ঢাকা,  শনিবার  ২০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে রূপপুর পায়রায় ৭শ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ১৫:৫৭, ১৩ মে ২০২০

সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে রূপপুর পায়রায় ৭শ কোটি টাকা

করোনাভাইরাসের থাবা একসময় দুর্বল হয়ে পড়বে। দেশ ফিরবে স্বাভাবিক অবস্থায়। সচল হবে অর্থনীতির চাকা। সেই আশার আলো নিয়েই চলছে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ। এরই মধ্যে ৫ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার খসড়া বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে।

বাজেটে ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। উন্নয়ন বাজেটে রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎ কেন্দ্র নির্মাণে ১৫ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে।

এছাড়া পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, কর্ণফুলী টানেল ও দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

প্রকল্পটি ২০১০ সালে শুরু হয়েছে। সমাপ্ত হবে ২০২২ সালে। বর্তমানে প্রকল্পের অগ্রগতি ৩৮ শতাংশ।

নতুন এডিপি চূড়ান্ত করার জন্য দেশের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চাহিদা জানতে চিঠি দিয়েছিল পরিকল্পনা কমিশন। সবার চাহিদার ওপর নির্ভর করে খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এডিপি চূড়ান্ত করতে ছুটির মধ্যেও কাজ করছে পরিকল্পনা কমিশন।

পরিকল্পনা বিভাগ সূত্র জানায়, নতুন এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ১৫ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। দ্রম্নত উৎপাদনে যেতে বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এ প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ছে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় এখন সরকারি হিসাবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) দলিলে এই ব্যয়ের অংক উলেস্নখ করা হয়েছে।

এ প্রকল্পের কংক্রিট ঢালাইয়ের কাজ শুরুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে 'বিশ্ব পরমাণু ক্লাব' (নিউক্লিয়ার নেশন)-এ যুক্ত হয়। বাংলাদেশ হবে এই ক্লাবের ৩২তম দেশ। বর্তমানে বিশ্বের ৩১টি দেশে ৪৫০টি পারমাণবিক বিদু্যৎ ইউনিট চালু আছে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নের মোট ব্যয়ের ৯০ শতাংশ অর্থ ঋণে সরবরাহ করছে রাশিয়া। এই প্রকল্পে রাশিয়ার উদ্ভাবিত সর্বাধুনিক ৩+ প্রজন্মের (থ্রি পস্নাস জেনারেশন) 'ভিভিইআর ১২০০' প্রযুক্তির পারমাণবিক চুলিস্ন ব্যবহার করা হবে। প্রতিটি ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট স্থাপন করা হবে। এতে ২০২৩ সালে বিদু্যৎ উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, নতুন এডিপিতে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাবে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নে এগিয়ে চলেছে দক্ষিণবঙ্গের স্বপ্নের প্রকল্প পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ কাজ। পায়রা বন্দর বাস্তবায়িত হলে বদলে যাবে এখানকার চিত্র। স্বল্প পরিসরে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম চালু করতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। এর মধ্যে অন্যতম চ্যালেঞ্জ টার্মিনাল নির্মাণ।

টার্মিনালটি হবে ৬০০ মিটার দীর্ঘ। প্রথমে সমুদ্র পথে পাথর ও কয়লা আসবে। একটি বিশাল জাহাজের মালামাল খালাসের মতো অবকাঠামোগত সব সুবিধা থাকবে টার্মিনালে।

শুধু টার্মিনাল নয়, বন্দর ঘিরে সংযোগ সড়ক, আন্ধারমানিক নদীর ওপর সেতু ও আনুষঙ্গিক সুবিধা তৈরি করবে সরকার। কারণ পায়রা সমুদ্র বন্দরের কাছে এখনো মাটি। প্রথম টার্মিনাল নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে সংযোগ সড়কও ফোর লেন হবে।

প্রথম টার্মিনালসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ৩ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা। 'পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরে প্রথম টার্মিনাল, সংযোগ সড়ক, আন্দারমানিক নদীর ওপর সেতু ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ' প্রকল্পের আওতায় এগুলো বাস্তবায়িত হবে। জুন ২০২১ মেয়াদের আগেই প্রথম টার্মিনাল কাজ সম্পন্ন করতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চীনের বাণিজ্যিক নগর সাংহাইয়ের 'ওয়ান সিটি টু টাউন'-এর আদলে গড়ে তোলা হচ্ছে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামকে। এ ধরনের উন্নয়ন কাজ বাংলাদেশে এবারই প্রথম।

'কন্সট্রাকশন অব মাল্টি লেন রোড টানেল আন্ডার দ্য রিভার কর্ণফুলী' প্রকল্পের আওতায় এটি নির্মিত হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল' নামে প্রকল্পটির নামকরণ করা হয়।

২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে টানেল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যেই প্রকল্পের কাজ ৫৩ দশমিক ৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসেই কাজ শেষ হওয়ার কথা।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার টানেলের নির্মাণ ব্যয় ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণ হিসেবে চাইনিজ এক্সিম ব্যাংক দেবে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা।

টানেল টিউব দৃশ্যমান করতে নতুন এডিপিতে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে প্রকল্পের কাজ থমকে গেছে। ২০২২ সালে টানেল উদ্বোধন নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মায়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পে দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৩৮ শতাংশ। করোনাভাইরাসের কারণে প্রকল্পের কাজ থেমে গেছে।

পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) খলিলুর রহমান খান বলেন, নতুন এডিপির খসড়া চূড়ান্ত। এর আকার ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। তবে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তার আগে আমরা একটা সভা করব। এবারও রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গভীর সমুদ্রে বন্দর, কর্ণফুলী টানেল ও রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন