ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৫ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

রাতের রাজপথে এলইডি হেডলাইট এর তীব্রতায় পরিণত হয়েছে মৃত্যুনগরীতে

প্রকাশিত: ১৪:১৮, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

রাতের রাজপথে এলইডি হেডলাইট এর তীব্রতায় পরিণত হয়েছে মৃত্যুনগরীতে

ইকবাল তালুকদার, চট্টগ্রামের একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসার কাজে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম আসার পথে চকরিয়াতে যখন পৌছাঁলেন এমন সময় উল্টো দিক থেকে ছুটে আসা চোখ ধাঁধানো আলোয় খেই হারিয়ে ফেললেন। কি করবেন, বুঝে উঠতে না পেরে অগত্যা দ্রুত ব্রেক কষে দিলেন। অল্পের জন্য রক্ষা পান তিনি এবং তার সাথে থাকা আরো তিন যাত্রী।
 
তাহমিদ আনোয়ার নামে আরেক চালক তার নিজস্ব প্রাইভেট গাড়ি তে করে বেড়াতে যাওয়ার পথে সাতকানিয়াতে হঠাৎ পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। বিপরীত দিক থেকে ব্যাপক সাদা আলোর বিচ্ছুরণ তার দৃশ্য শক্তি মুহুর্তেই কেড়ে নিয়েছে। ততক্ষণে ব্রেক কষেও রক্ষা হয়নি। সড়ক বিভাজনের ওপর তুলে দিয়েছেন গাড়ি । আঘাত না পেলেও অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন। কিন্তু তার গাড়ির অপর যাত্রীর আর রক্ষা হয়নি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

এদিকে মোটরসাইকেল চালক আব্দুস সালাম যাচ্ছিলেন চট্টগ্রাম থেকে পটিয়া তে তার ফ্যাক্টরিতে,মইজ্জ্যার টেক পার হওয়ার পরেই তীব্র সাদা আলোর ঝলকানিতে পথ হারিয়ে ফেললেন তিনি। ডানে-বায়ে-সামনে কোনো কিছু দেখতে না পেলেও সড়কে গাড়ি কম থাকায় আন্দাজের ওপর বাইকের নিয়ন্ত্রণ নিলেন। এভাবেই নিয়ন্ত্রণ হারাতে বসেও মাঝে মাঝেই রক্ষা পেয়ে যান তিনি। তবে সালামের ভয় কোনদিন যেন ওই সাদা আলোই জীবনে অন্ধকার টেনে আনে!

যে সাদা আলোর কথা বলা হচ্ছে, তা আর কিছুই না- মোটরযানের হেডলাইটের আলো। প্রাইভেট কার, ট্রাক, বাস থেকে শুরু করে সব ধরনের যানবাহনে এখন তীব্র সাদা আলোর হেডলাইট ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে তীব্র সাদা আলো দেয় এমন এলইডি হেডলাইট প্রাইভেট কার এবং পিকআপ ভ্যানেই বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। ইদানিং মোটরসাইকেলেও এলইডি হেডলাইটের ব্যবহার শুরু হয়েছে।

ইদানীং প্রায় প্রতিদিন ই বিভিন্ন পয়েন্টে গেলে দেখা যায়, প্রতি পাঁচটি গাড়ির মধ্যে অন্তত তিনটি গাড়িতে তীব্র আলো সৃষ্টিকারী হেডলাইট লাগানো হয়েছে।
 
চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাতে সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে একটি তীব্র সাদা আলো উৎপাদনকারী হেডলাইট। যা এখনই নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।

গাড়ির হেডলাইট সাধারণত তিন ধরনের হয়। এগুলো হলো হ্যালোজেন, জেনন ও এলইডি (লাইট এমিটিং ডাইয়ড)। তবে সবচেয়ে প্রচলিত হচ্ছে হ্যালোজেল হেডলাইট, এটিও সাদা আলো দেয়। তবে এলইডি লাইটের মতো তীব্র নয়।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির সাদা আলোর কারণে চালকের দেখতে অসুবিধা হয় বলে, হেডলাইটের উপরের অংশে দুই ইঞ্চির মতো জায়গায় কালো কালির প্রলেপ লাগিয়ে দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু এখন আর সেটা মানছে না কেউ। এর ওপর শুরু হয়েছে এলইডি হেডলাইটের ব্যবহার।

অথচ এর ফলে মৃত্যুঝুঁকি কতটা বাড়ছে তা নিয়ে প্রশাসন বা পরিবহন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কোনো মাথাব্যথা নেই।
বিশেষ করে যখন হঠাৎ সাদা আলোর ঝলকানি চোখে লাগে তখন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়। বর্তমানে প্রাইভেট কার আর পিকআপ ভ্যানে বেশি আলো দেয় এমন হেডলাইটের ব্যবহার দিনদিন বাড়ছে। এটা বন্ধ হওয়া জরুরি।

বাস, সি.এন.জি, প্রাইভেট গাড়ি প্রায় সবার সাথেই কথা বললেই বোঝা যায়, এই তীব্র আলোর কারণে তাদের কতটা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় প্রতিনিয়ত।কিছু চালক আছেন যারা সড়কে গাড়ি চালানোর নিয়ম না মেনেই অযথা গাড়ির হেডলাইট হাই তে দিয়ে রাখে যা বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহন এর চরম ভোগান্তির কারণ হয়।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণে দেশে প্রতি বছর কয়েক হাজার মানুষ মারা যায়। তার মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হল এই অতিরিক্ত আলোর কারণে চালকদের নিয়ন্ত্রণ হারানোর ফলে। এটা যদি সুষ্টু ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে হয়ত সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে বলে আশা করা যায়।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন