জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে...? জন্মের সঙ্গে এই একটি অমোঘ সত্যকে নিয়ে আমরা পৃথিবীতে পদার্পণ করি, সে যে ধর্মের বা বর্ণেরই হোক না কেন। সাধারণত মুসলমানদের সমাধিক্ষেত্রকে আমরা কবরস্থান বা গোরস্থান বলে থাকি। চলুন জেনে নিই, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গোরস্থানের হাল-হাকিকত।
ইরাকের নাজাফ শহরে অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম গোরস্থান ‘ওয়াদি আস-সালাম’
বিশ্বের সবচেয়ে বড় গোরস্থানটির নাম ‘ভ্যালি অব পিস’। স্থানীয় নাম ‘ওয়াদি আস-সালাম’, যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘শান্তির উপত্যকা’। ইরাকের নাজাফ শহরে অবস্থিত এই গোরস্থানটির আয়তন দেড় হাজার একর (প্রায় ৬ বর্গ কিলোমিটার)! নাজাফ শহরের ১৫ শতাংশই জুড়ে আছে এই গোরস্থান। সঠিক সংখ্যা উদ্ধার করা কঠিন, তবে এখন পর্যন্ত আনুমানিক ১ কোটি মানুষকে এই গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে জানা যায়।
শুধু কি আয়তনে বড়, কেউ কেউ এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো গোরস্থানও বলে থাকেন। ১৪০০ বছরেরও আগে থেকে এই সমাধিক্ষেত্রের যাত্রা শুরু। এর আগে পৃথিবীতে নিশ্চয়ই অনেক গোরস্থান ছিল, কিন্তু এত বড় জায়গা নিয়ে, এত দিন ধরে, এত আগ থেকে কোনো গোরস্থানের অস্তিত্ব আছে কিনা, তা নিয়ে ইতিহাসবিদরা সন্দিহান।
মূলত শিয়া মুসলমানদের কবরস্থান হিসেবে এটির পরিচয় থাকলেও লাখ লাখ সুন্নি মুসলমানকে এখানে সমাধিস্থ করা হয়েছে, হচ্ছে। বেশিরভাগ ইতিহাসবিদদের মতে, এখানে শায়িত আছেন চতুর্থ খলিফা আলী ইবনে আবু ইবনে আবু তালিব (রা.)। এছাড়া ইতিহাসের অনেক রাজা, বাদশা, যুবরাজ এবং সুলতানদের কবর আছে এই গোরস্থানে। আলী (রা.)-কে যেহেতু শিয়া মুসলমানরা তাদের প্রথম ইমাম মনে করেন তাই পৃথিবীর যেখানেই বসবাস হোক না কেন, তাদের ইচ্ছে থাকে এখানে কবরস্থ হওয়ার। এই হিসেবে শুধু ইরাকি মুসলমানই নন, ইরান পাকিস্তান ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থেকে মৃতদেহ নিয়ে এসে এখানে কবরস্থ করা হয়।
ওয়াদি আস-সালামে প্রতিদিন গড়ে ২০০ মৃতদেহ সমাধিস্থ করা হয়। প্রতিবছর নতুন করে সমাহিত করা হয় প্রায় ৫ লক্ষ মানুষকে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় প্রায় সব গোরস্থানের মতোই এখানেও নির্দিষ্ট কয়েক বছর পর পুরাতন কবরেই নতুন মৃতদেহ শায়িত করা হয়।
এখানে কিছু কবর আছে দালানের মতো, যেগুলোকে বলা হয় টাওয়ার কবর। এরূপ কবরের ওপরে একটা ঘর থাকে, যেখানে মৃতের আত্মীয়রা এসে বিশ্রাম নিতে পারেন কিংবা প্রার্থনা করতে পারেন। ওই ঘরের নিচেই থাকে কবরটি। তবে এমন কবরের সংখ্যা খুব কম। স্থান সঙ্কটের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোকে এসব কবরের অনুমতি দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুর কথা