ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৫ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

ভয়ঙ্কর আত্মা থেকে বাঁচতে ট্যাটুই এই নারীদের ভরসা!

প্রকাশিত: ১০:১০, ৯ মে ২০২০

ভয়ঙ্কর আত্মা থেকে বাঁচতে ট্যাটুই এই নারীদের ভরসা!

আফ্রিকা মহাদেশের নীল নদের পশ্চিম পাশে বসবাসকারী একটি নৃগোষ্ঠী বার্বার জাতি। আটলান্টিক মহাসাগর থেকে মিশরের সিওয়া মরুদ্যান ও ভূমধ্যসাগর থেকে নাইজার নদী পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে বার্বার উপজাতির বসবাস।

স্বাভাবিকভাবেই উপজাতি সংস্কৃতিগুলোর মধ্যে বৈচিত্র্য অনেক বেশি। তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠান দীর্ঘ দিনের এবং নিজস্ব ধরনের। তেমনই বার্বার উপজাতিরও একটি প্রাচীন ঐতিহ্য নারীর মুখে ট্যাটু আঁকা।  

অতীতে পুরো মুখ জুড়েই তাদের ট্যাটু থাকতনারীর মুখে ট্যাটু আঁকা সংস্কৃতির পরিচয় এবং নারীত্বের চিহ্ন বলে বিশ্বাস তাদের। আফ্রিকার অনেক উপজাতি নিজের দেহকে সাজসজ্জার ক্যানভাস হিসেবে মনে করে। তারা খুব অল্প পোশাক পরে শরীরের ট্যাটু প্রদর্শনে আনন্দ পায়। আফ্রিকার বেশিরভাগ উপজাতির বিশ্বাস দেহ সাজসজ্জার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির মর্যাদা এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। 

শরীরের ট্যাটুকেই তারা একজনের পরিচয় হিসেবে চিত্রিত করে। আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের বার্বার উপজাতির মানুষের বিশ্বাস নারীদের শরীরে ট্যাটু আঁকা তার বংশপরিচয় প্রকাশ করে। এই উপজাতির নারীর শরীরে বিভিন্ন ধরনের ট্যাটু আঁকা হয়। তাদের সব ট্যাটুরই ভিন্ন অর্থ রয়েছে। কোনো ট্যাটু এঁকে তারা বৈবাহিক অবস্থা বোঝান আবার কোনোটির দ্বারা তার উপজাতি এবং প্রাচুর্য নির্দেশ করে।

বয়স্ক এক নারীর মুখে ট্যাটুআফ্রিকান অন্যান্য উপজাতি সংস্কৃতিতে কিছু ট্যাটুর মাধ্যমে ধর্মীয় বিশ্বাসও প্রকাশ করা হয়। আফ্রিকার বিভিন্ন উপজাতির বিশ্বাস, ট্যাটু আঁকার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক এবং শারীরিক উভয় মুক্তিই মেলে।ঐতিহাসিকভাবে উত্তর আফ্রিকায় বার্বার উপজাতির নারীদের মুখে ট্যাটু আঁকার সংস্কৃতি প্রচলিত ছিল। তবে তাদের ধর্ম বিশ্বাস পরিবর্তন হওয়ায় ট্যাটু আঁকার রীতিও প্রভাবিত হয়।

এরপর থেকে ট্যাটু আঁকার ক্ষেত্রে বেশ পরিবর্তন ঘটে তাদের মধ্যে। মুখের পাশাপাশি তারা হাত ও পায়ে কালি দিয়ে সাজানোর রীতিও চালু করে। এসময় অন্য কিছু উপজাতির মানুষ শরীরের প্রতিটি অঙ্গে ট্যাটু আঁকত। বার্বার উপজাতির মধ্যে একটি বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে, ট্যাটু আঁকলে নারীর উপর খারাপ আত্মা ভর করতে পারে না। তাদের এই রহস্যময় বিশ্বাস থেকেই ট্যাটুর নকশার উদ্ভব। বার্বার সংস্কৃতিতে ট্যাটুকে ‘জেদওয়াল’ বলা হয়। যার অর্থ কবজ বা তাবিজ। 

বর্তমানে অনেকের শরীরেই ট্যাটু আঁকা রয়েছেতাদের ট্যাটু নিয়ে অনেকেই গবেষণা করেছেন। কয়েকজন গবেষক নারীর শরীরের এই ট্যাটু সৌন্দর্য এবং পরিচিতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বার্বার প্রবীণ নারীদের শরীরে ট্যাটু থাকলেও বর্তমান প্রজন্মের অনেকেরই শরীরে তা লক্ষ্য করা যায় না। এর মূল কারণ এখন তাদের একটি বৃহৎ অংশের বিশ্বাস পরিবর্তীত হয়েছে। 

তাদের ট্যাটুগুলোর মধ্যে একটির পরিচিত ‘পার্ট্রিজ’স আই’ বা তিতির পাখির চক্ষু নামে। এটি একটি ছোট হীরা আকৃতির, এর প্রান্তটি গোলাকার এবং ছোট ক্রস বহন করে। গবেষকরা মনে করেন, যে নারী এই প্রতীকের ট্যাটু আঁকে সে যেন এই পাখিটিকেই উপস্থাপন করে।

মুখে খেজুর গাছের উল্কিতাদের অনেকেই শরীরে খেজুর পাতা বা গাছ ট্যাটুও এঁকে থাকে। এটির কয়েকটি অর্থ প্রকাশ পায়। খেজুর গাছ শরীরে এঁকে তারা প্রতিরক্ষামূলক ছায়ার প্রতীক হিসেবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে। নকশাগুলোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বংশ পরম্পরায় সেগুলো তারা মায়ের কাছ থেকে কন্যারা পেয়ে থাকে। 

নারীর শরীরে ট্যাটু আঁকার জন্য বার্বার উপাজতির শিল্পীরা বিশেষ প্রকৃতির কালি ব্যবহার করত। এছাড়া তারা ট্যাটু আঁকতে তীক্ষ্ণ সূচ, ধূপ, কালো কয়লা এবং সুগন্ধযুক্ত গুল্ম ব্যবহার করে থাকে। তবে ট্যাটু করা নারীর জন্য সহজ কাজ নয়। অনেক কষ্ট সহ্য করে তবেই তারা শরীরে ট্যাটু আঁকায়। বার্বার উপজাতির ধর্ম বিশ্বাসী অনেক নারীরা এখনো মুখে ট্যাটু আঁকায়।   

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন