ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৮ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

শুধু বিষম লেগেই বছরে লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু!

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৭ আগস্ট ২০২০

শুধু বিষম লেগেই বছরে লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু!

বিষম খাওয়াকে অনেকে মনে করেন এটি সাধারণ বিষয়। তবে সাধারণ বিষয়টিও কোন কোন ক্ষেত্রে জটিল হতে পারে। কেননা এটি শরীরের এক ধরনের সমস্যা। নিজেদের ভুলে গলায় খাবার বা অন্য কিছু আটকে গিয়ে দম বন্ধ হয়ে যাওয়াকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে ‘চোকিং’। প্রতিবছর বিশ্বে ১০ মিলিয়ন মানুষ গলায় খাবার আটকে বা অন্য কিছুতে শ্বাস আটকে গিয়ে ভয়ানক বিপদে পড়েন।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতি ২ ঘণ্টায় ১ জন মানুষ গলায় খাবার বা অন্য কিছু আটকে গিয়ে স্রেফ দম বন্ধ হয়ে মারা যান। সব থেকে বেশি গলায় আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটে শিশু ও বয়স্কদের। ৫ বছরের কম ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষ তাড়াহুড়া করে খাবার খেতে গিয়ে বিষম খেয়ে দম আটকে খুব কষ্টকর পরিস্থিতির শিকার হন।

খাবারের টুকরো গিলতে গিয়ে বিষম খেয়ে বা বা ফরেন বডি গলা দিয়ে শ্বাসনালীতে আটকে গিয়ে প্রাণঘাতী সমস্যা হয়। শ্বাসনালীতে কিছু আটকে গেলে ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। এর ফলে নিঃশ্বাসের কষ্ট আর কাশি অবধারিত। শ্বাসনালী একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে অক্সিজেন সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেলে হার্ট ও ব্রেন অক্সিজেনের অভাবে কাজ করতে পারে না। শরীরের অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক হয়ে ওঠে। এই অবস্থায় অবিলম্বে কৃত্রিম উপায়ে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ শুরু না করলে রোগীকে বাঁচানো মুশকিল হয়ে পড়ে।

কখন সাবধান হবেন

বাচ্চাই হোক বা বয়স্ক মানুষ, গলায় কিছু আটকে গেলে কয়েকটা লক্ষণ দেখলে অবিলম্বে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্যে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। মনে রাখবেন, এখানে সময়ের দাম অনেক বেশি। সময় নষ্ট করলে জীবন দিয়ে এর দাম দিতে হতে পারে। শ্বাসনালীতে কিছু আটকে গেলে প্রথমেই মানুষটির নিঃশ্বাসে কষ্ট হবে। এর জন্যে কাশি হবে, বুকের মধ্যে সাঁই সাঁই শব্দ, বমি বা বমি বমি ভাব, কথা বলতে না পারা, এমনকি অক্সিজেন ইনটেক একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে রোগীর ঠোঁট নীল হয়ে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে ৭ থেকে ১২ মিনিটের মধ্যে চিকিৎসা শুরু না করলে রোগীকে বাঁচানো মুশকিল।

কাদের ঝুঁকি বেশি

খাওয়ার সময় বিষম খেলেই যে দম আটকে যায় তা নয়, কিছু কিছু অসুখ থাকলে সাবধান হওয়া উচিত। অ্যাজমা, সেরিব্রাল পলসি, স্ট্রোক, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, নার্ভের অসুখ, ইসোফেগাস বা খাদ্যনালীর টিউমার, পার্কিনসনস ডিজিজ, মাসকিউলার ডিস্ট্রফি, মস্তিষ্কে চোট আঘাত, কাঁপুনি ও জ্বর, এপিলেপ্সি, খাবার গিলে খাওয়ায় অসুবিধা ইত্যাদি সমস্যা থাকলে খাওয়ার সময় সতর্ক থাকা দরকার। অবশ্য সাধারণ মানুষেরও তাড়াহুড়া করে খাবার খেতে গেলে বিষম খেয়ে বা গলায় খাবার আটকে শ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

কী করতে হবে

আতঙ্কিত না হয়ে মাথা ঠাণ্ড রেখে রোগীকে কাশতে বলুন। একই সময়ে পিঠে চাপড় মেরে গলায় আটকানো খাবারের টুকরো বেরিয়ে আসতে পারে। কিন্তু এতেও সমস্যা না কমলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

পিঠে চাপড় মারার পাশাপাশি পাঁজরের ঠিক তলায় চাপড় মারলেও শ্বাসনালীতে আটকে থাকা খাবারের টুকরা বেরিয়ে আসে। এছাড়া পেট ও পাঁজরের সংযোগস্থলে (এপিগ্যাসট্রিয়াম) দু’হাতে মোচড় দেওয়ার মতো জোরে ধাক্কা দিলে আটকানো খাবারের টুকরা বেরিয়ে আসে। তবে প্রশিক্ষিত প্যারামেডিক্যাল স্টাফরা এই কাজ করতে পারেন।

বাড়িতে বয়স্ক মানুষ থাকলে ব্যাপারটা জেনে রাখলে ভাল হয়। এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ থাকলে অনেক বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। সূত্র: আনন্দবাজার

গাজীপুর কথা