ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৫ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

যেসব কারণে পদ্মা সেতু বিশ্বে অদ্বিতীয়

প্রকাশিত: ১৫:৩৭, ১০ ডিসেম্বর ২০২০

যেসব কারণে পদ্মা সেতু বিশ্বে অদ্বিতীয়

পদ্মায় শুধু একটা সেতু নয়, দেশের লাখো মানুষের আবেগ অনুভূতি জড়িয়ে আছে এই সেতুর সঙ্গে। তবে এটি শুধু বিশ্বব্যাংকের সাথে চ্যালেঞ্জ নয়, কারিগরি দিক থেকেও বিশ্বের মধ্যে নানা কারণে অনন্য বাংলাদেশের এ সেতুটি।

খরস্রোতা নদী পদ্মা, বলা হয়ে থাকে আমাজনের পর সবচেয়ে বেশি স্রোতস্বিনী নদী এটি। এখানে বর্ষায় এমন গতিতে স্রোত থাকে, যে কোনো প্রকৌশলগত কাজ করা জটিল হয়ে পড়ে। সে স্রোত সামলেই হয়েছে পদ্মা সেতুর কাজ। 

নদীর প্রতিটি পিলারে ৬টি করে যে খুঁটি বসানো হয়েছে, তার প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১২০ মিটার। শক্তিশালী হ্যামার দিয়ে নদীর তলদেশে মাটির গভীরে প্রবেশ করানো হয় এ লম্বা পাইলগুলো। এত লম্বা দৈর্ঘ্যের পাইল ব্যবহার করা হয়নি পৃথিবীর আর কোনো সেতুতে। সেখানেও জটিলতা দেখা দেয়। এত লম্বা হওয়া সত্ত্বেও বেশ কয়েকটি পিলারের ক্ষেত্রে নদীর তলদেশে শক্ত মাটি খুঁজে না পাওয়ায় এ দৈর্ঘ্য বাড়ানোর প্রয়োজন পড়ে। তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানির সঙ্গে সর্বোচ্চ ১২৪ মিটার পর্যন্ত পাইলিংয়ের চুক্তি ছিল সেতু কর্তৃপক্ষের।

এ ক্ষেত্রে নতুন করে চুক্তির প্রয়োজন দেখা দেয়। এ অবস্থায় বিকল্প একটি উপায় খুঁজে বের করে পদ্মা সেতুর পরামর্শকরা। 

তারা পাইলের দৈর্ঘ্য ঠিক রেখে প্রতিটি পিলারে ৬টির পরিবর্তে ৭টি করে খুঁটি বসানোর সিদ্ধান্ত নেন। তবে, এখানে বাড়তি যোগ করা হয় গ্রাউটিং প্রযুক্তি। প্রতিটি পাইলের বাইরের অংশে খাজ কাটা কয়েকটি অংশ তৈরি করা হয়। ওই অংশগুলো দিয়ে উচ্চ শক্তিতে সিমেন্ট প্রবেশ করানো হয়। এর আগে দেশের কোথাও গ্রাউটিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় নি। এভাবে সমাধান করা হয় পদ্মা সেতুর পিলারের নকশা জটিলতার। 

সেতুতে পিলারের ওপর স্প্যান বসানোর সময় প্রতিটি স্প্যানের নিচে যে বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়, সেটির ক্ষমতা ১০ হাজার মেট্রিক টন। এর আগে বিশ্বের কোথাও এত শক্তিশালী বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়নি। সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ হাজার মেট্রিক টন পর্যন্ত বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়েছে কয়েকটি দেশের সেতুতে। এ বিয়ারিংয়ের কাজ স্প্যানের ওপর যে চাপ তৈরি হবে সেটিকে সামাল দেওয়া। এছাড়া রিকটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলেও সেটি সামলে নিতে পারবে এ বিয়ারিংগুলো। 

পদ্মা সেতুর কাজে আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প নদী শাসন। নদী ভাঙন রোধ এবং নদীর গতি প্রবাহ ঠিক রাখতে সেতুতে আলাদা করে নেওয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত। এ প্রকল্পের বাজেট ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৮শ কোটি টাকা, যা বিশ্বের আর কোনো নদী শাসন করতে ব্যয় করা হয়নি। এ প্রকল্পের মাধ্যমে নদীর দুই পাশে ১১৪ কিলোমিটার এলাকা শাসন করা হবে। প্রকল্পের ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি এর মধ্যে ব্যয় করা হয়েছে।

গাজীপুর কথা