ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

শ্রীপুরে মরুভূমির ত্বীন ফল চাষে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত

প্রকাশিত: ১৫:৪৪, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১

শ্রীপুরে মরুভূমির ত্বীন ফল চাষে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত

মহাপবিত্র আল-কুরআনের ৯৫ তম সূরা আত-ত্বীন। ত্বীন শব্দের অর্থ ডুমুর। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত এ ত্বীন ফলটি অত্যন্ত সুমিষ্ট একটি ফল। সুস্বাদু এই ফল বাংলাদেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে সফল হয়েছেন মর্ডান এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী ইমাম আজম তালুকদার।

বাংলাদেশে এ ফলটি ত্বীন এবং ডুমুর দুই নামেই পরিচিত। এই ফল কৃষি খাতে নতুন এক সম্ভাবনার দোয়ার খুলে দিয়েছে বলে মনে করেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।

এই ফলটি বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়ার সঙ্গে খাপখাইয়ে নিয়েছে। এই ফলের গাছগুলো দেখতে একটু লকলকে, পাতা সবুজ। গাছ লম্বায় ৫ -১০ ফুট পর্যন্ত হয়। প্রতি পাতার গোড়ায় একটি করে ফল হয় এই ফলের ফলনও বেশ ভাল। চারা রোপণের তিন মাসের মধ্যেই গাছে ফল আসে এবং ৮৪ দিন থেকে ৯২ দিনে পাকা ফল পাওয়া যায়। সারা বছরই ত্বীন ফলের চাষ করা যায় এবং বছরে ৩৬৫ দিনই ফল দিয়ে থাকে। ত্বীন ফলের গাছ ৩৪ বছর পর্যন্ত উচ্চ ফলন দিয়ে থাকে। এর আয়ু বহু বর্ষজীবী। তাই ত্বীন ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনেকেই।

মর্ডান এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী ইমাম আজম তালুকদার জানান, এ ফল আমাদের দেশে সারাবছর পুষ্টি ও ফলের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। একই সাথে বিদেশেও রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাও অসম্ভব নয়। তাই গবেষণার মাধ্যমে সম্ভাবনাময় এ ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও বিস্তারের জন্য গাজীপুরের শ্রীপুরে বারতোপা এলাকায় সাড়ে তিন বিঘা জমির উপরে চাষ শুরু করেছি।

২০১৪ সাল থেকে এই ফল চাষের জন্য গবেষণা শুরু করেছি ২০১৭ সালের দিকে প্রথমে থাইল্যান্ড ও তুরস্ক এবং সৌদি আরব থেকে তিনটি প্রজাতির দুইশ করে মোট ছয়শত ত্বীন গাছের কাটিং নিয়ে এসে চাষ শুরু করি। বর্তমানে সাত বিঘা জমির উপরে বিভিন্ন দেশ থেকে আনা সাতটি প্রজাতির ফলের চারা রয়েছে। এখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০-২৫ কেজি ফল সংগ্রহ করা যায়। যার প্রতি কেজি ফলের মূল্য ১০০০ টাকা।

প্রতিদিন দেশের দূর-দূরান্ত থেকে চাষিরা চারা ও ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা বাংলাদেশ মডার্ন এগ্রো ফার্ম এন্ড নিউট্রিশন অভিযোজন (Adapting) পদ্ধতিতে জাত উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক উচ্চ মূল্যের, উচ্চ ফলনশীল, দ্রুত ফলনশীল এবং অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ত্বীন ফলের চারা উৎপাদনের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ভাবে সম্প্রসারণ করে থাকি।

তিনি আরও জানান, কৃষি ক্ষেত্রে সবচেয়ে লাভজনক হচ্ছে ত্বীন ফল। এক বিঘা জমিতে ত্বীন চাষ করতে এক লক্ষ সত্তর হাজার টাকার মতো খরচ হয়। তা থেকে বৎসরে ফল বিক্রি করা যায় প্রায় তিন গুণেরও বেশি।

মর্ডান এগ্রো ফার্মের তত্ত্বাবধানকারী তানভীর আহমেদ জানান, মূল ত্বীন গাছ থেকে তৈরি করা কলমের তিন মাস বয়স থেকে ফল দেয়া শুরু করে। ফল ধরার এক সপ্তাহের মধ্যে খাওয়ার উপযোগী হয়। প্রতিটি গাছে প্রথম বছরে ন্যূনতম চার থেকে আট কেজি ফল ধরে। পর্যায়ক্রমে প্রতিবছরই দ্বিগুণ ফল পাওয়া যায়। সারা বছরই গাছ থেকে ফল পাওয়া যায়। খোলা মাঠ ছাড়াও টবের মধ্যে ছাদ বাগানে ত্বীন চাষ করে ভাল ফলন পাওয়া গেছে।

ছাদ বাগানের চাষিদের মধ্যেও ব্যাপক চাহিদা পাওয়া গেছে। ত্বীন ফল ও গাছের ব্যাপক চাহিদার কারণে সাতটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ফার্ম কর্তৃপক্ষ। এখান থেকে কলম তৈরি করে নিজেদের প্ল্যান্ট ছাড়াও চাষিদের মধ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা থেকে ফল বিক্রেতাসহ ভোজন রসিকরা এখান থেকে ত্বীন কিনে নিয়ে যান। ফলের পাশাপাশি সৌখিন চাষিরা চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। দুই মাস বয়সী চারার পাইকারি মূল্য ৫২০ টাকা ও খুচরা মূল্য ৭২০ টাকা। এখান থেকে প্রতি মাসে দুই হাজার চারা বিক্রি হচ্ছে।

গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মাহবুব আলম জানান, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় ও ত্বীন ফল চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। গাজীপুরের এই বাগান ছাড়া এতো বড় পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে দেশের কোথাও ত্বীন ফলেন চাষ করা হয়নি। আমরা এই প্রকল্পটি পরিদর্শন করে খামারিকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি। উচ্চমূল্যের এই ফলের চাষ কৃষকদের মাঝে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে পারলে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হবে এবং অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

গাজীপুর কথা