ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

যে মসজিদ স্মৃতি বহন করছে বঙ্গবন্ধুর

প্রকাশিত: ০৭:২৬, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

যে মসজিদ স্মৃতি বহন করছে বঙ্গবন্ধুর

এলাকাবাসী জানান, সেদিন ছিল ১৯৬৯ সালের ২৩ অক্টোবর শুক্রবার। নীলফামারীর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দলীয় ব্যানারে জনসভা (প্রচারণা) করার জন্য ঢাকা থেকে মাইক্রোবাসে করে আসার পথে ওই মসজিদে সফরসঙ্গীদের নিয়ে (নতুন মসজিদে) নামাজ আদায় করেন শেখ মুজিবুর রহমান।

উপজেলার পশ্চিম কুচিয়ামোড় ফকিরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও ১৩ নং-চড়াইখোলা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শহিদুল শেখ (৭২) বলেন, ‘আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলনের প্রচারণায় অংশ নিতে বঙ্গবন্ধু নীলফামারী এসেছিলেন। তখন আমার বয়স ছিল ১৪-১৫ বছর। গাড়ি থেকে নেমে বঙ্গবন্ধু চারচালা কুঁড়েঘরে নামাজ আদায় করতে আসেন। তখন কাঁচা ঘরটিতে নামাজ আদায় করতেন অনেকে, কোনও নাম ছিল না মসজিদের। খড়ের ঘর দেখে বঙ্গবন্ধু আমার চাচা উমর শেখের হাতে ৫০০ টাকা দিয়ে বলেন, আমার জন্য দোয়া করবেন, আমার দল ক্ষমতায় এলে পাকা মসজিদ বানিয়ে দেবো। এরপরই মসজিদটির নতুন নাম রাখা হয় শেখ জামে মসজিদ। পরে তিনি বড় মাঠের জনসভায় লাখো জনতার মাঝে বক্তব্য রাখেন। জনসভা শেষ করে ডোমার হয়ে ঢাকার উদ্দেশে চলে যান।’

একই গ্রামের বাসিন্দা ও শেখ জামে মসজিদের সহসভাপতি ওজমান গনি টুনু (৭২) স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এক কাতারে নামাজ আদায় করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেছি। নামাজ শেষে তিনি সবার সঙ্গে হ্যান্ডশেক ও মোলাকাত করে মসজিদের উদ্ধোধন ঘোষণা করেন। সেদিনই সর্বসম্মতিক্রমে নামকরণ করা হয় শেখ জামে মসজিদ। এসময় বঙ্গবন্ধু বলেন, আমার দল ক্ষমতায় এলে মসজিদটি বিল্ডিং মসজিদ করে দেবো।’

এলাকার চায়ের দোকানদার ও ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ (৬৭) বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ১৯৬৯ সালে ২৩ অক্টোবর এখানে নামাজ পড়েন। তিনি আইয়ুব হঠাও আন্দোলনের সময় নীলফামারীর বড় মাঠে জনসভা করতে আসেন। এখানে কেউ জানতো না বঙ্গবন্ধু নীলফামারী আসবেন। আল্লাহর হুকুমে ওই দিন এলাকাবাসী নিয়ত করে নতুন মসজিদ তৈরি করার সব প্রস্ততি নিয়ে নেন।’ তিনি বলেন, ‘সেদিন ছিল শুক্রবার। ঠিক নামাজের সময় হঠাৎ পাঁচ-সাতটি কার এসে থামায় মসজিদের কাছে। তিনি (বঙ্গবন্ধু) তড়িখড়ি করে ওজু করে নামাজে শরিক হয়ে যান। নামাজ শেষে সবার উদ্দেশে তিনি পরিচয় দিয়ে বলেন, আমি শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা মুসল্লিরা সবাই হতবাক হয়ে গেলাম। সে সময় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, তিনি যদি আন্দোলনে সফল হয়ে ভোটে জিততে পারেন তাহলে এই মসজিদটি পাকা করে দেবেন।’

তারা জানান, সেদিন বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী ছিলেন এম মনসুর আলী, তাজ উদ্দিন আহমেদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও নীলফামারী সৈয়দপুরের ডা. জিকরুল হক, মো. আলিম উদ্দিন, জেলা শহরের আফসার আলী, ডোমার উপজেলার আব্দুর রব, জলঢাকা উপজেলার আমিন বিএসসি, আজাহারুল হক প্রমুখ। স্থানীয় মুসল্লিদের মধ্যে রশিদ উদ্দিন, মতিয়ার রহমান, মো. খলিল উদ্দিন, মকবুল হোসেন, আজিজার রহমান, নজি মামুদ, আজগার আলী শেখ, মনতাজ মুন্সি, ছফদ্দি মামুদ, তছলিম, মনছুর আলী, তফেল উদ্দিনসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি হলে মসজিদ কমিটির লোকজন যোগাযোগ করেন। পরে ২৫ হাজার টাকা দেন বঙ্গবন্ধু। সেই টাকা দিয়ে মসজিদ কমিটি প্রথম ধাপে ইট সিমেন্ট দিয়ে ২০ হাত দৈর্ঘ্য ও ১০ হাত প্রস্থের একটি পাকা টিনশেড মসজিদ ঘর নির্মাণ করা হয়। এরপর ধীরে ধীরে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার অনুদানে এখন মডেল মসজিদে পরিণত হয়েছে। মসজিদটি বর্তমানে ৬৪ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত।

নীলফামারী জেলা পরিসদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মমতাজুল হক জানান, ‘২০১৭ সালে জেলা পরিষদের অর্থায়নে ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হয় এখানে। আগেই এর নামকরণ করা হয়েছিল শেখ জামে মসজিদ। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া শেখ জামে মসজিদটি এখন এলাকার বাইরেও দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মপ্রাণ মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।’

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন