঞানিক হয়েছে। সবাই যদি হুমায়ুন কবিররের মতো পড়াশোনা করে তাহলে দেশের গর্ব হতে পারবে।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রুহা বলেন, বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির আসবেন এই সংবাদ শুনে সকাল থেকেই অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি তাকে দেখার জন্য। সত্যিই উনি আমাদের এলাকার গর্ব। উনি আমাদেরকে অনেক দিকনির্দেশনামূলক কথা বলেছেন। মনোযোগ দিয়ে সবসময় পড়ার জন্য বলেছেন। কখনই পড়াশোনায় নকল না করার উপদেশ দিয়েছেন। 

পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেণু বলেন, বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এই দেশের জন্য উনার অনেক ত্যাগ রয়েছে। উনার মত মানুষ আমাদের সন্তান এটা আমাদের গর্ব। যিনি সারা বিশ্বের মাঝে বাংলাদেশের নাম তুলে ধরছেন। এলাকার প্রতিটি মানুষকে তিনি আপন করে নিয়েছেন। আমরা আশা করব আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এমন কিছু উনি করে যাবেন যাতে আমরা বলতে পারি আমাদের একজন বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির ছিল। 

বিজ্ঞানী ড. হুমায়ুন কবির বলেন, বিশ বছর পর দেশে এসেছি। বাংলাদেশে আসতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। এসে দেখি এলাকার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা শহরের চিত্রও পাল্টে গেছে। ২০ বছর আগে যখন এসেছিলাম তখন আমার আবিষ্কার ছিল একটি। এখন বি টুয়েন্টি টু অসপ্রে নামে আরো দুটি আবিষ্কারযুক্ত হয়েছে। আমি হেলিকপ্টার ও বিমানের ওপর কাজ করছি  সরকারের অধীনে। এছাড়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছি। আমার স্বাক্ষরে পিএইচডি ডিগ্রি নিতে হয়। শুধু বলব এখানে আপনাদের ভালবাসা দেখে আমি আপ্লুত। 

তিনি গত বুধবার (২২ মে) স্ত্রী ফরিদা কবিরসহ বাংলাদেশে আসেন। আগামী ৩১ মে পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ জেলা সার্কিট হাউসে থাকবেন।