ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

৪০০ বছরের ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কালিয়াকৈরের বলিয়াদী জমিদার বাড়ি

প্রকাশিত: ১৭:০৭, ১ এপ্রিল ২০২১

৪০০ বছরের ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কালিয়াকৈরের বলিয়াদী জমিদার বাড়ি

গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরে বলিয়াদি জমিদার বাড়ি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৪০০ বছরের ইতিহাস নিয়ে। পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়ানোর এক মনোরম পরিবেশ এই জমিদার বাড়ি। যে কারোর মন কাড়তে পাড়ে এখানকার বৈচিত্র্যপূর্ণ পরিবেশ।

পিচঢালা পথ হতেই চোখে পড়বে অন্যরকম সুন্দর এই জমিদার বাড়িটি। জমিদার বাড়ির সীমানায় ঢোকার মুখে হাতের ডান পাশে একটি পুকুর পড়বে আর বাম পাশে এক টুকরো খোলা মাঠ। এই মাঠ ধরে একটু সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে হাতের বাম পাশের রয়েছে ‘বলিয়াদি ওয়াকফ এস্টেট জামে মসজিদ’। মসজিদটি প্রথম নির্মাণ করা হয় ১৬১২ খ্রিষ্টাব্দে। কিন্তু সেই মসজিদটি এখন আর নেই। মসজিদটি পুনঃনির্মিত হয়েছে ১৯৯২ সালে। চার কোনায় চারটি এবং প্রতি বাহু’র মাঝে একটি করে মোট আটটি ছোট্ট মিনার রয়েছে এই একতলা বর্গাকৃতির মসজিদটিতে। 
 
হাতের বাম পাশে মসজিদ রেখে সামনে এগিয়ে গেলে রয়েছে মূল জমিদার বাড়ির ভবন। মসজিদ এর ঠিক সম্মুখভাগে রয়েছে পারিবারিক কবরস্থান। এই কবরস্থান আর মূল ভবনের মাঝে রয়েছে ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত বলিয়াদি এস্টেটের ‘হেড অফিস’ তথা ‘সদর দফতর’। যেখান থেকে বলিয়াদি এস্টেটের সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো। 

মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের ফরমান বলে ইংরেজি ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে সমগ্র কালিয়াকৈর থানা, ধামরাই থানা, সাভার থানা এবং বাসাইল থানা নিয়ে বলিয়াদি এস্টেট প্রতিষ্ঠিত হয়।

তৎকালীন সময়ে কালিয়াকৈর থানার নাম ছিল পরগনা তালেবাবাদ। ধামরাই এবং সাভার থানা একসাথে ছিল। যার নাম ছিল পরগনা চন্দ্রপ্রতাপ। অপরদিকে বাসাইল থানার নাম ছিল পরগনা আমেনাবাদ। 

বাংলাদেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী এই এস্টেটের দিল্লী মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর কর্তৃক নিযুক্ত বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার সুবেদার নবাব কুতুবুদ্দিন সিদ্দিকীর পুত্র নবাব সাদ উদ্দিন সিদ্দিকী বলিয়াদী এস্টেটের প্রথম কর্ণধার ছিলেন।

বর্তমান ডাক সাইটে রাজনীতিবিদ, বিএনপি নেতা চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী’র পূর্বপুরুষ হলেন এই বলিয়াদি জমিদারেরা। এই বলিয়াদি জমিদার বাড়ি তার পরবর্তী প্রজন্মের যত্নে আজো ভালো অবস্থায়ই টিকে আছে অন্যান্য জমিদার বাড়ির তুলনায়।

অপূর্ব নির্মাণশৈলীর এই জমিদার বাড়ির মূল পাঁচিলঘেরা অংশে মাঝখানে ত্রিতল জমিদার বাড়ির মূল কাঠামো। মূল বাড়ির ছাদে রয়েছে সফেদ গম্বুজ, যার চারিদিকে প্রতিটি ভিতের মাথায় রয়েছে ছোট ছোট মিনার আকৃতির নকশা।

বলিয়াদি অফিসের যে প্রশাসনিক কার্যালয় আছে সেখান থেকে অনুমতি নিয়ে ভেতরে ঢুকে ঘুরে দেখতে পারেন এর চারপাশ। এর নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী আপনার ভালো লাগবে। সামনে সবুজ ঘাসের লনে বসে আপনি অনায়াসে কাটিয়ে দিতে পারবেন একটি আনন্দঘন বিকেল।
গুলিস্তান এবং মতিঝিল থেকে সরাসরি বাসে কালিয়াকৈর যাওয়া যায়। 

ঘুরতে আসা এক দর্শনাত্রী রাসেল হোসেন জানান, বলিয়াদী জমিদার বাড়ীতে অনেকে পুরাতন ইতিহাস দেখে অতীতকে স্মরণ করে।  

কালিয়াকৈর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা কাজী হাফিজুল আমিন জানান,  যে সব স্থাপত্য নষ্ট হয়েছে সেগুলো সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যে আমরা ওই অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করেছি। তাদের পজেটিভ রিপোর্ট আসলেই আমরা সংস্কারের কাজ করবো। 

গাজীপুর কথা