ঢাকা,  শুক্রবার  ১৯ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

শিক্ষা ক্যালেন্ডারে আসছে পরিবর্তন

প্রকাশিত: ১৭:০১, ২৮ জুন ২০২০

শিক্ষা ক্যালেন্ডারে আসছে পরিবর্তন

করোনাভাইরাস লন্ডভন্ড করে দিয়েছে শিক্ষা ক্যালেন্ডার। সংক্রমণ এড়াতে গত ১৮ মার্চ থেকে সারাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপরই মাধ্যমিকের ক্লাস অনলাইনে এবং প্রাথমিকের ক্লাস সংসদ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হলেও সকল শিক্ষার্থী এতে সম্পৃক্ত হতে পারছে না। নির্ধারিত সময়ের পর প্রকাশিত হয়েছে এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষার ফল। পিছিয়ে গেছে একাদশ শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রম, বাতিল হয়েছে স্কুল-কলেজে প্রথম সাময়িক, দ্বিতীয় সাময়িক ও অর্ধ-বার্ষিকী পরীক্ষা। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা। সিলেবাস শেষ না হওয়ায় জেএসসি, জেডিসি, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা নিয়েও রয়েছে দুঃশ্চিন্তা। এঅবস্থায় শিক্ষা ক্যালেন্ডারে ব্যাপক পরিবর্তনের আভাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। কমতে পারে এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষার সংখ্যা, চলতি শিক্ষাবর্ষ ডিসেম্বরের পরিবর্তে শেষ হবে মার্চে এবং আগামী শিক্ষাবর্ষের শিক্ষা কার্যক্রম চলবে ৯ মাস। অত্যাবশকীয় ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাকি সব ছুটি বাতিল করার পরিকল্পনাও করছে মন্ত্রণালয়।

গতকাল শনিবার এডুকেশন রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইরাব) আয়োজিত ‘করোনায় শিক্ষার চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সেমিনারে তিনি এসব তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষার সংখ্যা কমানোর বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরিস্থিতি অনুকূলে আসার ১৫ দিন পর এই পরীক্ষা নেওয়া হবে। এই ১৫ দিন শিক্ষার্থীদের নোটিস দিতে হবে। তাদের প্রস্তুতি ঝালিয়ে নিতে সময় দিতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সিলেবাস কমিয়ে আনার কথা কেউ কেউ বললেও তা নাকচ করে তিনি বলেন, এবারের এইচএসসির সিলেবাস কমানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই, কারণ তারা (শিক্ষার্থী) তো তাদের সিলেবাস সম্পন্ন করেছে। এখন যেটা হতে পারে পাবলিক পরীক্ষা (এইচএসসি) নেওয়া হবে, আবার এত লাখ লাখ পরিবার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, এত প্রশাসনের মানুষ, এত শিক্ষক- সবাইকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলব? আমরা সেটিকে কম সময়ে করতে পারি কি না, কম সংখ্যক পরীক্ষা নিতে পারি কি না- আমরা সবকিছুই কিন্তু ভাবছি।

চলতি ও আগামী শিক্ষাবর্ষের বিষয়ে দীপু মনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে কাউকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না। আবার কোনকিছু না পড়িয়েও পরবর্তী ক্লাসে উন্নীতও করতে পারি না। তাই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চলতি শিক্ষাবর্ষ আগামী মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। শিক্ষাবর্ষের ছুটি কমিয়ে শ্রেণি ঘণ্টা বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীর জ্ঞানার্জন ও দক্ষতা অর্জন এবং যতটুকু না পড়ালে পরবর্তী ক্লাসে ওঠা সম্ভব না সেটিকে গুরুত্ব দেয়া হবে। আর আগামী শিক্ষাবর্ষেও ছুটি কমিয়ে ৯ মাসে সম্পন্ন করা হবে।

সেমিনারে জেএসসি-জেডিসি, প্রাথমিক-ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা এবছর বাতিল করা কিংবা স্বল্পসংখ্যক বিষয়ে পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে শিক্ষাবিদরা পরামর্শ দিলে শিক্ষামন্ত্রী সুস্পষ্ট কিছু বলেননি। তবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শুধু পরীক্ষার জন্য সিলেবাস তৈরি করা হয় না, পরবর্তী ক্লাসে ওঠার জন্য তার জ্ঞানার্জনের জন্য যা শেখা প্রয়োজন তা শেখানো হয়। ধারাবাহিক মূল্যায়নের জন্য বছর শেষে পরীক্ষা আয়োজন করা হয়ে থাকে। এই সময়ে গ্যাপ হয়ে গেলে পরবর্তীতে এটি তাদের ভোগাবে। এজন্য কারিকুলাম বিশেষজ্ঞরা কাজ করছে।

ফি আদায়ে মানবিক হওয়ার আহ্বান: করোনা মহামারীর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি আদায়ে মানবিক আচরণ করার অনুরোধ জানান দীপু মনি। যতটা সম্ভব শিক্ষার্থীদের বেতন ছাড় দেয়ার জন্য স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান তিনি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ফি না পেলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের শিক্ষকদের কি করে বেতন দেবে? আর শিক্ষকরা তো অধিকাংশই বেতনের উপর নির্ভরশীল। কেউ কেউ টিউশনি করাতেন, এখন তো সব বন্ধ। কারণ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা এক রকম নয়। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য আছে তাদেরকে অনুরোধ করব ফি কিস্তিতে হোক বা কিছুদিন বাদ দিয়ে পরে নেওয়া হোক। কতটা ছাড় দেয়া যায় সেটা চেষ্টা করবেন।

অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদেরও কিছু ছাড় দিতে হবে। আপনার সন্তান পড়াশোনা করছে, এখন প্রতিষ্ঠান বন্ধ মানে বেতন বন্ধ করে দেওয়া যায় না। যেসব অভিভাবক আর্থিক সমস্যায় পড়ে বেতন দিতে পারছেন না, তাদেরকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন মন্ত্রী। এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্প বা বিনামূল্যে ইন্টারনেট, ডিভাইসের ব্যবস্থা করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলেও জানান দীপু মনি।

সংগঠনের সভাপতি মুস্তাক আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাব্বির নেওয়াজের সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস প্রফেসর ড. মনজুর হোসেন এবং ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. ফারহানা খানম। স্বগত বক্তব্য রাখেন- ইরাবের সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক, ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ট্রেজারার শরিফুল আলম সুমন। আলোচনায় অংশ নেন- যুগ্ম সম্পাদক ফারুক হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক এমএম জসিম, দফতর সম্পাদক এম এইচ রবিন, সাংবাদিক মহিউদ্দিন জুয়েল ও তানিয়া আক্তার।

গাজীপুর কথা