ঢাকা,  শুক্রবার  ০৩ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

খালি হাতে দেশে ফিরে ড্রাগন চাষ করে স্বাবলম্বী বাবুল

প্রকাশিত: ১১:০৪, ১৮ মে ২০২৩

খালি হাতে দেশে ফিরে ড্রাগন চাষ করে স্বাবলম্বী বাবুল

সংগৃহিত ছবি

পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার বাবুল হাওলাদার (৫৫)। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে প্রায় খালি হাতেই সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে আসেন নানা জটিলতায়। দেশে ফিরে নানা কাজের চেষ্টা করেও সফল হতে পারছিলেন না তিনি। করোনাকালীন ২০২০ সালে ইউটিউব দেখে টগরা গ্রামে ১ একর জমিতে ড্রাগন বাগান তৈরি করেন। ড্রাগন ফল চাষ করে আজ স্বাবলম্বী বাবুল।

তার বাগানে রয়েছে ৫ হাজারের বেশি ড্রাগন ফলের গাছ। এ বছর খরচ বাদে ৬/৭ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি। ড্রাগন ফলের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগ ও আর্থাইটিস রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। 

জানা যায়, সৌদি আরবে শ্রমিক হিসেবে ১৯ বছর কাজ শেষে বিভিন্ন জটিলতার কারণে ২০১৭ সালে প্রায় খালি হাতেই দেশে ফিরতে হয় বাবুলকে। ইউটিউব দেখে উৎসাহিত হয়ে ড্রাগনের চাষ করে মিলেছে সফলতা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রয়কৃত ১ হাজার ৫০০ চারা নিয়ে ড্রাগনের বাগান করতে তার খরচ হয়েছিল ১৮-২০ লাখ টাকা। এ বছর ভালো ফলন হলে খরচের টাকার পরেও লাভ হবে বলে আশা করছেন তিনি। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। তিনি এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে খেজুর, চুইঝাল, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এছাড়া ড্রাগনের চারা উৎপাদন করে তিনি বিক্রি করেন।

এ ফলের আকার বড়, পাকলে খোসার রং লাল হয়ে যায়, শাঁস গাঢ় গোলাপী রঙের, লাল ও সাদা এবং রসালো প্রকৃতির হয়ে থাকে। ফলের বীজগুলো ছোট ছোট কালো ও নরম। সমতল ভূমিতে বর্গাকার বা ষঢ়ভূজাকার এবং পাহাড়ি ভূমিতে কন্টুর পদ্ধতিতে ড্রাগন ফলের কাটিং রোপণ করতে হয়। ড্রাগন ফল রোপণের জন্য উপযোগী সময় হলো মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য অক্টোবর।

ড্রাগন চাষি বাবুল হাওলাদার বলেন, গত বছর ও এ বছর ড্রাগন চাষ করেছি। সঠিকভাবে বিক্রি হলে আশা করছি খেতের খরচ উঠে যাবে। খুলনা, ঝিনাইদহ ও ঢাকার গাজীপুরসহ বিভিন্নস্থান থেকে দেড় হাজার চারা সংগ্রহ করে চাষ শুরু করেছিলাম। এখন আমার ড্রাগন খেতে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার গাছ আছে। আমি বাণিজ্যিকভাবে বাউ ড্রাগন ফল ১, ২ ও ৩ চাষ করছি। মে থেকে ডিসেম্বর এই সময়টার মধ্যে ড্রাগন ফল খাবার উপযোগী হয়ে থাকে। ফুল ফোটার ৩৫ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফলটি খাওয়ার উপযোগী হয়।

তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি সিডেসি লেবু, খেজুর, চুঁই ঝালসহ বিভিন্ন কিছু চাষ করি। এগুলো বিক্রি করতে গেলে এর উৎপাদন খরচ কম পাওয়া যায়। পাইকাররা লেবু ৮ টাকা হালিতে ক্রয় করে ২০ টাকা হালিতে বিক্রি করে। ড্রাগন ফল পাইকারিতে এর তুলনায় ভালো দামে বিক্রি হয়। কিছু আবার খুচরাও বিক্রি করতে হয়। ২০১৭ সালে দেশে ফেরার পর বিভিন্ন কাজ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু ড্রাগন ফলে চাষ করে সফলতা পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ আমি এখন স্বাবলম্বী।

পরবর্তী সময়ে ২০১৯ সালে আকামা সমস্যায় দেশে ফেরেন তার ছেলে মিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমিও সৌদিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতাম। দেশে ফিরে ইন্টারনেট থেকে ও বাবার করা এই ড্রাগন চাষ দেখে এ বিষয়ে উৎসাহী হয়েছি। তারপর থেকেই বাবার সঙ্গে এখানে চাষাবাদ করি। সৌদি থাকাকালীন দেশে খেজুর চাষ করা নিয়ে চিন্তা করেছিলাম কিন্তু দেশে ফিরে ড্রাগন চাষ নিয়ে কাজ শুরু করি। এটি অনেক লাভজনক এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর। ড্রাগন চাষ করে আমরা আজ স্বাবলম্বী। যদি এটা কেউ চাষ করতে চায়, সে যেন আমার বাগানে গিয়ে ঘুরে আসে।

ড্রাগন ফল খাওয়ার গুরুত্ব নিয়ে কথা হয় পিরোজপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. হাসনাত ইউসুফ এর সঙ্গে। তিনি বলেন, ড্রাগন ফলের বৈজ্ঞানিক নাম হাইলোসেরিয়াস। এটি ক্যাকটাস জাতীয় একটি মিষ্টি ফল। যাতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফাইবার ও এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগ ও আর্থাইটিস রোগ নিরাময়ে দারুণ উপকার করে।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. নজরুল ইসলাম সিকদার জানান, পিরোজপুর জেলায় এবছর ৫ হেক্টর জমিতে ড্রাগন চাষ হয়েছে। যার লক্ষমাত্রা ২৪ মেট্রিক টন। বিদেশী এ ফলটি চাষের ইতিহাস খুব বেশি পুরানো নয়। ইন্দুরকানীতে বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে আসা বাবুল হাওলাদার বর্তমানে ড্রাগন চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন। তার ছেলেও বিদেশ থেকে ফিরে এই কাজই করছেন। ড্রাগন ফলের আগে অনেক দাম ছিল, বর্তমানে অনেক কমে গেছে সে দাম। পরিচর্যা ঠিকমতো করলে এ ফলে চাষী লাভের মুখ দেখবে। কৃষক এ কৃষির মাধ্যমে নিজের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে পারবে। অন্য কোন ফসলে এতটা লাভবান হওয়া যায় না। তবে ড্রাগনসহ অন্য ফসলের সাফল্য আমরা অচিরেই দেখতে পারব।