ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

২৮ ফেব্রুয়ারি, পপ সম্রাট বীর মুক্তিযোদ্ধা আজম খানের জন্মদিন

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

২৮ ফেব্রুয়ারি, পপ সম্রাট বীর মুক্তিযোদ্ধা আজম খানের জন্মদিন

ব্যান্ড সংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খানের জন্মদিন আজ। যিনি আমাদের কাছে "আজম খান" হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত।১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আজিমপুর সরকারি কলোনির ১০ নম্বর কোয়ার্টারে জন্ম নেন পপ সম্রাট খ্যাত এই শিল্পী। তার বাবা আফতাবউদ্দিন আহমেদ ও মা জোবেদা খাতুন।

৬০ দশকের শুরুর দিকে সংগীত জীবনের শুরু করেন আজম খান। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় তিনি ‘ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী’র সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে গণসংগীত প্রচার করতেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে, ২১ বছর বয়সী আজম খান বাবার অনুপ্রেরণায় যুদ্ধে যাবার সিদ্ধান্ত নেন, এবং প্রশিক্ষণের জন্য তাঁর দুই বন্ধুকে সাথে নিয়ে পায়ে হেঁটে আগরতলা চলে যান।

তিনি প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন ভারতের মেলাঘরের শিবিরে। সেখানে তিনি শহিদ জননী জাহানারা ইমামের জ্যেষ্ঠ পুত্র শাফী ইমাম রুমীর কাছে এলএমজি, রাইফেল চালানোসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। যুদ্ধ প্রশিক্ষণ শেষে তিনি কুমিল্লায় পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে অংশ নেন। এর কিছুদিন পর তিনি পুনরায় আগরতলায় ফিরে যান এরপর তাঁকে পাঠানো হয় ঢাকায় গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য।

ঢাকায় তিনি সেকশান কমান্ডার হিসেবে ঢাকা ও এর আশেপাশে বেশ কয়েকটি গেরিলা আক্রমণে অংশ নেন। আজম খান মূলত যাত্রাবাড়ি-গুলশান এলাকার গেরিলা অপারেশনগুলো পরিচালনার দায়িত্ব পান। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল তাঁর নেতৃত্বে সংঘটিত "অপারেশন তিতাস"। এই যুদ্ধে তিনি তাঁর বাম কানে আঘাতপ্রাপ্ত হন। যা পরবর্তীকালে তাঁর শ্রবণক্ষমতায় বিঘ্ন ঘটায়। 

মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার পর ১৯৭২ সালে তিনি তাঁর বন্ধুদের নিয়ে ‘উচ্চারণ’ ব্যান্ড গঠন করেন। তাঁর ব্যান্ড উচ্চারণ এবং আখন্দ (লাকী আখন্দ ও হ্যাপী আখন্দ) ভ্রাতৃদ্বয় দেশব্যাপী সঙ্গীতের জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯৭২ সালে বিটিভিতে "এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে "ও "চার কালেমা সাক্ষী দেবে" গান দু'টি সরাসরি প্রচার হলো। ব্যাপক প্রশংসা আর তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দিলো এ দুটো গান। দেশজুড়ে পরিচিতি পেয়ে গেলো তাঁদের দল। ১৯৭৪-১৯৭৫ সালের দিকে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে বাংলাদেশ (রেললাইনের ঐ বস্তিতে) শিরোনামের গান গেয়ে হৈ-চৈ ফেলে দেন। তার হাত ধরেই বাংলা গান খুঁজে পায় নতুন মাত্রা।

‘এক যুগ’ নামে তাঁর প্রথম অডিও এলবাম ক্যাসেট প্রকাশিত হয় ১৯৮২ সালে। ১৭টি একক, ডুয়েট ও মিশ্রসহ সব মিলিয়ে তাঁর গানের অ্যালবাম ২৫টি। তাঁর প্রথম সিডি বের হয় ১৯৯৯ সালের ৩ মে ডিস্কো রেকর্ডিংয়ের প্রযোজনায়।  ১৯৯১—২০০০ সালে তিনি গোপীবাগ ফ্রেন্ডস ক্লাবের পক্ষ হয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলতেন। তিনি ভালো সাঁতারু ছিলেন এবং নতুন সাঁতারুদেরকে মোশারফ হোসেন জাতীয় সুইমিং পুলে সপ্তাহে ৬ দিন সাঁতার শিখাতেন। এছাড়াও একটি বাংলা সিনেমায় অভিনয় সহ তিনি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হিসেবে কাজ করেন।

২০১১ সালের ৫ই জুন রবিবার বহুগুণে গুনান্বিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আজম খান দীর্ঘদিন দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধির সাথে লড়াই করে ঢাকাস্থ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

২০১৯ সালে তাকে দেয়া হয় মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘একুশে পদক’। বেঁচে থাকতে একুশে পদক না পেলেও সংগীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মৃত্যুর পরে তাকে এই স্বীকৃতি দেয়া হয়। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা, গুরু আজম খানের জন্মদিনে তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। গানের মধ্য দিয়ে এই পপ সম্রাট অমর হয়ে আছেন বাঙালির হৃদয়ে, থাকবেন চিরকাল।

গাজীপুর কথা