পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চল থেকে মিশর সবচেয়ে বেশি কৌতূহলপূর্ণ। বলতে গেলে এর পরতে পরতে রয়েছে নতুন নতুন তথ্য। মিশরীয় গবেষকরা বছরের পর বছর ধরে সেসবেরই সন্ধান করে চলেছেন।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মিশরীয়দের মমি আর বিভিন্ন সমাধিস্থান। এছাড়াও চীন এবং এর আশেপাশে পাওয়া অনেক সমাধি প্রত্নতাত্ত্বিকদের বেশ চিন্তায় ফেলেছেন। সেসব সমাধি বিশ্লেষণ এবং গবেষণায় বড়সড় ধাক্কাও খান তারা। এবার এমনই এক নারীর সমাধি পাওয়া গেল যেখানে ছিল একটি আইফোন।
ওই নারীর সমাধি
নিশ্চয় ভাবছেন, হয়তো কারো কাছ থেকে ভুলবশত সেখানে একটি আইফোন পড়ে গেছে। আসলে ব্যাপারটি এমন নয়। এটি জিওনজু-যুগের একটি আইফোন। আচ্ছা বলা যায় যোগাযোগের এক মাধ্যম। এখনকার মতো এতোটা অত্যাধুনিক নয় তবে দেখতে আয়তাকার এই আইফোন ছিল এই সমাধির ভেতর।
২০১৬ সালে সায়ান সাগরের আলা-তে নেক্রোপলিসে সন্ধান করছিলেন। এটি রাশিয়ার বৃহত্তম বিদ্যুৎ কেন্দ্র সায়ানো-শুশেনসকায়া বাঁধের উজানে ইয়েনিসি নদীর উপরের একটি বিশাল মানবসৃষ্ট জলাশয়। প্রতি বছর মে এবং জুন মাসে এখানে পানি শুকিয়ে একেবারে মরুভূমিতে পরিণত হয়। এই পানির নিচেই রয়েছে একটি সমাধিস্থল।
সায়ান সাগরের আলা-তে নামক স্থানে ওই সমাধি পাওয়া যায়
ব্রোঞ্জ যুগ থেকে চেঙ্গিস খানের সময় পর্যন্ত কবরগুলো এখানে পাওয়া গেছে। সমাধিস্থলটি ‘দ্য রাশিয়ান আটলান্টিস’ নামে পরিচিত। তেমনি এখানে সমাধি খনন করছিলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। এই সময় একটি সমাধিতে পাওয়া যায় একটি ১৮ সেন্টিমিটার লম্বা এবং নয় সেন্টিমিটার চওড়া কালো আয়তাকার একটি রত্নপাথর। ফিরোজা, কার্নেলিয়ান এবং মাদার অব-মুক্তো দিয়ে সজ্জিত ছিল এটি।
এ বিষয়ে প্রত্নতত্ববিদ পাভেল লিউসের বলেন, এটি আধুনিক স্মার্টফোনের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। সমাধিস্থ ওই নারীর কাছে একটি বেল্ট ছিল। যেটি চীনা উজু মুদ্রা দিয়ে সজ্জিত করা। গবেষকদের ধারণা, ওই নারীর মৃত্যু হয়েছিল ২১৭৭ বছর আগে। এছাড়াও সেখানে আরো একজন নারীর সমাধি পাওয়া যায়। যাকে রেশমের কাপড় পরানো হয়েছিল বলে ধারণা প্রত্নতাত্ত্বিকদের।
আইফোনের মতো এক বস্তু
স্লিপিং বিউটি নামে পরিচিত এই সমাধির নারীর সঙ্গে ছিল চামড়ার একটি ব্যাগ। কাঠের তৈরি একটি ছোট্ট তাঁত বোনা মেশিন ছিল সমাধির ভেতর। প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করছেন, এই নারী হয়তো পোশাক ডিজাইন বা তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাই তার মৃত্যুর পর তার সঙ্গেই কাজের জিনিসগুলো সমাহিত করা হয়।
আলা-তে যে জলাশয় রয়েছে। সেখানকার একটি দ্বীপে ১১০ টির মতো কবর পাওয়া যায়। টুভা প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযানের নেতৃত্বদানকারী ছিলেন ডা. মেরিনা কিলুনভস্কায়া। তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গ ইনস্টিটিউট অব ম্যাটারিয়াল হিস্ট্রি কালচারের একজন গবেষক। তিনি বলেন, এই সাইট থেকে তারা অনেক বৈজ্ঞানিক প্রাচীন নিদর্শ পেয়েছেন।
আরো অনেক জিনিস মেলে সমাধি থেকে
সেখানে তারা প্রচুর ধনকুবেরদের সমাধি পেয়েছেন। যার ভেতরে পাওয়া গেছে বহু মূল্যবান ধাতু এবং জিনিসপত্র। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার এই সমাধিগুলো তাদের আগে আর কখনো খোঁড়া হয়নি। কীভাবে ডাকাতদের থেকে এগুলো আড়ালে ছিল সে ব্যাপারেও বেশ অবাক হয়েছেন তিনি।
বন্যাকবলিত এই অঞ্চলে খনন করা এবং গবেষণা চালানো তাদের জন্য ছিল অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ। কারণ এই অঞ্চলে প্রায় সারা বছরই পানিতে তলিয়ে থাকে। বছরে মাত্র দুই মাস এখানে পানি শুকিয়ে যায়। আর একটি গবেষণা চালাতে দীর্ঘসময়ের প্রয়োজন।
সূত্র: অ্যাসাইন্টঅরিজিন
গাজীপুর কথা