ঢাকা,  শনিবার  ০৪ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেনের অপেক্ষায় যশোরবাসী

প্রকাশিত: ১২:১২, ১২ অক্টোবর ২০২৩

পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেনের অপেক্ষায় যশোরবাসী

ফাইল ছবি

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ অনেকটা সহজ হয়েছে। কমেছে মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি। সেই অগ্রযাত্রায় নতুন মাত্র যোগ করেছে রেল প্রকল্প। এই রেল প্রকল্প পুরোদমে চালু হলে দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক অঞ্চল যশোরের ব্যবসা-বাণিজ্যে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। 

যশোরের ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, রেল ব্যবস্থা চালু হলে সময় বেঁচে যাওয়ার পাশাপাশি এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসবে। 

যশোরের প্রাচীন রেল স্টেশন যশোর জংশন। এ স্টেশনের সঙ্গে বেনাপোল দিয়ে ভারতে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এ অঞ্চলের কৃষিখাতেও রয়েছে দেশব্যাপী সুনাম। দেশের প্রায় সিংহভাগ চাহিদা মেটায় যশোরের কৃষিখাত। এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায় এখানকার সবজি, ফুল ও মাছ। 

যশোরে রয়েছে বেনাপোল বন্দর, নৌয়াপাড়া নৌ বন্দর ও বসুন্দিয়া বাজার। যেখানে গ্রীষ্মকালীন ফল নারকেল, কাঠালসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের মোকাম রয়েছে। পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চালু হলে আরও সমৃদ্ধ হবে গোটা যশোর অঞ্চল। মাত্র আড়াই ঘণ্টায় যশোরের সঙ্গে রেলপথে পদ্মা সেতু হয়ে রাজধানী পৌঁছানো সম্ভব হবে। ব্যবসার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।

যশোর চেম্বার অব কমার্সের সদস্য হুমায়ুন কবির বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চল তথা যশোরের ব্যবসায় বাণিজ্যের পরিধি গত এক বছরে অনেকাংশে বেড়ে গেছে। বর্তমানে ভাঙা পর্যন্ত পদ্মা সেতু দিয়ে রেল যোগাযোগ শুরু হয়েছে। এটি যশোর পর্যন্ত বর্ধিত হলে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। 

তিনি আরও বলেন, আমাদের যশোর মাছ, ফুল ও সবজিতর জন্য বিখ্যাত। যশোর থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চালু হলে দ্রুত সময়ে এগুলো রাজধানীতে পৌঁছাতে পারবে। পাশাপাশি এগুলো বহনের জন্য আমরা আগে থেকে ট্রেনে বিশেষ ওয়াগনের দাবি জানাই। 

কৃষকরা বলছেন, রেল চালু হলে সবজি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহের খরচ কমে যাবে। এতে আমাদের লাভ বেশি হবে। 

দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের বৃহৎ সবজির মোকাম সাতমাইলের ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, গত বছরও আমাদের সবজি ঢাকায় পাঠাতে গেলে সড়কে ভোগান্তিতে পড়তে হতো, ফেরিঘাটে দীর্ঘ সময় যানজটে সবজি পচন ধরতো। পদ্মা সেতু চালুর পরে এ ভোগান্তিটা কমে গেছে। 

আব্দুলপুর গ্রামের কৃষক বাশার শেখ বলেন, ট্রেন চালু হলে সকালে মাঠ থেকে তোলা সবজি দুপুরে ঢাকার কাঁচাবাজার ধরতে পারবে। এমনকি আমরাও সবজি নিয়ে ঢাকায় বিক্রি করতে যেতে পারব। এতে বহন খরচ কমবে লাভের পরিমাণও বেশি হবে। 

শুধু সবজিতেই নয় মৎস খাতেও সুফল বাড়বে। মৎস ব্যবসায়ী নেতারা বলছে, রেল ব্যবস্থায় যাতায়াতের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহণে খরচ কমে। এত ভোক্তা পর্যায়ে সুফল মিলবে।

যশোরের চাঁচড়ার মৎস ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম রবি বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে আমরা ট্রাকে করে অল্প সময়ে ঢাকায় মাছ পাঠাই। তবে পদ্মা সেতু দিয়ে যশোরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ শুরু হলে আমরা ট্রেনে ওয়াগনে করে মাছ পাঠাতে পারব। তখন সময় লাগবে মাত্র আড়াই ঘণ্টা। যেখানে বহন খরচ আগে ছিল ২০ হাজার সেখানে বহন খরচ হবে ১০-১৫ হাজার। ফলে চাষি ও ব্যবসায়ীদের লাভের পরিমাণ বেশি থাকবে।

যশোর রেল স্টেশনে অপেক্ষারত যাত্রী মইনুল হোসেন বলেন, যশোর থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চালচল শুরু হলে আমরা সকালে যশোর থেকে ঢাকায় গিয়ে অফিস ধরতে পারব। শুধু তাই নয় অনেক ভোগান্তি কমে যাবে। 

আরেক যাত্রী হাবিব উল্লাহ বলেন, আমরা ২ বছর আগে কল্পনাও করতে পারিনি যে আড়াই ঘণ্টায় যশোর থেকে ঢাকা যেতে পারব। এখন বাসে পদ্মা সেতু দিয়ে রাজধানীতে যেতে সময় লাগে সাড়ে ৩ ঘণ্টা। ট্রেন চালু হলে সময় লাগবে মাত্র আড়াই ঘণ্টা। 

যশোর রেল স্টেশন মাস্টার আয়নাল হাসান বলেন, বর্তমান সরকার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নের জন্য যে কাজ করেছে তার একটি বড় উদাহরণ হলো এই পদ্মা সেতু। এ পদ্মা সেতু দিয়ে রেলপথে যশোর থেকে ঢাকার দূরত্ব হবে মাত্র ১৭২ কিলোমিটার। ফলে যেতে সময় লাগবে মাত্র আড়াই ঘণ্টা। এদিকে ঢাকার সঙ্গে যশোরের দূরত্ব কমবে প্রায় ৫২ কিলোমিটার। এই রেলপথ চালু হলে যেমন যাত্রীদের যাতায়াত সহজতর হবে তেমন যশোর আরও উন্নত হবে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।