ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

প্রাচীন বাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্য হারিকেন বিলুপ্তির পথে

প্রকাশিত: ০৭:৫৩, ২৬ জুলাই ২০২০

প্রাচীন বাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্য হারিকেন বিলুপ্তির পথে

গ্রামীণ জীবনে অন্ধকার দূর করতে একমাত্র অবলম্বন ছিল হারিকেন। হারিকেন জ্বালিয়েই বাড়ি উঠানে বা বারান্দায় পড়াশোনা করতো শিক্ষার্থীরা। রাতের বেলায় পথ চলার জন্য ব্যবহৃত ছিল হারিকেন। হারিকেনের জ্বালানি আনার জন্য প্রতি বাড়িতেই থাকতো কাচের বিশেষ ধরনের বোতল। সেই বোতলে রশি লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হতো। হাটের দিনে সেই রশিতে ঝুলানো বোতল হাতে যেতে হতো হাটে। এ দৃশ্য বেশি দিনের নয়। পল্লীবিদ্যুতায়নের যুগে এখন আর এমন দৃশ্য চোখে পড়ে না।

প্রাচীন বাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্য কুপি বাতি (টেমি) ও হারিকেন এখন শুধুই স্মৃতি। যেখানে গ্রাম বাংলার প্রতি গৃহের অতি প্রয়েজনীয় কুপি ও হারিকেন আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। গ্রামের আমাবষ্যার রাতে মিটি মিটি আলো জ্বালিয়ে মানুষের পথ চলার স্মৃতি এখনও তাড়া করে।
চলচ্চিত্রের প্রথম আমলের ছবিগুলোর দিকে এক নজর তাকালেই তার নমুনা পাওয়া সম্ভব। যেখানে সিনেমার নায়িকা তার ভালোবাসার মানুষটিকে অন্ধকার রাতে খুঁজে পেতে কুপি হারিকেন নিয়ে ছুটে আসে।

আবার বাংলার সাহিত্যের অন্যতম ‘ডাক হরকরা’ গল্পের নায়ক তার এক হাতে হারিকেন আর অন্য হাতে বল্লম নিয়ে রাতের আধারে ছুটে চলে তার কর্ম পালনে। একটা সময় ছিল যখন বাহারি ধরনের কুপি ও হারিকেন ছিল মানুষের অন্ধকার নিবারণের অবলম্বন।
কিন্তু কালের বির্বতনে কুপি বাতি ও হারিকেনের স্থান দখল করে নিয়েছে বিজ্ঞান প্রযুক্তি বৈদ্যুতিক বাল্ব, সৌরবিদ্যুৎ, চার্জার লাইটসহ মোমবাতি আরও অনেক কিছুই। ফলে ক্রমেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যময় এই নির্দশনটিও।

এই কুপি ও হারিকেনগুলো ছিল বাহারি ডিজাইনের। এর মধ্যে মাটি, লোহা, কাঁচের বোতল আবার পিতলের তৈরি কুপিও ছিল। নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী লোকজন কুপি ও হারিকেন কিনে সেগুলো ব্যবহার করতেন।

বাজারে সাধারণত ছোট বড় দুই ধরনের কুপি ও হারিকেন পাওয়া যেতো। কুপি হতে বেশি আলো পাওয়ার লক্ষ্যে ছোট কুপিগুলোর জন্য কাঠ, মাটি বা বাঁশের তৈরি গাছা (স্ট্যান্ড) ব্যবহার করা হতো। এই গাছগুলো ছিল বিভিন্ন ডিজাইনের। কিন্তু বর্তমানে গ্রাম বাংলার ডিজিটাল বিদ্যুতের ছোয়ায় কুপি ও হারিকেনের কদর হারিয়ে গেছে। রিকশাগুলোর নিচে রাতের আঁধারে হারিকেনের ব্যাপক ব্যবহার ছিল এখনও প্রায় ভ্যান ও রিকশাগুলোতে এই আলোর ঝিলিক চোখে পড়ে।

বিদ্যুৎ না থাকলেও অবশিষ্ট সময় মানুষ ব্যবহার করেছে বিভিন্ন ধরনের চার্জার লাইট ও মোমবাতি। গ্রাম বাংলার আপামোর লোকের কাছে কুপি ও হারিকেনের কদর হারিয়ে গেলেও এখনও অনেকে আকড়ে ধরে আছেন কুপি ও হারিকেনের স্মৃতি। একসময় কুপি বাতি  (টেমি) ও হারিকেন দেখতে যেতে হবে যাদুঘরে। প্রযুক্তির আধুনিকতা আর উন্নত জীবন-যাপন প্রনালীর কারণে দিন দিনই মানুষের মাঝে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যার ফলে এক সময়ের অন্ধকার দূর করার একমাত্র অবলম্ভন হারিকেন বিলুপ্তির পথে।

প্রবীণদের মতামত এক সময় কুপি বাতি (টেমি) ও হারিকেন দেখতে যেতে হবে জাদুঘরে। নতুন প্রজন্ম হয়তো জানবেও না হারিকেনের ইতিহাস। চায়না, জাপানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ খুব দ্রুতই চার্জ সংরক্ষনকারী আলোর প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছে। এক সময় হয়তো চিরতরে বিলুপ্ত হবে হারিকেন।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন