আমরা আমিষের চাহিদা পূরণে দুই ধরনের খাবার খেয়ে থাকি পশুপ্রাণী ও পাখির গোশত। আর গোশ্তের চাহিদা পূরণে বিভিন্ন পশু-প্রাণীর গোশ্তের সঙ্গে পাখির গোশ্তও খেয়ে থাকি। কিন্তু পশু-পাখির গোশ্ত খাওয়া ক্ষেত্রে ইসলামে কিছু বিধিবিধান রয়েছে। যেসব প্রাণীতে হারামের কোনো চিহ্ন পাওয়া যাবে তা খাওয়া বৈধ নয়।
যেসব প্রাণীর গোশ্ত খাওয়া বৈধ নয়:
দাঁতবিশিষ্ট হিংস্র পশুপ্রাণী খাওয়া হারাম। যেমন- বাঘ-সিংহ, নেকড়ে বাঘ, চিতা বাঘ, হাতি, কুকুর, শিয়াল, শূকর, বিড়াল, কুমির, কচ্ছপ, সজারু ও বানর ইত্যাদি। এছাড়া পাঞ্জাধারী হিংস্র পাখি খাওয়া হারাম, যেমন-ঈগল, বাজ, শ্যেন, পেঁচা ইত্যাদি।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) দাঁতবিশিষ্ট প্রত্যেক হিংস্র জন্তু ও নখ দিয়ে শিকারকারী প্রত্যেক হিংস্র পাখি খেতে নিষেধ করেছেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৯৩৪)
হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বারের যুদ্ধের দিন (গৃহপালিত) গাধার গোশ্ত খেতে নিষেধ করেছেন এবং ঘোড়ার গোশ্ত খেতে অনুমতি দিয়েছেন।’ (বুখারি, মুসলিম) কেননা গাধা অপবিত্র জিনিস খেয়ে থাকে।’ (বুখারি)
কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন-‘তোমাদের জন্য মৃতপ্রাণী, রক্ত ও শূকরের গোশ্ত হারাম করা হয়েছে।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৩)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন-‘(হে রাসুল!) আপনি বলে দিন, যা কিছু বিধান ওহির মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, আহারকারী যা আহার করে তাতে তার জন্য আমি কোনো হারাম খাবার পাই না; কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের মাংস—এটা অপবিত্র অথবা অবৈধ। (সুরা আনআম : আয়াত ১৪৫)
নোংরা ও নাপাক কিছু খাওয়া হারাম। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তাদের জন্য তিনি (রাসুল) পবিত্র বস্তু হালাল করেন আর অপবিত্র বস্তু হারাম করেন।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৫৭)
শরিয়ত যেসব প্রাণীকে হত্যা করতে নির্দেশ ও নিষেধ করেছে সেগুলো খাওয়া হারাম। যেমন- ইঁদুর, সাপ, টিকটিকি, বিচ্ছু, কাক, চিল, হুদহুদ, দোয়েল, ব্যাঙ, পিঁপড়া ও মৌমাছি ইত্যাদি।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা তা থেকে আহার কোরো না যার ওপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়নি এবং নিশ্চয় তা সীমালংঘন।’ (সুরা আন-আম, আয়াত : ১২১)
এ থেকে বোঝা গেল আল্লাহ নাম ছাড়া জবাই করা কোন জন্তুর গোস্ত খাওয়া যাবে না। এছাড়া শরিয়ত নিয়মনীতি অনুসারে জবাই করা না হলে জবাইকৃত হালাল জন্তুও হারাম হয়ে যায়।
নাপাক বস্তু থেকে সৃষ্ট পোকামাকড় এবং যার শরীরে প্রবাহিত রক্ত নেই, সেগুলোও নাপাক বা হারাম। যেমন তেলাপোকা ইত্যাদি। এছড়া সেসব খাবারে কোনো ধরণের উপকারিতা নেই- বিষ, মদ, খড়কুটা, মাদকদ্রব্য, তামাক ও অন্যান্য নেশজাতীয় দ্রব্য ইত্যাদি।
পশু-পাখির মধ্যে যেসকল খাবার নাপাক, যেগুলোর ওপর আরোহন করা, সেগুলোর গোশ্ত ও ডিম খাওয়া এবং দুধ পান করাও হারাম।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমাদের জন্য দুই প্রকার মৃত প্রাণী ও দুই প্রকার রক্ত হালাল করা হয়েছে। মৃত প্রাণী হলো, মাছ ও পঙ্গপাল। আর রক্ত হলো, কলিজা ও প্লীহা।’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ৫৭২৩; ইবনু মাজাহ, হাদিস : ৩২১৮)
গাজীপুর কথা