ঢাকা,  শনিবার  ২০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

যুবাদের বিশ্বজয়, অধিনায়ক মাশরাফির বিদায় আর সাকিবের মুক্তির বছর

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১ জানুয়ারি ২০২১

যুবাদের বিশ্বজয়, অধিনায়ক মাশরাফির বিদায় আর সাকিবের মুক্তির বছর

কারোনার ভয়াল থাবায় সারা বিশ্বে প্রায় ১৮ লাখ প্রাণহানি ঘটেছে। বাংলাদেশেও প্রাণ হারিয়েছেন সাড়ে সাত হাজারের বেশি মানুষ। শুধু প্রাণনাশের ঘটনাই নয়, করোনা থমকে দিয়েছে গোটা বিশ্বের প্রাণচাঞ্চল্যকে।

করোনার কারণে ২০২০ সালে খেলাধুলা বন্ধ ছিল বছরের বেশিরভাগ সময়। মার্চ থেকে জুন- এই চার মাস মাঠে গড়ায়নি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও। প্রায় ৫ মাস পর জুলাইয়ের শেষভাগে ইংল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ দিয়ে জন্মভূমি ইংল্যান্ডে আবার মাঠে গড়িয়েছে ক্রিকেট।

সেই মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে বন্ধ ছিল বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটও। এক ম্যাচ শেষে বন্ধ হয় দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে জমজমাট আসর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। এরপর আর মাঠে গড়ায়নি লিগটি।

শুধু ঘরোয়া ক্রিকেট কেন, মার্চে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ শেষ করার পর দেশে-বিদেশে আর কোথাও খেলা হয়নি টাইগারদের। এরপর গত মাসে প্রথমে প্রেসিডেন্টস কাপ আর পরে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি আসর খেলেই বছর শেষ করতে হচ্ছে তামিম, মুশফিক, রিয়াদ, সাকিবদের।

jagonews24

করোনার কারণে পুরো বছরে বলতে গেলে আন্তর্জাতিক ম্যাচই খেলা হয়নি বাংলাদেশের। টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সব মিলে এ বছর টিম বাংলাদেশ খেলেছে মোটে ৯টি ম্যাচ। এর মধ্যে ছিল দুটি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে আর ৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।

টাইগারদের ২০২০ সাল শুরু হয় টি টোয়েন্টি দিয়ে। জানুয়ারিতে পাকিস্তানের মাটিতে লাহোরে স্বাগতিকদের বিপক্ষে দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। দুটিতেই পরাজয় (লাহোরে ২৪ জানুয়ারি ৫ উইকেটে আর ২৫ জানুয়ারি ৯ উইকেটে হার)।

এ বছর বাংলাদেশ দুটি টেস্ট খেলেছে। প্রথমটি (৭-১০ ফেব্রুয়ারি) রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে। অন্যটি ঘরের মাঠে শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের কাছে মুমিনুল হকের দল মাঠে নেমে ইনিংস ও ৪৪ রানে হার মানে। এরপর ২২-২৫ ফেব্রুয়ারি শেরে বাংলায় জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ও ১০৬ রানে হারায় মুমিনুলের দল।

মুশফিকুর রহিমের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি আর অধিনায়ক মুমিনুল হকের ৯ নম্বর টেস্ট সেঞ্চুরিতে (১৩২) প্রথম ব্যাট করতে নেমে ৫৬০ রানের (৬ উইকেটে ডিক্লেয়ার) বড় পুঁজি সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। অফস্পিনার নাইম হাসানের ম্যাচে ৯ উইকেট (৪/৭০ ও ৫/৮২), বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুলের (২ + ৪) ৬ উইকেট এবং পেসার আবু জায়েদ রাহির (৪/৭১) সাঁড়াসি বোলিংয়ে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা দাঁড়াতে পারেননি। প্রথমবার ২৬৫ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮৯ রানে শেষ হয় ক্রেইগ অরভিন বাহিনীর ইনিংস।

jagonews24

করোনার প্রাণনাশি আক্রমণ শুরুর অল্প কয়েকদিন আগে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে (৯ ও ১১ মার্চ) মিরপুরে শেষ দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। যার প্রথমটিতে ৪৮ রান ও পরেরটিতে ৯ উইকেটে জয়ী হয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।

এছাড়া ২০২০ সালের মার্চে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। ১, ৩ ও ৬ মার্চ সিলেট স্টেডিয়ামে হওয়া ওই সিরিজটিই ছিল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার শেষ ওয়ানডে সিরিজ। ৬ মার্চ সিলেটে অধিনায়ক মাশরাফি ক্যারিয়ারের ইতি টানেন। তিন ম্যাচে ১৬৯ রান, ৪ রান ও ১২৩ রান জয়ী হয় বাংলাদেশ।

৬ মার্চ সিলেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচের ২৪ ঘণ্টা আগে প্র্যাকটিসের সময় জনাকীর্ন সংবাদ সন্মেলনে হঠাৎই মাশরাফি ঘোষণা দেন, ‘আগামীকাল (৬ মার্চ) অধিনায়ক হিসেবে আমি শেষ ম্যাচটি খেলবো।’ সত্যি সত্যি ৬ মার্চ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অধিনায়ক হিসেবে শেষ ম্যাচ খেলেন দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বাধিক ওয়ানডে জয়ী অধিনায়ক মাশরাফি।

এছাড়া করোনার কারনে এ বছর দেশে ও বিদেশে মিলে বাংলাদেশের ৭ টি সিরিজ অনুষ্ঠিত হয়নি। প্রথমে পাকিস্তান সফরে একটি টেস্ট আর একটি ওয়ানডে বাতিল হয়। এরপর শ্রীলঙ্কা সফর নিয়ে অনেক কথা-বার্তা হলেও লঙ্কানদের কঠোর করোনা প্রটোকলের কারণে সফর বাতিলের ঘোষনা দেয় বিসিবি।

jagonews24

করোনার শুরু থেকে পর্যায়ক্রমে আয়ারল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ড সফর বাতিল হয়। নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার খেলতে আসার কথা ছিল। ওই দুই সিরিজও অনুষ্ঠিত হয়নি করোনার কারণে। এরপর বিশ্ব টি-টোয়েন্টি আসরের ঠিক আগে নিউজিল্যান্ডের সাথে দুটি টি-টোয়েন্টি খেলতে নিউজিল্যান্ড যাবার কথা ছিল টাইগারদের। অস্ট্রেলিয়ায় যে বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টি বাতিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থগিত হয়ে যায় টাইগারদের নিউজিল্যান্ড সফরও।

এছাড়া করোনা কেড়ে নেয় বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টি আর এশিয়া কাপ। এশিয়া কাপ ছিল দুবাইতে। বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টি অস্ট্রেলিয়ায়।

এ বছর দেশের ক্রিকেটে আরও দুটি বড় ঘটনা ঘটেছে। এক বছর নিষিদ্ধ থাকার পর ২৯ অক্টোবর মুক্ত হন সাকিব আল হাসান। তবে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার মাঠে নামেন নভেম্বরে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি দিয়ে।

jagonews24

সাকিবের নিষেধাজ্ঞা মুক্তির আনন্দের আগে বিষাদে ছেয়ে যায় দেশের ক্রিকেট। পরলোকে পাড়ি জমান নিবেদিতপ্রাণ ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা বাঁ-হাতি স্পিনার রাম চাঁদ গোয়ালা।

করোনার ভয়াল থাবা কেড়ে নিয়েছে সকল আনন্দ। যুবাদের অবিস্মরণীয় সাফল্য ঢাকা পড়ে যায় তাতে। না হয় এ বছরটি হয়ে থাকতো দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের বাইরে যুবাদের সোনালী সাফল্যে মোড়ানো।

এরপরও ভুলে গেলে চলবে না, এ বছর ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতকে হারিয়ে বিশ্ব যুব ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা সাফল্য উপহার দিয়ে হইচই ফেলে দেন আকবর আলী, তানজিদ তামিম, পারভেজ ইমন, শরিফুল ও রাকিবুলরা।

jagonews24

তবে হতাশ করেন নারী ক্রিকেটাররা। ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ায় নারীদের বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টিতে করুণ পরিনতি হয় সালমা, জাহানারাদের। একটি ম্যাচেও জয়ের দেখা মেলেনি। সব ম্যাচ হেরেই ফিরতে হয় দেশে।

তবে বছরের শেষ দিকে ভারতের নারী আইপিএলে সালমা আর জাহানারা ভাল খেলে সে ব্যর্থতা খানিক পুষিয়ে দেন। দু’জনই নজর কাড়া পারফরমেন্স দেখান। শুধু তাই নয়, সালমার দল ট্রায়াল ব্লেজার্স হয় চ্যাম্পিয়ন।

এভাবেই পাওয়া না পাওয়ার বেদনায় শেষ হলো করোনা আক্রান্ত ২০২০ সাল।

গাজীপুর কথা