ঢাকা,  শনিবার  ০৪ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

আলোর পথে গুচ্ছগ্রামের শিশুরা

প্রকাশিত: ১৫:৪৫, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

আলোর পথে গুচ্ছগ্রামের শিশুরা

সংগৃহীত ছবি

 

অন্ধকার থেকে আলোর পথে জামালপুরের ইসলামপুরের দুর্গম চরাঞ্চলের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত শিশুরা। ইসলামপুর উপজেলার একজন কর্মকর্তার সহযোগিতায় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের সহযোগিতায় চালু হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। ফলে ভবঘুরে শিশুরা এখন স্কুলে গিয়ে পড়ালেখাসহ নানার রকম খেলাধুলায় মাতিয়ে তুলছে চারদিকের পরিবেশ।

ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলী ইউনিয়নে যমুনার দুর্গম চরাঞ্চল বীর নন্দনেরপাড়া গুচ্ছ গ্রাম এবং চর নন্দনের পাড়াগ্রাম। ওই গুচ্ছগ্রাম, বীর নন্দনের পাড়া এবং চর নন্দনেরপাড়া গ্রামে পাঁচ শতাধিক পরিবার লোকসংখ্যা দেড় সহস্রাধিক। এসব দরিদ্র পরিবারে রয়েছে পাঁচ শতাধিক শিশু। তারা দীর্ঘদিন থেকে ন্যূনতম প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। গ্রাম দুটিতে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। যেকারণে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল এলাকার শিশুরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় শিক্ষা বঞ্চিত দরিদ্র পরিবারের ওইসব শিশুরা সারাদিন ঘুরে বাড়াতো ছিন্নমূল শিশুদের মতো।

জানা গেছে, ২০০৯ সালে বীর নন্দনেরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।  বর্তমানে বিদ্যালয়টি ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে আমতলী বাজার এলাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। যমুনা নদী পার হয়ে ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের পক্ষে ওই বিদ্যালয়ে যাওয়া অসম্ভব। এছাড়া গ্রাম দুটির অধিকাংশ পরিবারই অত্যন্ত দরিদ্র। তাই  শিক্ষার প্রতি তেমন কোনো আগ্রহী নেই অভিভাবকদেরও। ফলে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত দুই গ্রামের শত শত শিশু।

চিনাডুলী ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য মোতালেব হোসেন বলেন, বীর নন্দনেরপাড়া এবং চরনন্দনেরপাড়া গ্রামে অন্তত ১ হাজার দুইশ লোকের বসবাস করেন। স্কুলটি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে শিশুরা সারাদিন ভবঘুরেদের মতো ছুটোছুটি করতো।

এ অবস্থায় নভেম্বর ২০২৩ ইসলামপুর উপজেলার জনৈক সরকারি কর্মকর্তা গুচ্ছগ্রাম পরিদর্শনে যান। গ্রামের শিশুদের শিক্ষা আলো থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঘটনা দৃষ্টিতে আসে। তখন তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের সহযোগিতায় নিজ উদ্যোগ দুই গ্রামের দরিদ্র শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে একটি অস্থায়ী স্কুল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। নিয়োগ করেন একজন শিক্ষক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, আমার শিশুকন্যা মাত্র স্কুলে যাওয়া আসা শুরু করেছে। তার জন্য আমার অনেক পরিচর্যা করতে হয়। সম্প্রতি আমি গুচ্ছগ্রাম পরির্দশনে গিয়ে ছিন্নমূল শিশুদের মতো অনেক শিশু নজরে আসে। শিশুদের কাছ জানতে চাই তোমরা স্কুলে যাও না, তখন তারা জানায় তারা স্কুল চিনেন না।

 

আলোর পথে গুচ্ছগ্রামের ছিন্নমূল শিশুরা

তিনি আরো বলেন, এ গ্রাম থেকে স্কুল ৩ থেকে ৪ মাইল দূরে। নদী পারাপার ও ধূ-ধূ বালুর চরে হেটে যাতে হয় তাদের। তাই অভিভাবকদেরও শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তখন আমার কন্যার কথা মনে পড়ে। তাই ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম ও ইউপি সদস্য মোতালেব হোসেনের সহযোগিতায় তিন হাজার টাকা বেতনে একজন শিক্ষক রেখে একটি স্কুল স্থায়ীভাবে স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে স্কুলটি স্থাপন করা হয়। চলতি বছর জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে স্কুলটির পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

ওই গ্রামের আজিজুর রহমান বলেন, স্কুলটি যমুনা নদীতে ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই এই দুই গ্রামের শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিল। দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় কেউ কেনো উদ্যোগ না নেয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এখন সে সমস্যা কেটে গেছে। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে এসব শিশুরা অবশ্যই মাধ্যমিক স্তরে পৌঁছবে।

চিনাডুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম বলেন, উপজেলার একজন কর্মকর্তা গুচ্ছগ্রাম পরির্দশনে এসে শিক্ষা বঞ্চিত শিশুদের অবস্থা দেখে এই স্কুলটি স্থাপনের উদ্যোগ নেন। এতে অবহেলিত শিশুদের জন্য কিছুটা হলেও শিক্ষার আলো দেখতে শুরু করেছে।