![কালীগঞ্জের কাকরোল যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে কালীগঞ্জের কাকরোল যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে](https://www.gazipurkotha.com/media/imgAll/2023September/1-2309130415.jpg)
কালীগঞ্জের কাকরোল যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে
গাজীপুরের কালীগঞ্জ কৃষি অফিস থেকে উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের বিরতুল ও গারারিয়া গ্রামকে নিরাপদ সবজির গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই গ্রামগুলোতে চাষিরা কোনো প্রকার বালাইনাশক ছাড়াই বিভিন্ন কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সবজির চাষ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে এই গ্রামগুলোর চাষ করা কাকরোলের রয়েছে বেশ চাহিদা। রাজধানীসহ দেশের আশপাশের বাজারগুলোর চাহিদা মিটিয়েও যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের বালু নদী তীরবর্তী গ্রাম বিরতুল ও গাড়ারিয়া। ঢাকার লাগোয়া এই উপজেলার গ্রাম দুটির নিরাপদ সবজির চাহিদা দেশ জুড়ে। বিশেষ করে এই গ্রামে চাষ করা কাকরোল উৎপাদন আশেপাশের গ্রামের কৃষকদের অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। কাকরোল চাষে দুই গ্রামের কৃষকদের সফলতায় একই ইউনিয়নের বাগদী, পারওয়ান ও পানজোরা গ্রামের চাষিরাও চাষ করছেন এই সবজি।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সেক্স ফেরোমান ফাঁদ, হলুদ স্টিকি ট্র্যাপ, হাত পরাগায়ন, আইপিএ প্রযুক্তি, ব্যাগিং, সুস্থ ও ভালো বীজ, সুষম সার, মালচিং, ভার্মি কম্পোস্ট এবং জৈব বালাইনাশকের মাধ্যমে বিরতুল ও গাড়ারিয়া গ্রামে নিরাপদ সবজি কাকরোলের চাষ হচ্ছে।
উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের বিরতুল গ্রামের কাকরোল চাষি কালিপদ চন্দ্র দাস বলেন, আমি এই বছর সোয়া বিঘা জমিতে কাকরোলের চাষ করেছি। ৭০/৮০ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় দুই লাখ টাকার মতো আয় করেছি। স্থানীয় কৃষি অফিসের লোকজন আমাদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরামর্শ দেন বলে আমরা কাকরোল চাষে সফলতা পাচ্ছি।
একই গ্রামের আরেক কাকরোল চাষি প্রমেশ চন্দ্র দাস বলেন, কাকরোলের চাহিদা থকায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাড়ি থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে বাজারে নিয়ে যাওয়ার ঝামেলা থাকছে না এবং যাতায়াত খরচ নেই। ফলে আমাদের লাভের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে।
ওই গ্রামের কাকরোল চাষি নীহার চন্দ্র দাস বলেন, আমাদের গ্রামের সবজি বিষমুক্ত সবজি। এই গ্রামের কাকরোল মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
কথা হয় বাগদী, পারওয়ান ও পানজোরা গ্রামের কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। তারা বলেন, শুধু নিরাপদ সবজির গ্রাম নয়। নিরাপদ ওই সবজির গ্রামগুলোর সবজি দিয়ে কালীগঞ্জ পৌরসভাসহ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে অন্তত একটি করে নিরাপদ সবজি বাজার করলে আমরা যারা কৃষক আছি তারা সবজি সিন্ডিকেটের বাহিরে গিয়ে ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রি করতে পারবো।
কালীগঞ্জ উপ-সহকারী (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ কালীগঞ্জ থেকে আমরা বিরতুল ও গাড়ারিয়া গ্রামের কাকরোল চাষিদেরকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি। গ্রাম দুটিতে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে বালাইনাশক ছাড়াই কাকরোল উৎপাদন করছে। এ জন্য দেশের বাইরের ক্রেতাদের এর বিশেষ চাহিদা রয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ ফারজানা তাসলিম বলেন, গ্রীষ্মকালীন সবজি হিসেবে কাকরোল একটি জনপ্রিয় সবজি। সাধারণত খরিপ-১ এবং খরিপ-২ এই দুই মৌসুমে এই সবজিটি চাষবাদ করা হয়। আমাদের কালীগঞ্জ উপজেলার একটি সম্ভাবনাময় সবজি হচ্ছে কাকরোল। কারণ এই সবজি কালীগঞ্জ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলা বিরতুল ও গাড়ারিয়া এই দুটি গ্রামকে নিরাপদ সবজির গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কৃষিকে বিষমুক্ত করতেই এই উদ্যোগ। তবে এতে কৃষকদের ভালো সাড়াও মিলছে।