ঢাকা,  শুক্রবার  ১৯ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

হুমকির মুখে বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী

প্রকাশিত: ০৭:৪৪, ২৭ জুন ২০২০

হুমকির মুখে বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী

মানুষের অস্তিত্বকে বাঁচানোর জন্যই প্রয়োজন পৃথিবীর জীববৈচিত্রকে রক্ষা। প্রাকৃতিক পরিবেশে সকল বাস্তুতন্ত্রের খাদ্য শৃঙ্খলের শক্তি প্রবাহকে অটুটু রাখা। কিন্তু আজ মানুষ নিজেই তাঁর অস্তিত্বে জন্য হুমকি। মানুষই আজ প্রকৃতির বড় শত্রু। আমরাই অবিবেচকের মতো যথেচ্ছভাবে নষ্ট করছি পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ, নষ্ট করছি বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। আমাদের অনিয়মতান্ত্রিক কার্যকলাপ বন্যপ্রাণী বসবাসের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের প্রকৃতি থেকে একেবারেই হারিয়ে গিয়েছে ৩১টি প্রজাতির বন্যপ্রাণী। যদি এমনটি চলতে থাকে তাহলে হয়তো আমাদের প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাবে আরও অসংখ্য বন্যপ্রাণী। যার বহুমাত্রিক প্রভাব পরবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপর।

বন্যপ্রাণী: বন্যপ্রাণী ধারণাটি আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে প্রচলিত নয়। বাংলা ‘বন্যপ্রাণী’ শব্দটি ইংরেজি ÔWildlife’ থেকে এসেছে। Microsoft Encarta অভিধানে বন্যপ্রাণীর সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এভাবে ÔWild animals, birds and other living things, sometimes including vegetation, living in a natural undomesticated state’। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন, ১৯৭৪ এর অনুসারে বন্যপ্রাণী হলো ‘মানুষ এবং গৃহপালিত প্রাণী প্রজাতি বা মাছ বাদে পাখি এবং সরীসৃপের ডিমসহ যে কোনও মেরুদণ্ডী প্রাণী’ অর্থাৎ ব্যাপক অর্থে বন্যপ্রাণী বলতে বোঝায়- সকল প্রাণী, পাখি, পোকামাকড় প্রভৃতি যারা বন্য এবং প্রাকৃতিক পরিবেশে বসবাস করে।

বাংলাদেশে বসবাসরত বন্যপ্রাণীর বাসস্থান ও পরিসংখ্যান: উপমহাদেশে বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান বন্যপ্রাণী বসবাসের খুবই উপযুক্ত। ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশ ২০০ ৩৪ হতে ২৬০ ৩৮ অক্ষাংশ এবং ৮৮০ ০১ হতে ৯২০ ৪১ দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত যার পূর্ব, পশ্চিম এবং উত্তর তিনদিকেই ভারতীয় সীমান্ত আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। প্রাণিভৌগলিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশ ওরিয়েন্টাল অঞ্চলের অধীন হিমালয় চাইনিজ উপ-অঞ্চলের অন্তর্গত। নদীমাতৃক বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তিনটি বড় আন্তর্জাতিক নদী পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র। প্রাণীবিদরা মনে করেন, বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এদেশের বৈচিত্রময় জীববৈচিত্রের সম্মিলন ঘটেছে। এদেশে যেসব অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশে সর্বদাই বন্যপ্রাণী বিচরণ করে সে গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :

 ১. দেশের কেন্দ্র বিন্দু থেকে উত্তর মুখী পাতা ঝরা বন বা শালবনঃ ঢাকা, টাঙ্গাইল, জামালপুর, ময়মনসিংহ শহরে বনাঞ্চল এখানে অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে মধুপুরের গজারী বন্য অন্যতম। বানর, কাঠবিড়ালি, বনমুরগী, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, পাখি, এখানে বাস করে।
২. উত্তর পূর্বাঞ্চলের চির সবুজ ও মিশ্রচির সবুজ বন: দেশের পূর্বাঞ্চল, উত্তরে সিলেট থেকে দক্ষিণে চট্টগ্রাম জেলার টেকনাফ পর্যন্ত এ বনাঞ্চল বিস্তৃত। হাতি, বানর এখানকার উল্লেখযোগ্য বন্যপ্রাণী।
৩. দেশের দক্ষিণ পশ্চিম কোনের সুন্দরী ও গেওয়া গাছ বেষ্টিত সুন্দর বন ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট ঃ  এ বন ভারত ও বাংলাদেশের উপকুলে বিস্তৃত। বাংলাদেশ অংশ প্রায় ৬০,০০০ বর্গ কিলোমিটার অন্তর্ভুক্ত। যার বিস্তৃতি সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, ও পটুয়াখালী জেলায়। এখানকার উল্লেখযোগ্য বন্যপ্রাণী গুলোর মধ্যে রয়েছে- রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতাবাঘ, বানর, চিত্রল হরিণ, বন্যশূকর, কুমির , নানা প্রজাতির সাপ, পাখি,ও কীটপতঙ্গ।
৪. চকোরিয়া সুন্দরবন: চট্টগ্রাম জেলার চকোরিয়া থানাধীন মাতামহুরী নদী যেখানে মহেশখালী খড়িরসাথে মিশেছে সেখানকার বনকে বলা হয় চকোরিয়া সুন্দরবন।
৫. দ্বীপাঞ্চল ও উপকূলবর্তী ম্যানগ্রোভ বন: কক্সবাজার জেলার উখিয়া টেকনাফে রয়েছে উপকূলবর্তী ঘনবন ও বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। রামু উপজেলায় রয়েছে জাতীয় উদ্যান। বাংলাদেশের সবচেয়ে দক্ষিণে সেন্টমার্টিন দ্বীপও এতে অন্তর্ভুক্ত। সাত কিলোমিটার আয়তনের এ দ্বীপটি প্রবালের তৈরি। দ্বীপের দক্ষিণ পশ্চিমে সামান্য পরিমাণ ম্যানগ্রোভ বন আছে । এখানে বন্যপ্রাণীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- জল কবুতর, গাংচিল, আবাসিক ও অনাবাসিক পাখি , সামুদ্রিক কাছিম, ও ব্যাঙ,টিকটিকি ,ডোরা, দারাজ সাপ এবং রামগদি, চমচিকা ,বাদুর ইত্যাদি।
৬. গ্রামীণ বন বা ঝোপঝাড়: বর্তমানে আমাদের দেশে এ বনের পরিমাণ খুবই কম, তবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা  সমূহ, ঢাকা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, যশোর এ বন আংশিকভাবে এখনো আছে। তাতে বহু প্রজাতির সাপ, শেয়াল, বাগডাসা, খাটাশ, বনবিড়াল পাওয়া যায়। কথিত আছে, প্রায় একশত বছর আগেও এখানে বাঘ বাস করতো।
৭. জলাভূমির বন: দেশের হাওর, বাওর, বিল, স্রোতহীন নদী ইত্যাদি এসব বনের অংশ। রাজশাহীর চলনবিল, ঢাকার আড়িয়াল বিল, সিলেট, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর অঞ্চল এ বনের অন্যতম। এ সব অঞ্চলে ইতোপূর্বে গণ্ডার, বুনো, শুকর, হরিণ, বাঘ, ও বুনোহাঁসের আবাসস্থল ছিল। সেগুলো এখন একেবারেই বিলুপ্ত। বর্তমানে জলাভূমিতে দেশি পাখি, উদবিড়াল, বেজি, মেছোবিড়াল, কয়েক প্রজাতির ব্যাঙ, সাপ, কাছিম ও গুই সাপ দেখা যায়।
বাংলাদেশে বন্যপ্রাণী নিয়ে গবেষণার পরিমাণ তুলনামুলকভাবে খুবই কম। এমনকি সরকারি পর্যায়ে বন্যপ্রাণীর পরিসংখ্যান গত সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্যও নেই। বন্যপ্রাণী গবেষক রেজা খানের মতে (১৯৮৩), বাংলাদেশে ৮৪০টি প্রজাতির বন্যপ্রাণী আছে। যাতে ১৯টি প্রজাতির উভচর, ১২৪টি সরীসৃপ, ৫৭৮টি পাখি, ১১৯টি প্রজাতির স্তন্যপায়ী। প্রফেসর সোহরাব উদ্দিন সরকার ও প্রফেসর নূরজাহান সরকার তাঁদের ÔWild life of Bangladesh- A Systemtic’ (১৯৮৮) এতে, ৯৩২ টি প্রজাতির বন্যপ্রাণীর কথা উল্লেখ করেন। যাতে ২৩টি প্রজাতির উভচর, ১৫৪টি সরীসৃপ, ৬৩২টি পাখি, ১২৩টি প্রজাতির স্তন্যপায়ী। অন্যদিকে আইইউসিএন বাংলাদেশ (২০১৫) সর্বশেষ তথ্য মতে, বাংলাদেশে মোট ৯২০ টি প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে , যেখানে ৪৯টি প্রজাতির উভচর, ১৬৭টি সরীসৃপ, ৫৬৬ টি পাখি, ১৩৮টি স্তন্যপায়ী। সার্বিক তথ্য বিবেচনা করে দেখা যায়, আমাদের দেশের মোট আয়তনের তুলনায় এখনে বসবাসরত বন্যপ্রাণীর প্রজাতির সংখ্যা বেশি।

বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীর হুমকির বিভিন্ন ধরন: মানুষ প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে পরিবেশকে করছে দূষণ। নানাভাবে ধ্বংস করছে বনভূমি। নষ্ট করছে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। বেআইনি ভাবে যত্রতত্র শিকার হচ্ছে বন্য পশু-পাখি। আমাদের এই সব কার্যকলাপ প্রভাব ফেলছে বন্যপ্রাণীর উপর। যার দরুন ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে কিছু বন্যপ্রাণী। আইইউসিএন বাংলাদেশ (২০১৫) এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এই বিলুপ্ত বন্যপ্রাণীর সংখ্যা ৩১টি। এর মধ্যে ১টি সরীসৃপ, ১৯টি পাখি, ও ১১টি স্তন্যপায়ী প্রজাতি রয়েছে।
এদিকে আমাদের  পরিবেশ থেকে একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে কয়েকটি প্রাণী অন্যদিকে বসবাসকারী বন্যপ্রাণীর অবস্থাও খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। বন্যপ্রাণীর এরকম অবস্থা আমাদের সত্যিই ভাবিয়ে তুলছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীর জীবনদশা তুলে ধরে আইইউসিএন বাংলাদেশ (২০১৫) একটি তালিকা প্রনয়ণ করে। তালিকাটি পর্যবেক্ষণ করলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠবে। যেখানে দেখা যায় বাংলাদেশে বসবাসরত প্রায় ২০% প্রজাতির বন্যপ্রাণী যে কোনো ধরণের হুমকির শিকার।
বাংলাদেশে বন্যপ্রাণী বিলুপ্তি বা বসবাসের হুমকির জন্য দায়ী উল্লেখযোগ্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে -  উল্লেখযোগ্য হারে বনভূমি হ্রাস পাচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১২%-১৭% বনভূমি রয়েছে। যা দেশের মোট আয়তনের তুলনায় খুবই কম।
- বন্যপ্রাণী বাসস্থানের অপরিকল্পিত ভাবে শিল্পকারখানা তৈরি।
- বদ্ধভূমি, কৃষিভূমি, বিল, হাওর, ও বনভূমির মাঝখানে বড়বড় রাস্তা ঘাট তৈরি।
- নদী ও জলাশয় ভরাট।
- যথেচ্ছভাবে বন্যপ্রাণী শিকার।
- বন্যপ্রাণী সম্পর্কে মানুষের অসচেতনতা।
- আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়া।
- অতিমাত্রায় পরিবেশে রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার।
- কক্সবাজার জেলায় ২০১৭ সালে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থী আবাসের জন্য বিপুল পরিমান বনভূমি ধ্বংস। তথ্যমতে, রোহিঙ্গাদের জন্য প্রায় ৬ হাজার একর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। যার বিরুপ প্রভাব পড়েছে সেখানে বসবাসরত বন্যপ্রাণী তথা পরিবেশের উপর।
বাংলাদেশে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য সরকার বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) অধ্যাদেশ ১৯৭৩ পাশ করে পরবর্তীতে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) সংশোধন আইন, ১৯৭৪ পাশ করা হয়। এই আইনের আওতায় বাংলাদেশ সরকার বন্যপ্রাণীর জন্য সংরক্ষিত এলাকা স্থাপন ও তার ব্যবস্থাপনার কাজ শুরু করে। এই আইন অনুযায়ী বন্যপ্রাণী জন্য অভয়ারণ্য জাতীয় উদ্যান, গেম রিজার্ভ, সাফারি পার্ক, ইকোপার্ক ইত্যাদি স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু করে। পুরাতন সকল বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন সংশোধন করে সরকার ২০১২ সালের জুলাই মাসের নয় তারিখে ‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিল- ২০১২’ নামে একটি নতুন বিল সংসদে পাশ করে। তাতে অনুমতি ব্যতীত যেকোনো ধরনের বন্যপ্রাণী হত্যা, বিক্রি নিষিদ্ধ করে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির বিধান রয়েছে রাখা হয়। কিন্তু সরকারের এই সব উদ্যোগ কতটুকু সকল ভাবে কার্যকর হচ্ছে তাই প্রশ্নাতীত ব্যাপার। বন্যপ্রাণী রক্ষার জাতীয় উদ্যোগের পাশাপাশি জেলা পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসনের কি ভূমিকা থাকা উচিত এ বিষয়ে জানতে চাইলে, প্রাণীবিদ্যার অধ্যাপক নেত্রকোনা সরকারি কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক নুরুল বাসেত বলেন ‘শুধু আইন করেই চলবে না, দেশের প্রতিটি জেলার স্থানীয় প্রশাসনের উচিত সেই আইন কে যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করা। এবং বন্যপ্রাণী আইনের পরিপন্থী যে কোনও কার্যকলাপের জন্য অপরাধীকে উপযুক্ত শাস্তির বিধান করা। পাশাপাশি সরকারের উচিত এই বিষয়টি কঠোর নজরদারি করা।’ জেলা পর্যায়ে কলেজে গুলোর প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বন্যপ্রাণী রক্ষায় কি ভূমিকা থাকা উচিত এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু প্রাণিবিদ্যার শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচিতে বন্যপ্রাণীর বিষয়টি সংশ্লিষ্ট তাই সকলের উচিত বন্যপ্রাণী রক্ষা ও সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণকে সচেতনতার জন্যে ক্যাম্পেইন করা। পাশাপাশি যে সব জেলায় বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য আছে সেইসব জেলায় মাঠ পর্যায়ে বন্যপ্রাণী নিয়ে গবেষণা করা ও তাদের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরা। মূলকথা বন্যপ্রাণী বিলুপ্তি বা হারিয়ে যাওয়ার ভয়াবহতা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে না পারলে সরকারের কোনও আইন করেও কাজ হবে না।’

বাংলাদেশে বন্যপ্রাণী জীবন দশার যে অবস্থা চলছে এমন করে চলতে থাকলে একদিন হয়তো প্রকৃতি থেকে অনেক বন্যপ্রাণীই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। যদি এমন হয় তাহলে আমাদের পরিবেশের উপর কি প্রভাব পড়বে তা জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. দোলন রায় বলেন, ‘ আমাদের পরিবেশে স্থলজ ও জলজ উভয় বাস্তুতন্ত্রের খাদ্য শৃঙ্খলে ভারসাম্যহীন অবস্থা দেখা দিবে, জীব বৈচিত্রে ব্যাঘাত ঘটবে শক্তি প্রবাহে, বিপর্যয় ঘটবে পরিবেশের। যে বিপর্যয়ের ভুক্তভোগী হব আমরা নিজেরাই।’ বন্যপ্রাণী রক্ষায় সরকারের আরও কি করা উচিত জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘সরকার ইতোমধ্যে যে সকল কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বিশেষকরে বন্যপ্রাণীর জন্য অভয়ারণ্য স্থাপন এ কার্যক্রমগুলোকে আরও ব্যাপক ভাবে করতে হবে। বন্যপ্রাণী আবাসস্থগুলোকে রক্ষার জন্য আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে। যে পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল গুলো সকল ধরণের হুমকি থেকে বিপদ মুক্ত করতে না পারব সে পর্যন্ত বন্যপ্রাণীগুলোকে রক্ষা করা যাবে না।’ বন্যপ্রাণী রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কি ভূমিকা থাকা উচিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই বন্যপ্রাণী নিয়ে বিভিন্ন ধরণের গবেষণা চলছে। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা ছাত্র-ছাত্রীদের বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগও রয়েছে। তারপর অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় তহবিলের অভাবে গবেষণার বিভিন্ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়। সরকারের উচিত বিষয়টি নজরদারি করা।’
জীববৈচিত্র রক্ষা, মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন সার্বিক দিক দিয়ে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং তাদের জীবনকে যে কোনও বিপণ্নতা থেকে রক্ষা করা একান্ত জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে। সরকার, সচেতন জনগণ এ বিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেই আমরা আশা করি।
তথ্যসূত্র:
১। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী, ড. মো: আলী রেজা খান, ঢাকা, ১৯৮৭।
২। বন্যপ্রাণী ও বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা, ড. মো: খলিলুর রহমান, ড. মো: তোফাজ্জল হোসেন, ঢাকা, ২০০৯।
৩। বন্যপ্রাণী ও তার ব্যবস্থাপনা, মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ, সারমিন সুলতানা, সাজেদা বেগম, ঢাকা, ২০০৯।
৪। দৈনিক প্রথম আলো, ৯ জুলাই ২০১২।
৫। দৈনিক সমকাল, ২২ জুন ২০১৫।
৬। দৈনিক প্রথম আলো, ১৭ জুলাই ২০১৮।
৭। দৈনিক প্রথম আলো, ২১ মার্চ ২০১৯।
৮। আইইউসিএন বাংলাদেশের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট।   

গাজীপুর কথা