ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ০২ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

দাবদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন, তুঙ্গে শরবতের ব্যবসা

প্রকাশিত: ১৫:৫৯, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

দাবদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন, তুঙ্গে শরবতের ব্যবসা

ফাইল ছবি

ফেনীতে তীব্র গরমে নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের। বেলা বাড়ার সঙ্গে ঘরের বাইরে বের হলেই তাপের তপ্ততায় ঘেমে যাচ্ছে শরীর। শুকিয়ে যাচ্ছে গলা। এ অবস্থায় চরম পিপাসায় কাতর হয়ে পথচারীরা কিছুটা স্বস্তি খুঁজছেন বরফগলা শরবতে।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) শহরের ট্রাংক রোড, রাজনন্দিনীর দিঘীর পাড়, মহিপাল, কলেজ রোড, শহীদ শহিদুল্লাহ কায়সার সড়ক ও সদর হাসপাতাল মোড় এলাকার ফুটপাত, গলি কিংবা শপিংমলের পাশে চোখে পড়ে শরবত বিক্রির ভ্রাম্যমাণ দোকানের। এসব মৌসুমী দোকানের অধিকাংশই শীত এলে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু গরমে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভিড় লেগেই থাকে। শহরের ফুটপাতে হাঁটলে কিছুক্ষণ পরপর ভ্যানে মিলছে লেবু, তোকমা, ইসবগুল কিংবা বেলের শরবত। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজন তাদের তৃষ্ণা মেটায় এসব ভ্রাম্যমাণ দোকানে।

রাশেদুল হাসান নামের এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক বলেন, গরমে গাড়ি চালিয়ে এসে এখানে একটু বিশ্রাম নিয়ে শরবত খাই। শরবত খাওয়ার পর শরীর অনেকটা ঠান্ডা লাগে। ভালো লাগে এজন্য এখানে আসি।

শহরের সদর হাসপাতাল মোড়ে কথা হয় রিকশাচালক মমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, পেটের দায়ে তীব্র গরমেও ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে। গরমে সারাদিন রিকশা চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে শরবত খেয়ে তৃষ্ণা মেটাচ্ছি। আমাদের মতো স্বল্প আয়ের খেটে-খাওয়া মানুষদের জন্য ১০-২০ টাকা দামের এইসব শরবত অনেক স্বস্তি দিচ্ছে।

এনামুল হক নামের এক পথচারী বলেন, তীব্র গরমে ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। তারপরও কাজের সুবাদে বের হতে হচ্ছে। একটু রিফ্রেশমেন্টের জন্য ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে শরবত খাচ্ছি।

ফেনী সরকারি কলেজ ফটকে ভ্রাম্যমাণ ভ্যান গাড়ি থেকে শরবত খাচ্ছিলেন স্নাতক পড়ুয়া শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান। তিনি বলেন, সবকিছুই যে একদম স্বাস্থ্যসম্মত এমন না। আমরাতো কোনোকিছুই বিশুদ্ধ খাচ্ছি না। যেটা খাই সেটাতেই ভেজাল থাকে। কলেজে চার ঘণ্টার পরীক্ষা শেষ করে গরমের তীব্রতার জন্য খেতে হচ্ছে, কি আর করা! তবুও কিছুটা প্রশান্তি পাচ্ছি।

শহরের রাজনন্দিনী দিঘীর পাড়ে শরবত বিক্রি করছিলেন সালেহ আহম্মদ। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন লেবু আর তোকমার দুই ধরনের শরবত বিক্রি করছি। তবে গত কয়েক দিন বিক্রি ভালোই হচ্ছে। দৈনিক ১৫০ থেকে ২০০ গ্লাস বিক্রি করছি।

জামসেদ আলম নামে এক আখের রস বিক্রেতা বলেন, একশ গ্লাস রস বিক্রি করলে ৭০০-৯০০ টাকা থাকছে। ওই টাকা দিয়েই সংসার চালিয়ে জীবনযাপন করছি। বছরের অল্প কয়েক মাসেই এমন চাহিদা থাকে। বাকি সময় খুব কষ্টে দিন পার করতে হবে। তবে গত কয়েক দিন অনেক ভালো বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা বাড়ায় পাইকাররা আখের দামও কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছে।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের সামনে একটি পাত্রে বরফ পানির সঙ্গে ইসবগুল, লেবু ও তোকমা মিশিয়ে শরবত বিক্রি করছেন তৈয়ব আলী। তিনি বলেন, আগে দিনে ৮০ থেকে ১০০ গ্লাস শরবত বিক্রি হলেও গরম বেড়ে যাওয়ায় এখন ১৮০ থেকে ২০০ গ্লাস পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। প্রতি গ্লাস শরবত ১০ টাকা করে বিক্রি করছি। বরফ ও সব উপকরণের খরচ বাদ দিয়ে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকার মতো পাচ্ছি।

শহরের ট্রাংক রোড শহীদ মিনার সংলগ্ন সোহেল নামে এক শরবত বিক্রেতা বলেন, আমি সারা বছরই শরবত বিক্রি করি। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় গরমে বেশি বিক্রি হয়। সকালে বরফকল থেকে খাওয়ার উপযোগী বরফ এনে সেগুলো ছোট ছোট টুকরো করে চিনি, লেবু, ইসবগুল, তোকমা ও শরবতের গুঁড়ো মিশিয়ে বড় কাঁচের পাত্রে ঠান্ডা করে রাখি। সারাদিন ঠান্ডা রাখার জন্য পাত্রে বড় বরফের টুকরো দিতে হয়। অতিরিক্ত গরমে বিক্রিও সন্তোষজনক।

আহমেদ করিম নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, শহরে প্রায় শতাধিক ভ্রাম্যমাণ শরবত বিক্রেতা আছে। একেকজন দিনে গড়ে এক থেকে দেড় শতাধিক গ্লাস শরবত বিক্রি করছে। গরমে সবার ব্যবসা ভালো চলছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে গত এক সপ্তাহ ধরে ফেনীতে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ফেনী আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চমান পর্যবেক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, বুধবার (২৪ এপ্রিল) ফেনীতে সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩৭ শতাংশ। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা কম। বাতাস থাকলেও তাপমাত্রা প্রায় একইরকম থাকতে পারে বলে জানান তিনি।