ঢাকা,  বুধবার  ২৪ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

মুজিববর্ষ উপলক্ষে আজ শুরু হচ্ছে সংসদের বিশেষ অধিবেশন

প্রকাশিত: ০৩:১৫, ৮ নভেম্বর ২০২০

মুজিববর্ষ উপলক্ষে আজ শুরু হচ্ছে সংসদের বিশেষ অধিবেশন

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী (মুজিববর্ষ-২০২০) উপলক্ষে আজ রবিবার শুরু হচ্ছে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন। এটি একাদশ জাতীয় সংসদের দশম অধিবেশন। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সন্ধ্যা ৬টায় অধিবেশন শুরু হবে। অধিবেশনকে সামনে রেখে সংসদ ভবনজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নানা আয়োজন চলছে। নতুন সাজে সাজানো হয়েছে সংসদ ভবন এলাকা। বিশেষ এই অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন তুলে ধরা হবে। অধিবেশন কক্ষে টানানো হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই প্রথম কোন ‘বিশেষ অধিবেশন’।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, আজ সংসদ অধিবেশন বসলেও মুজিববর্ষের বিশেষ কার্যক্রম আগামীকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬ টায় রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ভাষণের মধ্য দিয়ে শুরু হবে। রাষ্ট্রপতির ভাষণের আগে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ভাষণ সংসদ কক্ষে দেখানো হবে। বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য ও কর্মময় রাজনৈতিক জীবন নিয়ে রাষ্ট্রপতির স্মারক বক্তৃতার পর তা নিয়ে আলোচনার জন্য একটি সাধারণ প্রস্তাব আনা হবে। ওই প্রস্তাবের ওপর সরকার ও বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যদের দীর্ঘ আলোচনা শেষে তা পাস হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে বিদেশী অতিথিরা না থাকলেও এই অধিবেশনকে স্মরণীয় করে রাখতে সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর ওপর সাধারণ আলোচনা ছাড়াও সংসদ ভবন চত্বরে প্যান্ডেল করে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে আলোকচিত্র ও প্রামাণ্য দলিলে পাকিস্তানের গণপরিষদ, স্বাধীন দেশে নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও সংসদে বঙ্গবন্ধুর কাজগুলো তুলে ধরা হবে। একটি রাষ্ট্রের জন্ম, সংবিধান প্রণয়ন ও সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য বঙ্গবন্ধু যা কিছু করেছেন তা তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি সংসদে বঙ্গবন্ধুর দেয়া বক্তব্যও বাজানো হবে।

এছাড়া বিশেষ অধিবেশনকে সামনে রেখে সংসদ ভবনের ভেতরে-বাইরে নানা ধরনের বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। সংসদ ভবনের অধিবেশন কক্ষে স্পীকার যেখানে বসেন, তার পেছনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি টানানো হয়েছে। সংসদ ভবনের লেকে ভাসানো হয়েছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য দৃষ্টিনন্দন দুটি নৌকা। দেশের স্বাধীনতা ও উন্নয়নের প্রতীক এই নৌকা তৈরি করেছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন। সংসদ লাইব্রেরিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০০ বাণী নিয়ে আলো-ছায়ার দৃষ্টিনন্দন কোলাজ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শোক প্রস্তাব উত্থাপনের মধ্য দিয়ে দশম অধিবেশনের প্রথম দিনের কার্যক্রম শুরু হবে। এর পর প্রশ্নোত্তর ও জরুরী জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণীয় নোটিস নিষ্পত্তি করা হবে। অধিবেশনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২০’ সংসদে উত্থাপন করবেন। এর আগে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গত ২২ অক্টোবর অধ্যাদেশটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়। পরে ‘তথ্য কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৯’ সংসদে উত্থাপন করবেন তথ্যমন্ত্রী ড. মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ। সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট উত্থাপন করবেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম মেহের আফরোজ ও জাতীয় সংসদের সরকারী হিসাব কমিটির সভাপতি ডাঃ মোঃ রুস্তম আলী ফরাজী।

সংসদে উত্থাপিত বিল পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সে সম্পর্কিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ, বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মোঃ শহীদুজ্জামান সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মোঃ আফছারুল আমিন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু।

অধিবেশনের প্রথম দিনে আইন প্রণয়ন কার্যাবলীতে থাকবে তিনটি বিল উত্থাপন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেসা ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল-২০২০’, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ (সংশোধন) বিল-২০২০’ এবং শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ‘বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বিল-২০২০’ উত্থাপন করবেন। উত্থাপনের পর বিলগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হবে।

এ বিষয়ে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে সতর্কতার সঙ্গে বিশেষ অধিবেশন বসবে। করোনা নেগেটিভ ব্যক্তিরাই বিশেষ অধিবেশনে প্রবেশ করতে পারবেন। অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবনের ওপর স্মারক বক্তৃতা ও সাধারণ আলোচনায় হবে। এই অধিবেশনকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগামী ১৯ নবেম্বর পর্যন্ত অধিবেশন চলার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আগামী ৯ থেকে ১২ নবেম্বর বিশেষ কার্যক্রম চললেও বাকি দিনগুলো সাধারণ কার্যক্রম চলবে। এর আগে মুজিববর্ষ উপলক্ষে গত ২২ মার্চ সংসদের বিশেষ অধিবেশন (সপ্তম অধিবেশন) আহ্বান করা হলেও দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় তা স্থগিত করেন রাষ্ট্রপতি। করনো পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় সর্বশেষ নতুন করে অধিবেশন ডাকা হয়।

গাজীপুর কথা