ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৮ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

শবে বরাতের রাতে যে আমল করবেন

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ২৯ মার্চ ২০২১

শবে বরাতের রাতে যে আমল করবেন

শবে বরাতের গুরুত্বপূর্ণ এ রজনীতে হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী যে সকল আমল করা যায়, তা তুলে ধরা হলো-

১. দীর্ঘ নফল নামাজ পড়া, যাতে সিজদাও দীর্ঘ হবে।
২. কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করা।
৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরূদ পাঠ করা।
৪. গোনাহের কথা স্মরণ করে ইস্তিগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করা।
৫. কবিরা গোনাহ হতে তাওবা করে ফিরে আসা
৬. রহমত ও কল্যাণ কামনায় দোয়া করা।
৭. রাতের কিছু সময় ঘুমানো। রাত জেগে ইবাদাত করার ফলে যেন ফজরের নামাজ তরক না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা।
৮. শেষ রাতে সেহরি খাওয়া।
৯. পর দিন রোজা রাখা।

মনে রাখতে হবে-
ইসলামি বইয়ের মোড়কে অনেক অনির্ভরযোগ্য ওজিফা, বই-পুস্তকে নামাজের নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন লেখা আছে। আবার প্রতি রাকাআতে কোন সুরা কতবারমিলাতে হবে ইত্যাদি নিয়ম কানুনের নির্দেশনা দেয়া আছে। হাদিসে যার কোনো ভিত্তি নেই। এগুলো মানুষের মনগড়া পন্থা। এ সকল ভিত্তিহীন আমল থেকে হিফাজত থাকা ঈমানের অপরিহার্য দাবি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ ফজিলতপূর্ণ রাতে নফল নামাজ, তাওবা-ইস্তিগফার, জিকির-আজকারসহ আল্লাহ তাআলার সুন্দর নামের তাসবিহ পড়ার তাওফিক দান করুন এবং পরদিন রোজা রাখার তাওফিক দিন। আমিন।
   
শবে বরাতের ইবাদত সম্পর্কে হাদিসের নির্দেশনা
আরবি বছরের অষ্টম মাস শাবান। এ মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত হলো লাইলাতুম মিন ‌নিসফা শাবান। এটি লাইলাতুল বরাত নামে ব্যাপক পরিচিত। এ রাতকে ঘিরে পক্ষে-বিপক্ষে রয়েছে অনেক মতপার্থক্য। কেউ কেউ এ রাতকে ঘিরে আনুষ্ঠানিক ইবাদত-বন্দেগির বিপক্ষে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন আবার কেউ কেউ এ রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করার পক্ষে থাকেন।

লাইলাতুল বরাত তথা ভাগ্য রজনী নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ মতপার্থক্য থাকলেও লাইলাতুম মিন নিসফা শাবান এর ইবাদত তথা মর্যাদা সম্পর্কে রয়েছে হাদিসে বর্ণনা। অনেকে আবার এ বর্ণনাকে দুর্বল বলে থাকেন।

এ রাতকে লাইলাতুল বরাত বলে অনেকে যেমন বাড়াবাড়ি ও রুসুম রেওয়াজে মেতে ওঠেন আবার অনেকে এ রাতের ইবাদত তথা মর্যাদাকে একেবারেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে থাকেন। যার কোনোটিই কাম্য নয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ রাতের ইবাদত-সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায়। এ রাত সম্পর্কে হাদিসের যেসব বর্ণনা পাওয়া তা হলো-

>> হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে (শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতিত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (ইবনে হিব্বান)

>> হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘জিবরিল আলাইহিস সালাম আমার কাছে এসেছিলেন এবং বললেন, আপনার প্রভু আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন (জান্নাতুল) বাকিতে যাওয়ার জন্য এবং তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য।’ (মুসলিম)

>> হজরত আলি ইবনে আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন তোমরা এ রাতে দাঁড়িয়ে নামাজ পড় এবং এর দিনে রোজা রাখ। কেননা এ দিন সূর্য অস্ত যাওয়ার পর আল্লাহ পৃথিবীর নিকটতম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আছো আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করবো। কে আছো রিজিকপ্রার্থী আমি তাকে রিজিক দেব। কে আছো রোগমুক্তি প্রার্থনাকারী, আমি তাকে নিরাময় দান করবো। কে আছ এই প্রার্থনাকারী। ফজরের সময় হওয়ার আগ পর্যন্ত (তিনি এভাবে আহবান করেন)।' (ইবনে মাজাহ)

শায়খ আলবানি এ হাদিসকে জইফ জিদ্দান তথা মওজু বলেছেন।

>> হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, এক রাতে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হারিয়ে ফেললাম (বিছানায় পেলাম না)। আমি (তাঁর সন্ধানে) বের হলাম। এসে দেখলাম তিনি (জান্নাতুল) বাকি কবরস্তানে আছেন। তিনি বলেন, তুমি কি ভয় করছ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার প্রতি কোনো অবিচার করবেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি অনুমান করলাম আপনি আপনার অন্য কোনো বিবির কাছে গিয়েছেন। তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা মধ্য শাবানে (১৫ তারিখের রাতে) দুনিয়ার কাছের আকাশে অবতীর্ণ হন। তারপর কালব গোত্রের বকরির পালের লোমের চেয়েও বেশী সংখ্যক লোককে তিনি ক্ষমা করে দেন।' (তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ) হাদিসটিকেও জঈফ বলা হয়েছে।

মূল কথা হলো লাইলাতুম মিন নিসফা তথা মধ্য শাবানের রাতের নামাজ বা ইবাদত, এমন কোনো ইবাদত নয়, যা করতেই হবে কিংবা করাই যাবে না। কেউ যদি রাত জেগে ইবাদত করতে চায় তাতে যেমন অসুবিধা নেই, তেমনি আবার কাউকে জোর করে এ রাতের ইবাদত করতেই হবে তাতেও বাধ্য করানো হবে একেবারেই অনুচিত। আবার কেউ যদি এ রাতে ইবাদত-বন্দেগি করে, তাতে জোর করে বাধা প্রদান করাও ঠিক হবে না।

সর্বোপরি আল্লাহর নৈকট্য লাভে যে কোনো রাতের যে কোনো ইবাদত, তাহাজ্জাুদসহ কুরআন তেলাওয়াত-জিকির-আজকারের ফজিলত অনেক বেশি। তাই লাইলাতুম মিন নিসফা শাবান তথা লাইলাতুল বরাত নিয়ে বাড়াবাড়ি এবং ছাড়াছাড়ি না করাই হবে উত্তম।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইবাদত-বন্দেগিতে হাদিসের দিকনির্দেশনা মোতাবেক ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। হালুয়া-রুটি ও সাজ-সজ্জা, মোমবাতি জালানোর রুসুম রেওয়াজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

গাজীপুর কথা