ঢাকা,  মঙ্গলবার  ০৭ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে রেকর্ড, মিললো ৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ১৯ আগস্ট ২০২৩

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে রেকর্ড, মিললো ৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা

আবারও কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্সে রেকর্ড পরিমাণ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া গেছে

আবারও কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্সে রেকর্ড পরিমাণ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া গেছে। মসজিদের আটটি দানবাক্স খুলে গণনা শেষে মিলেছে পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা। এটি মসজিদের ইতিহাসে দানবাক্স থেকে পাওয়া সর্বোচ্চ টাকা। তিন মাস ১৩ দিন পর শনিবার (১৯ আগস্ট) সকালে খোলা হয় এসব দানবাক্স। সারাদিন গণনা শেষে রাত সাড়ে ৯টার দিকে জানানো হয় টাকার পরিমাণ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, ‌‘মসজিদের ইতিহাসে দানবাক্স থেকে এবার সর্বোচ্চ টাকা পাওয়া গেছে। টাকা ছাড়াও মিলেছে স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রা।’

এর আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ এবং পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের উপস্থিতিতে কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে খোলা হয় সবগুলো দানবাক্স। এরপর পাওয়া যায় ২৩ বস্তা টাকা। বস্তাবন্দি করে টাকা নিয়ে যাওয়া হয় মসজিদের দোতলায়। প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে শুরু হয় গণনা। মাদ্রাসার দেড় শতাধিক খুদে শিক্ষার্থী, ব্যাংকের অর্ধশতাধিক স্টাফ এবং মসজিদ কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মিলে প্রায় আড়াই শতাধিক লোক টাকা গণনা করেছেন।

এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রতি তিন মাস পরপর পাগলা মসজিদের আটটি দানবাক্স খোলা হয়। এবার তিন মাস ১৩ দিন পর খোলা হলে ২৩ বস্তা টাকা পাওয়া যায়। মসজিদ পরিচালনা, এর অর্থ-সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় ২৯ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে জেলা প্রশাসক ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র।’

মসজিদের দানবাক্স খোলা উপ-কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) কাজী মহুয়া মমতাজ জানিয়েছেন, চার মাস আগে গত ৬ মে দানবাক্সে ১৯ বস্তায় পাওয়া গিয়েছিল পাঁচ কোটি ৫৯ লাখ সাত হাজার ৬৮৯ টাকা। সঙ্গে মিলেছিল বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রুপা। তার আগে গত ৭ জানুয়ারি তিন মাস ছয় দিন পর দানবাক্স খুলে ২০ বস্তা টাকা পাওয়া গিয়েছিল। দিনব্যাপী টাকা গণনা শেষে চার কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রুপা পাওয়া গিয়েছিল। সঙ্গে ডায়মন্ডের গয়নাও পাওয়া গিয়েছিল। এর আগে গত বছরের ১ অক্টোবর খোলা হয় দানবাক্স। তখন পাওয়া গিয়েছিল তিন কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা। গত বছরের ২ জুলাই পাওয়া গিয়েছিল তিন কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫ টাকা। তার আগে মার্চে পাওয়া গিয়েছিল তিন কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।  

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে ১০ শতাংশ জমির ওপর মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। সময়ের সঙ্গে পাগলা মসজিদের পরিধির পাশাপাশি বেড়েছে খ্যাতি। মুসলমানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন এই মসজিদে দান করেন। এখানে দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে মোটা অংকের টাকা দান করেন অনেকে। দানের টাকা ব্যাংকে থাকে। ওই টাকার লভ্যাংশ থেকে গরিব-অসহায় মানুষকে আর্থিক সহায়তা, ক্যানসারসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের অনুদান দেওয়া হয়। এ ছাড়া দরিদ্র শিক্ষার্থীদের অনুদান দেওয়া হয়।

মসজিদ কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দানের টাকায় মসজিদের বড় ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। মসজিদ ঘিরে এখানে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন বহুতল কমপ্লেক্স নির্মিত হবে। যেখানে ৩০ হাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। থাকবে সমৃদ্ধ লাইব্রেরিসহ নানা ব্যবস্থা। কমপ্লেক্সের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হবে প্রকল্পের কাজ।’