ঢাকা,  শনিবার  ২৭ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

দেশেই উৎপাদন বাড়ছে, চাষিরা আশা দেখাচ্ছেন

প্রকাশিত: ১৬:৩৬, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

দেশেই উৎপাদন বাড়ছে, চাষিরা আশা দেখাচ্ছেন

দেশে আর এক মাসের মধ্যেই মাঠে পেঁয়াজ চাষ শুরু করবেন চাষিরা। ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে মুড়িকাটা (আগাম) পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করবে। এ পেঁয়াজ অবশ্য সংরক্ষণ করা যায় না। মার্চে আসবে বীজ থেকে উৎপাদিত পেঁয়াজ। একটু ভালো দাম পেলে দেশের কৃষকেরাই উৎপাদন বাড়াতে পারেন।

যেমন, গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর উৎপাদন বেড়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) হিসাবে, দেশে গত মৌসুমে প্রায় সাড়ে ২৫ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার টন বেশি।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৮ লাখ টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের একটি অংশ সংরক্ষণকালে নষ্ট হয়। ফলে আট লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়, যার বেশির ভাগই আসে ভারত থেকে।

ভারত নিজেদের বাজার সামাল দিতে গত সোমবার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের বাজারে এক দিন পরই দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেশে উৎপাদন বাড়াতে গত বছরই পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক আরোপের কথা বলেছিল। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সামান্য (৫ শতাংশ) আমদানি শুল্ক আরোপও করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সুরক্ষা দিলে কৃষকেরাই দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন করতে পারেন। চাল ও গরুর মাংসে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে আমদানি বন্ধ হওয়ার পর।

এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথ ধরে এগোচ্ছি। এত দিন শুধু শীতকালীন পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। এখন গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের বেশ কয়েকটি জাত উদ্ভাবন করে চাষিদের দেওয়া হয়েছে। এতে পেঁয়াজের উৎপাদন দ্রুত বাড়ছে।’ তিনি বলেন, কয়েক বছরের মধ্যে দেশ পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বলে আশা করা যায়।

ডিএই বলছে, পেঁয়াজ আবাদে জমির পরিমাণও গত মৌসুমে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর বেড়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) উদ্ভাবিত বারি পেঁয়াজ-৬ গত বছর ভালো ফলন দিয়েছে। এ বছর এই জাতের পেঁয়াজের চাষ আরও বাড়বে বলে সংস্থাটির বিজ্ঞানীরা আশা করছেন।

খাদ্যনীতিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ইফপ্রি) ২০১৪ সালে বাংলাদেশে পেঁয়াজের উৎপাদন, বাজার ও অর্থনীতি নিয়ে একটি গবেষণা করে। এতে বলা হয়, ভালো দাম পেলে চাষিরা পরের বছর বেশি আবাদ করেন। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধির হার ৮ থেকে ১০ শতাংশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে, বাংলাদেশ চার বছর আগেই বিশ্বের পেঁয়াজ উৎপাদনকারী শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় প্রবেশ করে। চলতি বছর বাংলাদেশের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৮ম।

ডিএইর হিসাব অনুযায়ী, গত বছর দেশে প্রতি কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে ব্যয় ছিল ১৫ টাকা। আর চাষিরা সেই পেঁয়াজ ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করেন। বাজারে বেশির ভাগ সময় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তা ১০০ টাকা অতিক্রম করে যায়। এ বছর জেলাভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ পড়েছে ১৮ থেকে ২০ টাকা।

বারির বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, দেশে এখন পেঁয়াজের জনপ্রিয় জাত রয়েছে ১০টি। এর মধ্যে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের জাত আছে তিনটি। বাকিগুলো শীতকালীন জাত। দেশে পেঁয়াজের ৯০ শতাংশই আসে শীতকালীন পেঁয়াজ থেকে। তবে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের উৎপাদনও ধীরে ধীরে বাড়ছে। অবশ্য বাংলাদেশে এখনো পেঁয়াজের বৈশ্বিক গড় উৎপাদন হারের চেয়ে বেশ পেছনে আছে। বিশ্বে গড় উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ১৮ টন। বাংলাদেশে ফলছে গড়ে ১১ টন করে। তবে চার বছরে হেক্টরপ্রতি ফলন তিন টন বেড়েছে।

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন গত বছর বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে (বিআইডিএস) দিয়ে একটি গবেষণা করায়। সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো নাজনীন আহমেদ গতকাল বুধবার বলেন, ‘উৎপাদন বৃদ্ধিকে ধরে রাখতে হলে আমাদের পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য অবকাঠামো গড়ে তোলা দরকার। বীজ উন্নয়নের জন্য গবেষণা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।’

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন