ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ১৮ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণ করতে পারে নতুন তেলবীজ ‘পেরিলা’

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৯ অক্টোবর ২০২০

ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণ করতে পারে নতুন তেলবীজ ‘পেরিলা’

বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের নাম বললেই চলে আসে আমদানিকৃত সয়াবিনের নাম। প্রতি বছর ১৫-১৭ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। দেশের আমদানি খরচের একটি বড় অংশই চলে যায় ভোজ্যতেলে।

তবে এর বিকল্প খুঁজে পেয়েছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। সন্ধান দিয়েছেন নতুন তেলবীজ ‘পেরিলা’র।
শেকৃবি কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এইচএমএম তারিকের তত্ত্বাবধানে পেরিলা নিয়ে গবেষণা চালিয়েন পিএইচডির গবেষক দল।
"পেরিলা" তেল জাতীয় ফসল, যার শতকরা ৬৫ ভাগই ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। এ অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। বিশেষত হৃৎযন্ত্র, মস্তিষ্ক ও ত্বকসহ ডায়াবেটিস রোগে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখে। মূলত সুস্বাস্থ্য ও জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের দিককে গুরুত্ব দিয়ে আমরা এ গবেষণা বেছে নিয়েছি।
গবেষকদের বক্তব্য , পেরিলার ফলন হেক্টর প্রতি প্রায় ১.৫ টন। স্থানীয় বাজারে প্রচলিত যন্ত্রের (ঘাণী) মাধ্যমেই পেরিলা বীজ থেকে তেল (৪০-৪২%) বের করা সম্ভব। যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক । তাই এর বীজ থেকে তেল বের করার জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ী অথবা সরকারের অতিরিক্ত কোনো বিনিয়োগের প্রয়োজনই হবে না। আমরা দ্রুতই কৃষক পর্যায়ে পেরিলা ফসলের বিস্তার ঘটাতে পারবো বলে আশা করছি।

গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক ড. তারিক হোসাইন বলেন, পেরিলার পাতা শাক-সবজি হিসেবে ও বীজকে তেল উৎপাদনে লাগিয়ে মূলত দুইভাবে ব্যবহার করা যায়। বিদেশ থেকে এর পাতা আমদানি করে উন্নতমানের রেস্তোরাঁগুলোতে ব্যবহার করা হয়। যা চাষ করতে পারলে অর্থনীতিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এ ছাড়াও পেরিলা ক্ষেতে মৌমাছির ব্যাপক আনাগোনায় বাণিজ্যিকভাবে মধু উৎপাদন করাও সম্ভব। ফলে কৃষক এটি চাষ করলে একাধিকভাবে লাভবান হবেন।


চাষাবাদ সম্পর্কে তিনি বলেন, মূল জমিতে পেরিলার জীবনকাল ৭০ থেকে ৭৫ দিন হওয়ায় সহজেই এটিকে চার ফসলি জমির আওতায় আনা সম্ভব। উদ্ভিদটির একেকটি পুষ্পমঞ্জুরিতে ১০০ থেকে ১৫০টি বীজ পাওয়া যায় ফলে অন্যান্য তেল ফসল থেকে এর উৎপাদনমাত্রা বেশি। এ ফসল উৎপাদনে তুলনামূলকভাবে পানি কম লাগে। ফলে বাড়তি সেচের প্রয়োজন হয় না। তবে একটানা বৃষ্টি না হলে ১০-১৫ দিন পর হালকা সেচ দিলেই হয়। এর পাতা এবং ফুল মাটিতে ঝরে পড়ে। এতে মাটিতে জৈব সার তৈরি হয়।

উপ-তত্ত্বাবধায়ক ড. এএফফএম জামাল উদ্দিন বলেন, দেশে বছরে প্রায় ১৫-১৭ লাখ মেট্রিক টন তেল বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়, যার বেশির ভাগই সয়াবিন এবং এটি একটি জিএমও (জেনেটিক মোডিফাইড) ফসল। তাছাড়া সরিষার তেল বেশি খেলে বিদ্যমান কিছু রাসায়নিক উপাদান শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলে। সেক্ষেত্রে পেরিলা দেশে ভোজ্যতেলের ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি সুস্থ জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
পেরিলা’র বৈজ্ঞানিক নাম Perilla frutescence। আদি নিবাস চীন হলেও সারাবিশ্বে এটি পেরিলা নামেই পরিচিত। তবে সময়ের পরিক্রমায় এটি বিস্তৃত হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ভিয়েতনাম, ভারত ও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে।

গাজীপুর কথা

    আরো পড়ুন