ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

মুন্সিগঞ্জে পাওয়া গেলো বহুবছরের পুরোনো পিরামিড

প্রকাশিত: ০৫:০০, ১৯ মার্চ ২০২০

মুন্সিগঞ্জে পাওয়া গেলো বহুবছরের পুরোনো পিরামিড

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার নাটেশ্বরে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পিরামিড আকৃতির নান্দনিক স্তুপ আবিস্কার হয়েছে।
বুধবার বিকেলে বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণার প্রকল্প পরিচালক সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণার প্রকল্প পরিচালক এবং অহ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সভাপতি নূহ-উল-আলম লেনিন জানান, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে নাটেশ্বরের দেউলে খননের মাধ্যমে দেশের সর্ববৃহৎ পিরামিড আকৃতির নান্দনিক স্তুপ আবিষ্কার করা হয়েছে। দক্ষিণ পাশের নতুন এ বাহুটি ৪৪ মিটার দীর্ঘ। এর আগে গত দু’বছর এ স্থাপত্যটির উত্তর ও পূর্ব বাহুর অংশবিশেষ উন্মোচিত হয়।

এ বছর উৎখননে দক্ষিণ বাহুটির প্রায় পুরো অংশ উন্মোচিত হওয়ায় স্থাপত্যটির রূপ অনেকটা ফুটে উঠেছে। বাহুটির মেদির দেয়াল ৬৪ সেন্টিমিটার উঁচু এবং প্রস্থে প্রায় ৩ মিটার। অন্ড অংশে কোনো কোনো জায়গায় তিন মিটার পর্যন্ত টিকে রয়েছে। দেয়ালের বর্হিপার্শ্বের চারটি প্যানেলে বিভক্ত করে মনোরম নকশা তৈরি করা হয়েছে। কেন্দ্র অংশ মাটি দ্বারা ভরাট করা হয়েছে। এর ফলে স্তুপটি নিরেট আকার ধারণ করেছে।

আবিষ্কৃত পিরামিড আকৃতির স্তুপ স্থাপত্যের উচ্চতা প্রায় ৪৪.৬৪ মিটার।

এ সময় আরো জানানো হয়, পিরামিড আকৃতির স্তুপটির সময়কাল জানার জন্য আমেরিকার বেটা এনালাইটিক ইনক ল্যাবে পাঠানো হয়। কার্বন-১৪ তারিখ নির্ণয়ের মাধ্যমে জানা যায় স্তুপটি ৭৮০-৯৫০ খ্রিষ্টপূর্বের।

ইতোমধ্যে মেদির চারপাশে ইট বিছানো প্রদক্ষিণ পথের চিহ্নও আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রদক্ষিণ পথটি এখনো ২.৫ মিটার টিকে আছে।

আবিষ্কারের তাৎপর্য সমন্ধে নূহ- উল- আলম জানান, বৌদ্ধ ধর্মে স্তুপটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য। স্তুপটি মুখ্যত সমাধি। তবে এটি বৌদ্ধ ধর্ম, দর্শন ও সংস্কৃতিকেও প্রতিনিধিত্ব করে। এই স্থাপত্যের মাধ্যমে গৌতম বুদ্ধ ও তাঁর প্রবর্তিত বৌদ্ধ ধর্মকে প্রতীকায়ন হিসেবে উপস্থাপিত করা হয়।

স্তুপটি স্থাপত্যের মূল অংশ অন্ড সাধারণত গম্বুজাকৃতি হয়। কিন্তু নাটেশ্বরে আবিষ্কৃত স্তুপটি ব্যতিক্রমী- দুষ্প্রাপ্য পিরামিড আকৃতির। দুষ্প্রাপ্য পিরামিড আকৃতিই নিজে একটি তাৎপর্য বহন করে এবং বাংলাদেশে এটি এই প্রথম।

অতীশ দীপংক শ্রীজ্ঞানের জন্মভূমি বিক্রমপুরে প্রায় ১২০০ বছর প্রাচীন। প্রায় ২০০০ বর্গমিটার আয়তনের একটি স্তুপটি আবিষ্কার অত্যন্ত তাৎপর্যপূণ ঘটনা। বিশালত্বের দিক থেকে এটি সাঁচী, ভারহুত, অমরাবতী, সারনাথ পৃথিবী বিখ্যাত মহাস্তুপগুলোর সঙ্গে তুলনীয়।

বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা পরিচালক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পন্ডিত অতীশ দীপংকর শ্রীজ্ঞানের জীবনী গ্রন্থে উল্লেখিত নগর ও অট্টালিকার সঙ্গে নাটেশ্বরে আবিষ্কৃত বিশাল আকৃতির স্তুপের অনেকটা মিল পাওয়া গেছে। অতীশ দীপঙ্করের জীবনীতে লেখা হয়েছিল ‘‘ভারতের পূর্ব দিকে একটি দেশ আছে, যার নাম জিয়া বাং লাও । সেই নগরে হাজার হাজার ভবন রয়েছে। নগরের প্রাসাদটি সোনার অলংকরণে সাজানো। সম্প্রতিক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় আবিস্কৃত বিশাল আকৃতির পিরামিডটি তাঁর ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এ সময় তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে খনন ও গবেষণা কাজের জন্য যে অর্থ পাওয়া যাচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয়। সহযোগিতার পরিমাণ বাড়ানো হলো খনন কাজ আরো বেগবান হবে। স্তুপগুলো সংরক্ষনে উদ্যোগ নেওয়া যাবে এবং এটি বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হবে।

অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২০১০ সাল থেকে ঐতিহ্য অন্বেষণ বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা কাজ শুরু করে। ২০১০-১৩ পর্যন্ত ৯টি প্রত্নস্থানে পরীক্ষামূলক উৎখনন কাজ পরিচানা করে। এতে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের রঘুরামপুর গ্রামে বিক্রমপুরী বৌদ্ধ বিহারের ৬টি ভিক্ষু কক্ষ, একটি মন্ডপ ও পঞ্চস্তুপ আবিষ্কৃত হয়। ২০১৩ সাল থেকে নাটেশ্বর দেউলে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বেরিয়ে আসতে থাকে বৌদ্ধ মন্দির, অষ্টকোণাকৃতি স্তুপ, ইট-নির্মিত রাস্তা, ইট-নির্মিত নালা প্রভৃতি। ২০১৩-২০১৯ পর্যন্ত উৎখননে ছয় হাজার বর্গমিটারের বেশি এলাকা উন্মোচিত হয়েছে।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন