ঢাকা,  শনিবার  ২৭ জুলাই ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

সিপিসি ও বিজেপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বৈঠক

চীন সফরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফারুক খান, ভারতে দেবেন ওবায়দুল কাদের

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ২২ মে ২০২৩

চীন সফরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফারুক খান, ভারতে দেবেন ওবায়দুল কাদের

ফাইল ছবি

কাছাকাছি সময়ে ভারত ও চীনের ক্ষমতাসীন দলের আমন্ত্রণ পেয়েছে আওয়ামী লীগ। এতে সাড়া দিয়ে দুই দেশেই প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে দলটি। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের একটি প্রতিনিধি দল চীনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আরেকটি দলের শিগগিরই ভারত যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে তাদের ভারত সফরের সময়সূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) আমন্ত্রণে গতকাল দিবাগত রাত ১২টার দিকে বেইজিং রওনা দেয় আওয়ামী লীগের ১৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সফরকালে দলের সদস্যরা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনকে আরো সক্রিয় ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানাবেন। 

প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান এমপি। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘‌চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে আমরা চীন সফরে যাচ্ছি। আমরা প্রথমে যাব বেইজিং। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক শাখার সঙ্গে আমাদের বৈঠক আছে। বৈঠকে আমরা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করব। আমরা রোহিঙ্গা ইস্যু, উন্নয়ন ইস্যু এবং “‍পার্টি টু পার্টি” পর্যায়ে যোগাযোগ ও সফর নিয়ে আলোচনা করব।’

তিনি বলেন, ‘‌‌রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা তাদের বলব মিয়ানমারের ওপর তারা যাতে আরো চাপ সৃষ্টি করে এবং রোহিঙ্গারা যেন তাদের নিজ দেশে ফেরত যেতে পারে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। এরই মধ্যে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমারে গেছে। তারা দেখে এসেছে তারা ফিরে গিয়ে কোথায় থাকবে, কীভাবে থাকবে, কী ব্যবস্থা করা হয়েছে সেগুলো। এই মে মাসের মধ্যে মিয়ানমার থেকে একটা টিম আসবে। তারা এসে প্রথম ব্যাচে যারা ফিরবে, তাদের যাচাই-বাছাই করে ঠিক করবে। আমরা আশা করি আগামী মাস থেকে প্রত্যাবাসন শুরু হবে।’

ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, সাধারণত রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং আন্তঃসম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যেই ‘‌পার্টি টু পার্টি’ বৈঠক হয়ে থাকে। আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের চীন সফরটিও এ ধরনেরই কর্মসূচি। সেখানে উভয় দলের নেতারা নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন। ভারত ও চীন ছাড়াও আরো কয়েকটি দেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের সফরের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সেটা দেশে না বিদেশে হবে সেই সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।

লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান এমপি ছাড়াও দলের অন্য প্রতিনিধিরা হলেন আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাপা, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, কেন্দ্রের কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট সফুরা বেগম রুমি, গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা, পারভীন জামান কল্পনা, আনোয়ার হোসেন, শাহাবুদ্দিন ফরাজী, আজিজুস সামাদ আজাদ ডন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য তরুণ কান্তি দাস ও এ কে ফাইজুল হক রাজু।

আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দলকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে দেশটির ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে চিঠি দিয়ে বিজেপির পক্ষ থেকে ‘পার্টি টু পার্টি’ এ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়। বিজেপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিভাগের প্রধান বিজয় মুরলিধর চৌথাইওয়াল স্বাক্ষরিত ওই চিঠি এরই মধ্যে ওবায়দুল কাদেরের হাতে পৌঁছেছে বলে আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে। 

জানা গেছে, এ নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকরা এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠকের আয়োজন করেননি। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে ভারত সফরের জন্য প্রতিনিধি দল চূড়ান্ত করা হতে পারে। সব মিলিয়ে এ সফর শুরু হতে পারে আগামী মাসের শুরুর দিকে। 

বিজেপির আমন্ত্রণ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘‌বিজেপি আওয়ামী লীগকে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে আমাদের একটি প্রতিনিধি দলের ভারত সফরের কথা শুনেছি। তবে সফরের সময়সূচি চূড়ান্ত হয়নি।’ 

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘বিজেপি আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তবে কবে নাগাদ আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল ভারত সফর করবে সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। চীনে আমাদের প্রতিনিধি দল যাচ্ছে। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘‌ভূরাজনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগ দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায়। আওয়ামী লীগকে গুরুত্ব দিচ্ছে বলেই তারা এ দলটিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। একটি রাজনৈতিক দল অন্য একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। এখানে মূলত অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং উভয় দলের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হয়।’

বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির সবচেয়ে বড় প্রভাবক হয়ে উঠছে চীন ও ভারতের মধ্যকার প্রতিযোগিতা। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে এ অঞ্চলের ওপর প্রভাব বিস্তার নিয়ে দুই দেশের মধ্যে এ প্রতিযোগিতা দিন দিন আরো বেড়ে চলেছে। তবে অল্প সময়ের ব্যবধানে দুই দেশের ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি একেবারেই স্বাভাবিক। এখানে ভূরাজনীতির ভূমিকা একেবারেই গৌণ। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। যারা আমন্ত্রণ জানাচ্ছে তারাও বড় রাজনৈতিক শক্তি। স্বাভাবিকভাবেই বড় দলগুলোর সঙ্গে সবাই যোগাযোগ রাখতে চায়। এটা সব দেশেই হয়। রাজনীতিতে এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এখন আমাদের যে অর্থনৈতিক অবস্থা; তাতে ভারত, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র সবাই আমাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। তারা বিভিন্ন সময়ে দাওয়াত করবেন, বিভিন্ন পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন সেটা আমি মনে করি স্বাভাবিক।’