ঢাকা,  মঙ্গলবার  ৩০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

রক্ত পরিসঞ্চালনে যেসব ভুল করা যাবে না

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ২০ অক্টোবর ২০২৩

রক্ত পরিসঞ্চালনে যেসব ভুল করা যাবে না

ছবি- সংগৃহীত

মাদারীপুর থেকে দুই ব্যাগ রক্ত বরফের সরাসরি সংস্পর্শে রেখে ঢাকায় আনা হলো। রক্ত ঠাণ্ডা আছে। কোনো লেবেল নেই, রিপোর্ট নেই। আগের দিন রাতে ডোনারের থেকে রক্ত টেনে বাসার ফ্রিজে রাখা ছিল।

কেন এই রক্ত পরিসঞ্চালন করা যাবে না?
১)  +২ °C এর নিচে রক্ত রাখলে কোষগুলো ভেঙে যায়। বরফ মানে মাইনাস ডিগ্রি। রক্তের লোহিত কণিকা জীবিত কোষ। রক্ত ঠাণ্ডা মানেই এই নয় যে রক্ত ভালো আছে।
২) ব্লাড ব্যাংক ফ্রিজে +২° থেকে +৬° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় রক্ত (হোল ব্লাড আর লোহিত কণিকা) সংরক্ষণ করা হয়। বাসাবাড়ির ফ্রিজে জীবিত কোষসমুহ নষ্ট হতে থাকে। এই রক্ত পরিসঞ্চালন করলে রোগীর দেহে বিরূপ প্রতিক্রিয়া/উপসর্গ দেখা যায়। প্রচণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ এই পরিসঞ্চালন।
৩) লেবেল, কোন সময়ে টানা হলো, কতক্ষণ রক্ত পথে? এইসব না জেনে রক্ত পরিসঞ্চালন ঝুঁকিপূর্ণ।
৪) রিপোর্ট ছাড়া রক্ত এনেছেন- কিসের রক্ত? কোথা থেকে এনেছেন? সঠিকভাবে রক্তের ক্রসম্যাচ, স্ক্রিনিং করা হয়েছে? কীভাবে বুঝব?

ডোনার নিয়ে আসুন। যেখানে ব্লাড ব্যাংক ফ্রিজ এবং ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আছেন সেখানে রক্তের কাজ করুন। যত্রতত্র রক্ত দিয়ে আপনার মূল্যবান এই দানকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না এবং রোগীদের ক্ষতি করবেন না।

১) ডোনার সিলেকশন ফর্ম পূরণ করার পর ডাক্তার আপনার শারীরিক বিষয়সমুহ দেখে আপনাকে ডোনার হিসেবে নেবেন।
২) আপনার রক্তে পাঁচটি রোগের জীবাণু আছে কী না সেটা পরীক্ষা করা হবে। সেগুলো হলো- হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস, এইডস ভাইরাস, ম্যালেরিয়া, সিফিলিস
৩) ডোনারের রক্ত আর রোগীর রক্তের মানানসই করণ পরীক্ষা ক্রসম্যাচ করা হবে।

এসব কিছু ঠিক থাকলে সেই রক্ত পরিসঞ্চালন করা যাবে। ফ্রিজ থেকে রক্ত বের করার আধঘন্টার মধ্যে পরিসঞ্চালন শুরু করুন। সর্বোচ্চ ৪ ঘন্টার মধ্যে শেষ করুন।

রক্ত গরম করার প্রয়োজন নেই। রক্ত পরিসঞ্চালন করার পূর্বে এভিল, ওরাডেক্সন ইঞ্জেকশন দেবেন না। এতে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়ার উপসর্গ দেরিতে বোঝা যায়। ততক্ষণে অনেকখানি রক্ত পরিসঞ্চালন হয়ে যায় রোগীর দেহে। ফলশ্রুতিতে রোগিকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যায়।

শিশুটির ওজন ১০ কেজি। ১০০ মিলি রক্ত পরিসঞ্চালন করতে হবে হিসেব মতো। ব্যাগ থেকে রক্ত পরিসঞ্চালন করে বাকিটা ব্লাড ব্যাংকে সংরক্ষণের জন্য পাঠাবেন না।

একবার রক্তের ব্যাগ খোলা হলে ওটা আর পরে পরিসঞ্চালন করার নিয়ম নেই। কারণ ঐ রক্তে জীবাণু বংশবিস্তার শুরু করেছে। এইসব ক্ষেত্রে বাচ্চাদের ব্যাগে নির্দিষ্ট পরিমাণ রক্ত রাখুন। বাচ্চাটিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না।

 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা।