ঢাকা,  শনিবার  ২৭ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

পূর্ণাঙ্গ শিশু কার্ডিয়াক ইউনিট হচ্ছে বিএসএমএমইউতে

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ২৯ জুলাই ২০২১

পূর্ণাঙ্গ শিশু কার্ডিয়াক ইউনিট হচ্ছে বিএসএমএমইউতে

শিশু হৃদরোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাই দেশে শিশু হৃদরোগীদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতে ঢাকায় একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু কার্ডিয়াক ইউনিট স্থাপন করতে যাচ্ছে সরকার। পরবর্তীতে সরকারি অন্যান্য হাসপাতালেও তা সম্প্রসারণ করা হবে।

শিশু কার্ডিয়াক চিকিৎসার সুযোগ বাড়াতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ শিশু কার্ডিওলজি ও শিশু কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পাটি অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেক। একনেকের বুধবারের সভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় নতুন ও সংশোধিত মিলে ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়।

সভা শেষে সংবাদ সম্মেলন অনুমোদিত প্রকল্পে বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম এবং পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা।

প্রকল্পটির অনুমোদন বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জন্মগত হৃদরোগীসহ অন্যান্য শিশু হৃদরোগীর জন্য শিশু কার্ডিয়াক ইউনিট সম্প্রসারণ এবং শিশু কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হবে। ফলে উন্নত বিশ্বের অনেক চিকিৎসাই বিএসএমএমইউতে নতুনভাবে চালু করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ তৈরিতেও প্রকল্পটি অবদান রাখবে।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে ১৮ বছরের নিচে প্রায় ৬৭ লাখ শিশু হৃদরোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে ৩৩ লাখ শিশুই নবজাতক। আবার প্রায় ১.৬৮ লাখ জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত। এসব শিশুর চিকিৎসা যেমন ব্যয়বহুল তেমনি অপ্রতুল। শিশু কার্ডিয়াক চিকিৎসকও কম। বিদেশে এ রোগের চিকিৎসার কারণে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা দেশের বাইরে চলে যায়। এ জন্য দেশেই উন্নত শিশু কার্ডিয়াক চিকিৎসা দিতে সরকার বিএসএমএমইউতে একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু কার্ডিয়াক ইউনিট স্থাপন করতে যাচ্ছে।

প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭২.০৯ কোটি টাকা।

প্রকল্পটির মাধ্যমে শিশু কার্ডিয়াক রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা গড়ে তোলা হবে। এতে শিশুর চিকিৎসাসেবা ও সার্জারির মাধ্যমে জন্মগত হৃদরোগ থেকে মৃত্যুহার সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনা হবে।

সরকারি মেডিক্যাল কলেজ পর্যায়ে নবজাতকসহ জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসাসেবা ও সার্জারি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি কর হবে। নবজাতকসহ জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা সেবা ও সার্জারি বিষয়ে প্রতি বছর ২০ জন চিকিৎসককে উচ্চতর শিক্ষা (এমডি, এফসিপিএস, এমএস কোর্স) প্রদান করা হবে। ধীরে ধীরে গ্রামীণ জনগণের দোরগোড়ায় শিশু হৃদরোগের চিকিৎসা সেবা নিয়ে যাওয়া হবে। যাতে করে দেশে শিশু হৃদরোগের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার ওপর আশ্বাস ও বিশ্বাস দৃঢ়করণের মাধ্যমে দেশের বাইরে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যাওয়া নিরুৎসাহিত করা এবং কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যার ২৮ শতাংশের বয়স ১৪ বছর বা এর চেয়েও কম। নিরক্ষরতা, দারিদ্র্য, পুষ্টিহীনতা, স্বাস্থ্যকর পরিবেশের অভাবসহ প্রতিষেধকমূলক ব্যবস্থা না থাকায় শিশু হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, উন্নত বিশ্বে প্রতি হাজারে ৬-৭টি শিশু হৃদরোগ নিয়ে জন্ম নেয়। তবে বাংলাদেশে এ হার অনেক বেশি। দারিদ্র্যের কারণে সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে না পারায় এবং সময় মতো সার্জারিসহ প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা না নেয়ায় এ রোগীর সংখ্যা দেশে দিন দিন বেড়েই চলছে।

প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ৩৬টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ পর্যায়ে নবজাতকসহ জন্মগত হৃদরোগ আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা সেবা ও সার্জারি নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রশিক্ষিত জনবল গড়ে তুলে ৮০টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ পর্যায়েও তা সম্প্রসারিত করা হবে।

প্রকল্পের আওতায়, অনাবাসিক ভবন এফ ব্লকের ৮ম ও ৯ম তলা ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, ৫৯১টি চিকিৎসা ও শল্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদি কেনা, ৫২৮টি মেডিক্যাল যন্ত্র ও সরঞ্জামাদি কেনা, ৬৪টি কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক সামগ্রী কেনা এবং অটোমেশন সফটওয়্যার কেনা হবে।

গাজীপুর কথা