ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

রাতে ঘুরে বেড়ায় লিঙ্কনের ‘আত্মা’, হোয়াইট হাউজের অজানা রহস্য

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১৫ নভেম্বর ২০২০

রাতে ঘুরে বেড়ায় লিঙ্কনের ‘আত্মা’, হোয়াইট হাউজের অজানা রহস্য

হোয়াইট হাউজের নামটি শুনলেই সবার মন আন্দোলিত হয়! বিশ্ববাসীর মনে এর সৌন্দর্য নিয়ে রয়েছে বহু কৌতুহল। মার্কিন প্রেসিডেন্টের আনুষ্ঠানিক বাসভবন ‘হায়াইট হাউজ’। 

রাজনীতি, কূটনীতি, শক্তি এবং সম্ভ্রমের প্রতীক। ১৬০০, পেনসিলভানিয়া অ্যাভিনিউয়ের এই প্রাসাদসম স্থাপনা ঘিরে জড়িয়ে আছে বহু আকর্ষণীয় তথ্য।

হোয়াইট হাউজের নির্মাণকারী স্থপতি জেমস হোবান ছিলেন জন্মসূত্রে আইরিশ। তিনি ১৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে ফিলাডেলফিয়ায় কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বাসভবন হওয়ার ১০০ বছর পর অবধি এই বাড়ির নাম ছিল ‘এগজিকিউটিভ রেসিডেন্স’।

 

হোযাইট হাউসের বিভিন্ন ঘর

হোযাইট হাউসের বিভিন্ন ঘর

‘হোয়াইট হাউজ’ নামকরণ হয় ১৯০১ সালে, প্রয়াত প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট টেডি রুজভেল্টের সময়ে। ডাবলিনের লেনস্টার হাউজের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের স্থাপত্যরীতির সাদৃশ্য আছে।

হোয়াইট হাউজের জন্য জমি পছন্দ করা থেকে ফরাসি স্থপতি পিয়ের লেফঁর তৈরি নকশা অনুমোদন, সবই করেছিলেন আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন। তবে তিনি কোকো দিন এই ভবনে পা রাখতে পারেননি।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওয়াশিংটনের মেয়াদ শেষ হয় ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দে। তার দু’বছর পরে তিনি প্রয়াত হন। হোয়াইট হাউজের নির্মাণ পর্ব শেষ হয় ১৮০০ সালে। অর্থাৎ ওয়াশিংটনই একমাত্র আমেরিকান প্রেসিডেন্ট যিনি এই ভবনে কোনো দিন থাকেননি।

১৮০০ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর আমেরিকার দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস প্রথমবার এই ভবনে থাকতে শুরু করেন। ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে গ্রেট ব্রিটেন এবং তার সহযোগী দেশগুলির বিরুদ্ধে আমেরিকার যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধের জেরে ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে এই ভবনে আগুন লাগিয়ে দেয় ব্রিটিশ বাহিনী।

 

বেতরের দৃশ্য

বেতরের দৃশ্য

আবার ডাক পরে স্থপতি হোবানের। তার পরিকল্পনায় নতুন করে সেজে ওঠে হোয়াইট হাউজ। মেরামতি ও নতুন নির্মাণপর্ব শেষ হয় ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে। পরবর্তী সময়ে হোবান মাঝে মাঝে এসেছেন হোয়াইট হাউজের কোনও অংশের সংযোজন উপলক্ষে। 

প্রতিবার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট চলে যাওয়ার পরে নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের জন্য এই ভবনকে নতুন করে সাজানো হয়। আসবাবপত্র, শিল্পসামগ্রী-সহ পুরো বাড়ির অন্দরসজ্জাই আমূল পাল্টে যায়। এখানে থাকার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টকে কোনো অর্থ দিতে হয় না ঠিকই। তবে  অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রেই তাকে ব্যয়ভার বহন করতে হয়।

আমেরিকার নবম প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন, দ্বাদশ প্রেসিডেন্ট জ্যাকারি টেলর প্রয়াত হয়েছিলেন হোয়াইট হাউজে। ছাড়াও দশম প্রেসিডেন্ট জন টাইলারের স্ত্রী লেটিটিয়া টাইলার, ২৩তম প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন হ্যারিসনের স্ত্রী ক্যারোলিন হ্যারিসন এবং ২৮তম প্রেসিডেন্ট উডরো উইলসনের স্ত্রী এলেন উইলসন- এই ৩ জন প্রাক্তন ফার্স্ট লেডিরও মৃত্যু হয় এই বাড়িতেই।

অন্যান্য ঐতিহাসিক ভবনের মতো হোয়াইট হাউজের সঙ্গেও জুড়েছে ভৌতিক তকমা। অনেকেরই দাবি, এই বাড়িতে আমেরিকার ষোড়শ প্রেসিডেন্ট প্রয়াত আব্রাহাম লিঙ্কনের অশরীরী আত্মার উপস্থিতি টের পাওয়া গেছে।

 

আজও নাকি ঘুরে বেড়ায় আব্রাহাম লিঙ্কনের আত্মা

আজও নাকি ঘুরে বেড়ায় আব্রাহাম লিঙ্কনের আত্মা

এই প্রেসিডেন্টের মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না। তাকে খুন করা হয়েছিল। যে রহস্য ১০৭ বছরেও ভেদ হয়নি।  মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন খুন হন আততায়ী উইলকিস বুথের গুলিতে। এরপর অচিরেই বুথকে খুঁজে বের করা হয়। এরপর বুথ আত্মহত্যা করে। 

মজার বিষয় হলো, ধরা পড়ার সময় বুথ আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে প্যারালাইজড অবস্থায় ছিল, যে কিনা নিজের হাত পর্যন্ত নাড়াতে সক্ষম ছিল না। তাহলে বুথ কীভাবে মারা গেল? 

১৮৬৫ সালে প্রকাশিত তদন্ত রিপোর্টের পুরোটাই ছিল ঘোলাটে যেটা ঘটনার সমাধান না করে বিতর্কটিকে আরো উসকে দেয়। এটাও বলা হয় বুথের বদলে হয়তো অন্য কোন ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে।

এবার জেনে নিন হোয়াইট হাউজের আকর্ষণীয় স্থাপনাসমূহ-

হোয়াইট হাউজে রয়েছে ৬টি ফ্লোর, ১৩২টি কক্ষ, ৩৫টি বাথরুম। এছাড়া ৪১২টি দরজা, ১৪৭টি জানালা, ২৮টি ফায়ারপ্লেস, ৮টি সিঁড়ি এবং ৩টি লিফট রয়েছে। হোয়াইট হাউজ তিনটি অংশে বিভক্ত। দুই পাশে ইস্ট উইং ও ওয়েস্ট উইং এবং মাঝখানে এক্সিকিউটিভ রেসিডেন্স অংশ। 

 

ভেতরের দৃশ্য

ভেতরের দৃশ্য

গুরুত্বপূর্ণ কক্ষগুলোর বেশিরভাগই ওয়েস্ট উইংয়ে অবস্থিত। এগুলোর মধ্যে ওভাল অফিস, সিচুয়েশন রুম, রুজভেল্ট রুম উল্লেখযোগ্য। এছাড়া এক্সিকিউটিভ রেসিডেন্স ও ইস্ট উইংয়েও রয়েছে আকর্ষণীয় বেশ কিছু কক্ষ।  

হোয়াইট হাউজ সম্পর্কিত কিছু চমকপ্রদ তথ্য 

> হোয়াইট হাউজের দেয়াল রং করার জন্য ৫৭০ গ্যালন রঙের প্রয়োজন হয়। স্থপতি জেমস হোবান নিজ দেশ আয়ারল্যান্ডের লেইনস্টার হাউজ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে হোয়াইট হাউজের নকশা করেন। ডাবলিনে এখনো হোয়াইট হাউজের এই জমজ ভবনটি আছে। 

> হোয়াইট হাউজ নির্মাণে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে আফ্রিকান-আমেরিকান দাসরা। এছাড়া ইউরোপীয় অভিবাসীরাও কাজ করে এটি নির্মাণে। 

> হোয়াইট হাউজে শুরুর দিকে হুইল চেয়ার নিয়ে প্রবেশের সুবিধা ছিল না। প্রেসিডেন্ট ফ্রাংকলিন ডি রুজভেল্ট ছিলেন পোলিও রোগী। তিনি ১৯৩৩ সালে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পর হোয়াইট হাউজে হুইল চেয়ার নিয়ে প্রবেশের সুযোগ করে দেন।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন