ঢাকা,  শনিবার  ২৭ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

ওভারপাস, আন্ডারপাস ও ইউলুপ তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২৯ জুলাই ২০২১

ওভারপাস, আন্ডারপাস ও ইউলুপ তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন থেকে রাস্তা নির্মাণ, সংস্কার ও সম্প্রসারনে ওভারপাস, আন্ডারপাস ও ইউলুপ তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাস্তায় যাতে যান ও মানুষের চলাচল বাঁধাগ্রস্ত না হয়। বাঁধাহীন চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় স্থানে এসব নির্মাণ করতে হবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক পরবর্তী বিফ্রিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, এখন থেকে ব্রীজ নির্মাণের ক্ষেত্রে উচ্চতা ঠিক রাখার নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, আমাদের দেশ জোয়ার ভাটার দেশ। তাই ব্রীজের উচ্চতা সঠিকভাবে রাখতে হবে। যাতে নৌ চলাচল বাধাগ্রস্ত না হয়। এজন্য নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্রীজের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এতদিন প্রবাসীরা আমাদের দিয়েছেন, এখন আমরা তাদের দেব। যারা ফিরে এসেছেন তারা যেন সম্মানজনক কোন পেশায় যুক্ত হতে পারেন। কিংবা আরও উন্নত প্রশিক্ষণ নিয়ে আবারও বিদেশে ফিরে যেতে পারেন। সে ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্যই প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। এছাড়া মহিলাদের প্রশিক্ষনের জন্য প্রকল্প না নিয়ে রাজস্ব খাতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে যেখানে সেখানে বালু মহাল না করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বৈধভাবে ব্যবসা করা হলেও যেখানে সেখানে বালু মহাল করা যাবেনা। এছাড়া খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে দুধ প্রক্রিয়াকরনের উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে হারবাল মেডিসিনের ব্যবহার ও উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে একনেক বৈঠকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ২ হাজার ব্রীজ নির্মাণ-পুন:নির্মাণসহ ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২ হাজার ৫৭৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ২ হাজার ১৫০ কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ৪২৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিফ্রিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রি ড. শামসুল আলম। এ সময় আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন-আল-রশীদ, আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগমসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিফিং-এ পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বরিশাল অঞ্চলে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার আছে। দেখেছি অনেক ব্রীজ ইতোমধ্যেই ভেঙ্গে গেছে। কিছু ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। তাই দেশের দক্ষিণাঞ্চলের আয়রণ ব্রীজ পুন:নির্মাণ বা পুন:বাসন শীর্ষক প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ২ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। তবে এই সংশোধনী প্রস্তাবে ব্যয় বেড়েছে ৪৯৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। তিনি বলেন, প্রকল্প সংশোধন করাটা অন্যায় নয়। প্রয়োজনে হতে পারে। কিন্তু অকারনে ঘোড়াঘুরি করাটা খারাপ। অহেতুক প্রকল্প সংশোধন করা হলে সদস্যরা ধরবেন। আমরাতো আছিই।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আয়রণ ব্রীজ পুন:নির্মাণ বা পুর্ণবাসন প্রকল্পের আওতায় জরার্জীর্ণ ৮০৫টি ব্রীজ লোহার ব্রীজ ভেঙ্গে সেখানে আরসিসি বা পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ১ হাজার ২৪৪টি লোহার ব্রীজ পুন:নির্মাণ বা পুণবার্সন করা হবে। তিনি বলেন, ব্রীজের উচ্চতা কম হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। যেমন রাজধানীর বসিলা ব্রীজটি নির্মাণের সময় উচ্চতা কম হওয়ায় বড় জাহাজ এদিকে আসতে পারছে না। এ কারণে ব্রীজটি ভাঙ্গার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। এতে সরকারী অর্থের অপচয় হয়। এজন্য এখন থেকে ব্রীজ নির্মাণে সঠিক উচ্চতা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ৫ লাখ প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছেন। এরমধ্যে প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের পুণ:একত্রীকরনের লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃজনে সহায়ক প্রকল্পের মাধ্যমে ২ লাখ শ্রমিককে সহায়তা করা হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রবাসী শ্রমিকদের ডাটাবেজ করা হবে। সেই সঙ্গে প্রশিক্ষণ ও নগদ টাকাও দেয়া হবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে।

একনেকে অনুমোদিত প্রকল্প গুলো হচ্ছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কে ৩টি আন্ডারপাস এবং পদুয়ার বাজার ইন্টারসেকশনে ইফলুপ নির্মাণ, এ প্রকল্পের ব্যয় হবে ৫৬৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এছাড়া জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ, ব্যয় ১১১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় বাংলাদেশ চ্যান্সারি ভবন নির্মাণ, ব্যয় ১৪৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ইনস্টিটিউট অব টিস্যু ব্যাংকিং এন্ড বায়োমেটেরিয়াল রিসার্চ এর সেবা ও গবেষণা সুবিধাদির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ, ব্যয় ১৭৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। জেলাভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ব্যয় ৩১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণঙ্গ শিশু কার্ডিওলজি ও শিশু কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট স্থাপন, ব্যয় ৭২ কোটি ৯ লাখ টাকা। পদ্মা বহুমুখী সেতুর ভাটিতে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং ও টংগিবাড়ী উপজেলাধীন বিভিন্ন স্থানে পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ, ব্যয় ৪৪৬ কোটি ১২ লাখ টাকা। প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের পুন:একত্রীকরনের লক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃজনে সহায়ক প্রকল্প তৈরি, ব্যয় হবে ৪২৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা এবং বিাসক খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পনগরী, ঠাকুরগাঁও প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্য ও স¤প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা অংশ নেন।

গাজীপুর কথা