ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৮ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

নেতা নির্বাচনে ইসলামের দিক-নির্দেশনা

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ২৫ মে ২০২৩

নেতা নির্বাচনে ইসলামের দিক-নির্দেশনা

নেতা নির্বাচনে ইসলামের দিক-নির্দেশনা

আরবি ভাষার বিশিষ্ট অভিধান ‘লিসানুল আরবে’ বলা হয়েছে, ‘মানুষ যার অনুসরণ করে, তাকে ইমাম বলে’। ইমাম একটি আরবি শব্দ যার অর্থ হচ্ছে নেতা, এর বহুবচন হচ্ছে, ‘আইম্মাহ’-ইমামগণ।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা তার একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলামে মানুষের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনের প্রতিটি স্তরের দিক-নির্দেশনা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে দিয়েছেন।

যেমন- আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনুল কারিমে পরামর্শভিত্তিক যেকোনো ধরনের কাজ সুষ্ঠুভাবে আঞ্জাম দিতে বলেছেন। এক হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমরা যদি তিনজনও থাকো তবে একজনকে আমির বা নেতা নির্বাচন করে নাও’।

রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, ‘স্বেচ্ছায় নেতৃত্ব গ্রহণ করো না। তাহলে তোমার উপর আল্লাহর রহমত থাকবে না’।

আরেক হাদিসে বলেছেন, যে নেতার ওপর তার জনগণ অসন্তুষ্ট, তার ধ্বংস হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট’। (সুনানে দারেমি, হাদিস নম্বর : ২৫৩)

অন্য হাদিসে বলেন, নেতা হবার যোগ্য সেই, যে সবচেয়ে ভালো কোরআন জানে, তারপর হাদিস জানে এবং সর্বোপরি সে হয় চরিত্রবান। যার সমাজ গঠনে ভূমিকা বেশি, সে অগ্রগণ্য। যে প্রবীণ, সে অগ্রগণ্য।

বিশ্ব নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্বাচিত। তিনি ইসলামের সর্বপ্রথম রাষ্ট্রনায়ক। তার ওফাতের পর ইসলামের প্রথম চার খলিফা গ্রহণযোগ্যভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

যেমন- রাসূল (সা.) এর মৃত্যুর পর জনগণ হজরত আবু বকর (রা.)-কে নির্বাচিত করেন। আবু বকর (রা.) এর মৃত্যুকালে তিনি হজরত ওমর (রা.)-কে মনোনীত করেন এবং জনগণের কাছ থেকে এ সম্পর্কে মতামত নেন। জনগণ তার সঙ্গে একমত হলে তিনি ওমর (রা.)-কে খিলাফতের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন।

মৃত্যুকালে হজরত ওমর (রা.)-কে পরবর্তী খলিফা মনোনীত করতে বলা হয়, তিনি ছয়জনের একটি তালিকা দেন এবং যোগ্য লোককে জনসমর্থনভিত্তিতে নির্বাচিত করতে বলেন। তখন একটি নির্বাচন কমিশনের মতো কাজ করেন, আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রা.)। তিনি অধিকাংশ জনগণের মতামতের ভিত্তিতে হজরত ওসমান (রা.)-কে খলিফা নির্বাচিত করেন।

ওসমান (রা.) এর শাহাদতের পর জনগণের অনুরোধে হজরত আলী (রা.) খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

এখনকার দিনের মতো তখন পাঁচ বছর পরপর নির্বাচন হতো না। বরং একজন খলিফার মৃত্যুর পরই অন্যজন দায়িত্ব গ্রহণ করতেন। ইসলামের মূলনীতি হলো, আল্লাহ তাআলা তার রাসূল (সা.) যা করতে নিষেধ করেননি এবং শরিয়তের কোনো বিষয়ের সঙ্গে তা কোনো বিরোধও রাখে না, তা বৈধ ও জায়েজ।

সে দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামি বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, নেতা নির্বাচনের বর্তমান পদ্ধতি বৈধ ও গ্রহণযোগ্য। তবে তারা বিভিন্ন গবেষণা করে কিছু কিছু দিক পরিবর্তন করার কথা বলেছেন। যেমন-

> যারা স্বপ্রণোদিতভাবে নেতা হতে চায়, তাদের পরিত্যাগ করা।

> জনগণ সমর্থিত ও গ্রহণযোগ্যদের বাছাই করে নেওয়া।

> রাষ্ট্র, সমাজ ও অন্যান্য দায়িত্ব পালন ও পরিচালনা একটি আমানত। এসব পরিচালনার জন্য লালায়িত হওয়া যাবে না। বরং দায়িত্ব এসে পড়লে সুচারুভাবে পালন করা জরুরি।

> নির্বাচনে ব্যয়বাহুল্যতা না রাখা। জনগণের ভোট গ্রহণের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন সব ধরনের ব্যয়ভার বহন করা। কেউ নির্বাচিত হওয়ার জন্য অনর্থক ব্যয় না করা।

> শক্তিশালী বিচারব্যবস্থা থাকা। যাতে সরকারের যেকোনো অন্যায় পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ করা যায় এবং সরকারি যেকোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা যায়।

> নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ও সৎ হওয়া।

> প্রার্থী অবশ্যই ধর্মীয় ও জাগতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া।

> সর্বোপরি জনগণ সৎ এবং যোগ্য লোককে নির্বাচন করা এবং সততা, ধর্মপরায়ণতা ও নিষ্ঠার মাপকাঠিতে জনগণও উত্তীর্ণ হওয়া।