ঢাকা,  শনিবার  ০৪ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

মেহেরপুরে ৩২ কোটি টাকার লিচু বিক্রির সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ২২:৩৭, ১৯ মে ২০২৩

মেহেরপুরে ৩২ কোটি টাকার লিচু বিক্রির সম্ভাবনা

ফাইল ছবি

মেহেরপুরে বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল ও গোলাপি রংয়ের লিচু। তীব্র তাপদাহের পরও চলতি মৌসুমে লিচুর বাম্পার ফলন হওয়ায় লাভের আশা করছেন কৃষকরা। জেলায় চলতি মৌসুমে ৩২ কোটি টাকার লিচু উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। এদিকে সুস্বাদু ও রসালো এসব লিচু দেশের বাজার পেরিয়ে বিদেশে রপ্তানির দাবি চাষিদের।

মেহেরপুর জেলায় রয়েছে অসংখ্য লিচু বাগান। জেলায় এবার ৬৯০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। তীব্র তাপদাহের মধ্যেও চলতি মৌসুমে প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যা জেলার মানুষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে মেহেরপুরের লিচু। বর্তমানে বাগানে বাগানে এবং হাটে বাজারে চলছে লিচু ভাঙা ও বেচাকেনার মহোৎসব। তবে, অতিমাত্রায় তাপপ্রবাহের কারণে অনেক গাছের লিচু শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে লিচু গাছে নিয়মিত সেচ দিচ্ছেন এবং পানি স্প্রে করছেন চাষিরা।

এ বছর জেলায় দেশী ও আটি মোজাফ্ফর, বোম্বাই, আতা বোম্বাই ও চায়না-৩ জাতের লিচুর চাষ হয়েছে। বাজারে উঠতে শুরু করেছে  মোজাফ্ফর ও বোম্বাই জাতের লিচু। চায়না-৩ জাতের লিচু বাজারে আসতে আরও দুই এক সপ্তাহ সময় লাগবে।

মেহেররপুর সদর উপজেলার ঝাওবাড়িয়া গ্রামের লিচু চাষি আব্দুর রহিম জানান, নিজের ৫ বিঘা জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে তার। পরিবারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি খুচরা বাজারে বিক্রিও করছেন। এক পন (৮০টি) লিচু বিক্রি করছেন ১৬০ টাকা থেকে ১৮০ টাকায়। অর্থাৎ ১ হাজার লিচু বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়।

মেহেরপুর পৌর কলেজ পাড়ার আরেক চাষি মো. উজ্জল হোসেন জানান, তিন বিঘা জমিতে লিচুর বাগান করেছেন। এক সপ্তাহ ধরে তিনি লিচু বিক্রি শুরু করেছেন। লিচু শেষ হলে তিনি লাভ লোকসান ভুঝবেন। তবে এ বছর খরচ বাদ দিয়ে দুই লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।

সদর উপজেলার ঝাওবাড়িয়া গ্রামের লিচু বাগান মালিক আব্দুল হান্নান জানান, তার তিন বিঘা জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। সেসব বাগানের লিচু পাকা শুরুর আগেই পাইকারি বিক্রি করেছেন। এ বছর আড়াই লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের মেহেরপুরের আম বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। আমের পাশাপাশি যদি লিচু বিদেশে রপ্তানি করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয় তাহলে চাষিরা আরও লাভবান হবে।

লিচু সংগ্রহে নিয়োজিত শ্রমিক আব্দুল আজিজ, চাঁদমিয়া ও গোলাম রব্বানি জানান, প্রায় এক মাস ধরে তারা লিচুর বাগান পরিচর্যা করছেন। এখন লিচু সংগ্রহের কাজে পুরো সময় দিতে হচ্ছে তাদের। এই কাজ করে দিনে ৬০০ টাকা করে মজুরি পান তারা। আষাঢ় মাসের শেষ পর্যন্ত চলবে তাদের এই কাজ। শুধু তারাই নয়, জেলার বিভিন্ন লিচু বাগানে কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করছেন।

বরিশাল জেলা থেকে মেহেরপুরে লিচুর পাইকারি ক্রেতা মানিক মল্লিক বলেন, প্রায় প্রতি বছরই মেহেরপুরের লিচুর পাইকারি ব্যবসা করি। মেহেরপুরের লিচু দেশের বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করি। যখনই ক্রেতারা জানতে পারে আড়তে মেহেরপুরের লিচু এসেছে তখনই দেখা যায় ক্রেতাদের ভিড়। অনেকেই আমাকে অগ্রীম টাকা দিয়ে থাকেন মেহেরপুরের লিচু কেনার জন্য। ব্যবসার শুরু থেকে মেহেরপুরের লিচু আমাকে লাভের মুখ দেখিয়েছে।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শংকর কুমার মজুমদার জানান, মেহেরপুরে ৮০ ভাগ বাগানে আটি লিচু চাষ হয়। এ লিচুর বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে- আটি মোজাফ্ফর জাতের লিচু আগাম পাকে। সংখ্যায় বেশি ধরে। পোকার আক্রমণ কম হয়। ফলের ৭০ ভাগই রসালো। এছাড়া চায়না-৩ জাতের লিচু অনেক মোটা হয়। বর্তমান বাজারেও এর দাম বেশি। তবে এ লিচু পাকতে একটু সময় বেশি লাগে।

তিনি আরও জানান, জেলায় এ বছর ৬৯০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৪০০ মেট্রিকটন লিচু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৩০ থেকে ৩২ কোটি টাকা। লিচুর মুকুল হওয়ার সময় থেকে এ পর্যন্ত চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছি। বৈরী আবহাওয়াতেও মেহেরপুর জেলায় লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও ভাল পাচ্ছে বাগান মালিকরা। তবে মেহেরপুরের আমের যেমন খ্যাতি ছড়িয়েছে দেশ-বিদেশে তেমনিভাবে লিচুর খ্যাতি রয়েছে। আগামীতে আম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগযোগ করে লিচু রপ্তানির ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।