ঢাকা,  শনিবার  ২০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

চাঁদাবাজি কিংবা হাত পেতে নয়, কৃষিকাজে তাক লাগালেন তারা

প্রকাশিত: ২০:১২, ২৮ মার্চ ২০২৩

চাঁদাবাজি কিংবা হাত পেতে নয়, কৃষিকাজে তাক লাগালেন তারা

সংগৃহীত ছবি

চাঁদাবাজি কিংবা মানুষের কাছ থেকে টাকা তোলার পরিবর্তে কৃষিকাজ করছে গাজীপুরের তৃতীয় লিঙ্গের একদল মানুষ (হিজড়া)। তারা তাদের ক্ষেতে ফলাচ্ছেন ধানসহ নানা সবজি। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সমাজে তাদের অপবাদ ঘোঁচাতে চান তারা।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী থানাধীন বাইমাইল এলাকার একদল হিজড়া পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন কৃষিকাজ। তারা এখন অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষসহ অন্য ফসল আবাদ করে সবার নজর কাড়ছেন।

চলতি বছর তারা মহানগরীর বাইমাইল এলাকায় ১৩ বিঘা জমি বর্গা নিয়েছেন। এসব জমিতে ধান, পেঁয়াজ, রসুন, মিষ্টি কুমড়া, টমেটোসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্যের আবাদ শুরু করেছেন। তারা নিজেরা ফসলের পরিচর্যার পাশাপাশি দিনমজুর দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। এছাড়াও তাদের বাড়িতে রয়েছে গরুর খামার।

অন্যের কাছে হাত পেতে নয়, সুযোগ পেলে তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান। সমাজের বিত্তবানদের কাছে তাদের দাবি কর্ম করে খেতে সার্বিক সহযোগিতা যেন তারা পান।

এলাকাবাসী জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কোনাবাড়ী থানাধীন বাইমাইল বাঁশতলা এলাকায় ৩২ জনের একদল হিজড়া বসবাস করেন। তারা বিভিন্ন দোকানপাট ও বাড়ি থেকে টাকাসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তুলে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এতে মানুষ বিরক্ত হতো। এক সময় তাদেরও বিবেকে বাধে। তাই তারা পেশা হিসেবে কৃষিকে বেছে নেন। জমি বর্গা নিয়ে সেখানে ফসলের আবাদ করছেন তারা।

হিজড়াদের দাবি, সাধারণ মানুষের মতো তাদের হাত-পা আছে, তারা সুস্থ ও পরিশ্রম করতে পারেন। তাই তারা সাধারণ মানুষের মতো কর্ম করে খেতে চান। এজন্য সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা তাদের প্রয়োজন। সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিরা এগিয়ে এলে তারা স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম করে জীবনযাপন করতে পারবেন।

হিজড়ারা জানান, ফয়সাল আহম্মেদ ও রমিজ উদ্দিন নামের দুই ব্যক্তি তাদের পরিত্যক্ত ১৩ বিঘা জমি বর্গা দিয়েছেন চাষবাস করতে। এজন্য তাদের কোনো টাকা পয়সা দিতে হয়নি। ওই জমিগুলো ছিল জঙ্গলে ভরা, চাষের অনুপযোগী। পরে দিনমজুর ও তারা নিজেরাই পরিশ্রম করে জমিগুলো চাষের উপযোগী করেন। সেখানে ১১ বিঘা জমিতে ধানচাষ এবং দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ, রসুন, টমেটো ও মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করেছেন। এতে তাদের প্রথম বছর অনেক টাকা খরচ হয়েছে।

বিভিন্ন এলাকায় আরও অনেক জমি পরিত্যক্ত রয়েছে। ওইসব জমির মালিকরা যদি তাদের দিকে তাকান তাহলে আগামীতে আরও ব্যাপক আকারে ধানসহ কৃষি আবাদ করতে পারবেন বলে আশা এসব মানুষের।

তৃতীয় লিঙ্গের শিল্পী বলেন, দেশের মানুষ দেখুক, আমাদের সহযোগিতা করলে আমরাও কিছু করতে পারি। সমাজের মানুষ সুযোগ দিলে আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি। সময় মতো ধান কাটতে পারলে নিজেদের চাহিদা পূরণ করেও বাজারে বিক্রি করতে পারবো।

তিনি বলেন, মানুষের কাছে চেয়ে যা পাই এতে আমাদের চাহিদা পূরণ হয় না। ফলে নানান চিন্তা ভাবনা করে উদ্যোগ নিই কৃষি আবাদ করার। পরে এ বছর বর্গা নিয়ে ১৩ বিঘা জমিতে ধান, পেঁয়াজ, রসুন, টমেটো ও মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসল লাগিয়েছি।

গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, সমাজের অবহেলিত হিজড়া সম্প্রদায় কৃষিকে পেশা হিসেবে নিয়েছে, যা একটি ভালো উদ্যোগ। আমরা কৃষকদের সরকারিভাবে বিভিন্ন সহযোগিতা দিয়ে থাকি। তবে এর জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন হয়। হিজড়ারা যোগাযোগ করলে আমরা সবার মতো তাদেরও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করবো। সমাজে তারা যেন স্বাভাবিক মানুষের মতো চলতে পারে এবং নিজেরা স্বাবলম্বী হতে পারে সেজন্য তাদেরকে কৃষি সংশ্লিষ্ট সব রকম সহযোগিতা করা হবে।