ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

দেশে প্রথমবারের মতো কৃত্রিম প্রজননে বিলুপ্ত রানি মাছেরপোনা উৎপাদন

প্রকাশিত: ১৬:৩৫, ২৩ জুন ২০২১

দেশে প্রথমবারের মতো কৃত্রিম প্রজননে বিলুপ্ত রানি মাছেরপোনা উৎপাদন

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে রানি মাছের প্রজনন ও পোনা উৎপাদনে সফল হয়েছেন মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহ স্বাদুপানি কেন্দ্রে গবেষণা চালিয়ে সফল হন তারা।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, বিপন্নের তালিকায় দেশীয় প্রজাতির সব মাছকে পর্যায়ক্রমে পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে চলতি বছরে ইনস্টিটিউট থেকে ১০টি বিপন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন কৌশল উদ্ভাবনের গবেষণা চলমান রয়েছে। এর আওতায় ইতোমধ্যে চলতি প্রজনন মৌসুমে বাতাসি, পিয়ালী ও ঢেলাসহ সাত প্রজাতির মাছের প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছে। সর্বশেষ সংযোজন হচ্ছে রানি মাছ।

রানি মাছ কৃত্রিম প্রজননে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সেলিনা ইয়াছমিনের নেতৃত্বে গবেষক দলে ছিলেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রবিউল আওয়াল, পরিচালক এ এইচ এম কোহিনুর ও স্বাদুপানি কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শাহা আলী।

ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহের স্বাদুপানি কেন্দ্রে ২০২০ সালে রানি মাছের সংরক্ষণ, প্রজনন এবং পোনা উৎপাদন বিষয়ে গবেষণা কর্মসূচি নেয়া হয়।

প্রজননের জন্য এই মাছটি যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও কংস নদ এবং নেত্রকোনোর হাওর থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং গবেষণাকেন্দ্রের পুকুরে প্রতিপালন করা হয়।
একটি পরিপক্ব রানি স্ত্রী মাছের জননেন্দ্রীয় গোলাকার ও হালকা লালচে রঙের হয় কিন্তু পুরুষ মাছের জননেন্দ্রীয় পেটের সঙ্গে মেশানো, কিছুটা লম্বাটে ও ছোট হয়।

এ মাছের মুখ আকারে ছোট এবং চার জোড়া ক্ষুদ্রাকৃতির স্পর্শি থাকে। তবে এর দেহে ইংরেজি ওয়াই বর্ণমালার মতো চারটি কালো দাগ থাকে এবং দুটি দাগের মধ্যবর্তী অংশে একটি কালো দাগ অবস্থিত। আঁশ অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকৃতির, যা প্রায় সাধারণ দৃষ্টিতে বোঝা যায় না। রানি মাছ প্রায় ৬-৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তবে সর্বোচ্চ ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সেলিনা ইয়াছমিন বলেন, পুকুর থেকে পরিপক্ব মাছ নির্বাচন করে কৃত্রিম প্রজননের পাঁচ-ছয় ঘণ্টা আগে স্ত্রী ও পুরুষ মাছকে হ্যাচারিতে হরমোন ইনজেকশন দেয়া হয়। ইনজেকশন দেয়ার ১০-১২ ঘণ্টা পর স্ত্রী মাছ ডিম দেয়। ডিম দেয়ার ২২-২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিষিক্ত ডিম থেকে রেণু বের হয়ে আসে।

তিনি আরও বলেন, ডিম নিষিক্ত ও ফোটার হার যথাক্রমে ৭৫ ও ৫০ শতাংশ। রেণুর ডিম্বথলি দুই-তিন দিনের মধ্যে নিঃশেষিত হওয়ার পর প্রতিদিন তিন-চারবার সেদ্ধ ডিমের কুসুম খাবার হিসেবে হাঁপায় সরবরাহ করা হয়। হাঁপাতে রেণু পোনা ছয়-সাত দিন রাখার পর নার্সারি পুকুরে স্থানান্তরের উপযোগী হয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, স্বাদুপানির বিলুপ্তপ্রায় ছোট মাছের মধ্যে রানিমাছ অন্যতম। এ মাছটি খেতে খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হওয়ায় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, ভুটান ও মিয়ানমারে এ মাছ পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, রানি বা বউ নামে পরিচিত হলেও অঞ্চলভেদে এ মাছটিকে বেটি, পুতুল ও বেতাঙ্গী নামেও ডাকা হয়।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন