ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

প্রশস্ত-এলিভেটেড হচ্ছে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়ক

প্রকাশিত: ১৬:৫৮, ৭ ডিসেম্বর ২০২০

প্রশস্ত-এলিভেটেড হচ্ছে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়ক

মুন্সিগঞ্জের সঙ্গে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ সহজ এবং ব্যয় সাশ্রয়ী করতে পঞ্চবটি থেকে মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত বিদ্যমান সড়ক দুই লেনে প্রশস্ত এবং দুই লেন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। এ লক্ষ্যে একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার।

প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, সাত কিলোমিটার অ্যাটগ্রেড সড়ক দুই লেনে এবং ৩ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার অ্যাটগ্রেড সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হবে। প্রশস্ত চার লেন সড়কের দুই লেনের ওপর ৬ দশমিক ২৫ কিলোমিটারসহ মোট ৯ দশমিক ০৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (র‌্যাম্পসহ) নির্মাণ করা হবে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ মোট ১০ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে সর্বসাকুল্যে খরচ হবে দুই হাজার ২২৭ কোটি ৭৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। গড়ে প্রতি কিলোমিটারে খরচ পড়বে ২০৭ কোটি ২৩ লাখ ৪৮ হাজার ৩৭২ টাকা।

এর মধ্যে শুধু ৯ দশমিক ০৬ কিলোমিটার র‌্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে খরচ করা হবে ৯০৬ কোটি ৭৩ লাখ ২১ হাজার টাকা। গড়ে প্রতি কিলোমিটারে খরচ পড়ছে প্রায় ১০০ কোটি ৮ লাখ ৮ হাজার টাকা করে। অর্থাৎ গড়ে প্রতি কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে শত কোটির বেশি এবং তার নিচের রাস্তা নির্মাণে আরও শত কোটির বেশি টাকা খরচ প্রস্তাব করা হয়েছে।

আগামীকাল মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ প্রকল্পটি অনুমোদিত হওয়ার কথা রয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র বলছে, ‘পঞ্চবটি থেকে মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বা সেতু বিভাগের উদ্যোগে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এতে মোট খরচ প্রস্তাব করা হয়েছে দুই হাজার ২২৭ কোটি ৭৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। তার মধ্যে সরকার দেবে দুই হাজার পাঁচ কোটি ৭৬ লাখ ৮৮ হাজার এবং সেতু কর্তৃপক্ষ দেবে ২২২ কোটি ৫৭ হাজার টাকা।

২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সদর ও মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

সেতু কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে স্বতন্ত্র পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করে। সমীক্ষায় ৭ কিলোমিটার অ্যাটগ্রেড সড়ক দুই লেনে ও ৩ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার অ্যাটগ্রেড সড়ক চার লেনে এবং র‌্যাম্পসহ ৯ দশমিক ০৬ কিলোমিটার দুই লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সুপারিশ করা হয়।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলোর মধ্যে ৪৪ দশমিক ৫০ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনে ৮৩৬ কোটি ৩৮ লাখ, সাত লাখ এক হাজার ১৪০ দশমিক ২০ ঘন মিটার মাটির কাজে ৩৩ কোটি পাঁচ লাখ ৭১ হাজার, ১০ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার পেভমেন্ট ও আনুষঙ্গিক কাজে ১৮৮ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার, ১৪ দশমিক ৭৯ কিলোমিটার মধ্যবর্তী প্রতিবন্ধক নির্মাণে ১১ কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার, ৯ দশমিক ০৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ৯০৬ কোটি ৭৩ লাখ ২১ হাজার, ২৫ মিটার সেতু নির্মাণে পাঁচ কোটি, ২৪৮ ঘনমিটার বক্স কালভার্ট নির্মাণে ৯৩ কোটি ৪৫ লাখ, ২৫ দশমিক ৩১ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণে ৩৩ কোটি ৪৪ লাখ ১২ হাজার, ২০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৭৫ মিটার রোড মার্কিংয়ে দুই কোটি ২৪ লাখ ৯৬ হাজার, টোল প্লাজা, টোল মনিটরিং ভবনসহ ১৩ ওজন স্টেশন নির্মাণে ৩৮ কোটি ১৯ লাখ ৯৫ হাজার, ১৫১ মিটার সেতু প্রশস্তকরণে ২২ কোটি ৬৫ লাখ, ছয় হাজার ১৭৫ মিটার ট্রাক স্ট্যান্ড নির্মাণে ছয় কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার এবং ৯ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অস্থায়ী সড়ক নির্মাণে ১২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা খরচ করা হবে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ভ্রমণ সময় ৬২ দশমিক ৮৯ শতাংশ কমবে, যানবাহনের গতিসীমা ৪ দশমিক ৪৫ গুণ বৃদ্ধি পাবে এবং যানবাহনের বিলম্ব সময় ৭৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ কমবে বলেও সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে।

পটভূমি ও যৌক্তিকতা তুলে ধরে সেতু কর্তৃপক্ষ বলেছে, ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ সড়কে ধলেশ্বরী নদীর ওপর মুক্তারপুর (ষষ্ঠ বাংলাদেশ চীন মৈত্রী) সেতু ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। এ সেতু নির্মাণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মুন্সিগঞ্জের সঙ্গে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ অন্যান্য অংশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা। মুন্সিগঞ্জ-মুক্তারপুর সড়কটি উত্তরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কের পঞ্চবটি এবং দক্ষিণে মুক্তারপুর সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। পঞ্চবটি থেকে মুক্তারপুর পর্যন্ত সড়কটি খুবই সংকীর্ণ ও আঁকাবাঁকা।

অন্যদিকে মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুরে পাঁচটি সিমেন্ট কারখানা থাকায় এবং ওই এলাকায় আলু সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরেজ থাকায় প্রচুর ভারী যানবাহন চলাচলের ফলে প্রায় দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় এবং এর ফলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়কের প্রশস্ততা গড়ে ৬ মিটার এবং এ সড়কে বিদ্যমান অ্যানুয়াল এভারেজ ডেইলি ট্রাফিক (এএডিটি) ১৭ হাজার ৯১০টি।

ট্রাফিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ যানবাহনের সংখ্যা হবে ২০২৩ সালে দৈনিক ২৩ হাজার ৯২০টি, ২০২৮ সালে দৈনিক ৩০ হাজার ৫৬০টি, ২০৩৩ সালে দৈনিক ৩৯ হাজারটি এবং ২০৪৩ সালে দৈনিক ৬৩ হাজার ৫৮০টি।

এ পরিপ্রেক্ষিতে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়কটি প্রশস্তকরণের জন্য বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা ও বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন করা হয়। এ সড়কে বিদ্যমান যানবাহনের দৈনিক সংখ্যা বিবেচনায় অ্যাটগ্রেড সড়ক দু’লেনে এবং এই সড়কের ওপর দু’লেন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় সাত কিলোমিটার অ্যাটগ্রেড সড়ক দু’লেনে এবং ৩ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার অ্যাটগ্রেড সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হবে।

এছাড়া দু’লেন সড়কের ওপর ৬ দশমিক ২৫ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং ওঠা-নামার জন্য ছয়টি র‌্যাম্প থাকবে, যার দৈর্ঘ্য হবে ২ দশমিক ৮০৫ কিলোমিটার।

দক্ষিণাঞ্চলের যানবাহনগুলো এই সড়কের মাধ্যমে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচল করতে পারবে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কশিমনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মো. মামুন-আল-রশীদ জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মুন্সিগঞ্জের সঙ্গে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের অধিকতর উন্নত ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে এবং দক্ষিণাঞ্চলের যানবাহনগুলো ঢাকা শহরে প্রবেশ না করে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচল করতে পারবে।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন