ঢাকা,  শুক্রবার  ১৯ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

ভালুকার কাদিগড় জাতীয় উদ্যানের বেহাল দশা

প্রকাশিত: ০৮:০৪, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ভালুকার কাদিগড় জাতীয় উদ্যানের বেহাল দশা

এক সময়ের ময়মনসিংহ জেলার দক্ষিণে এবং গাজীপুরের উত্তর সীমান্ত এলাকাটি  ভাওয়াল বনাঞ্চল নামে পরিচিত ছিল।   চারিদিকে শাল-গজারীর ঘন বন ও নদী, খাল-বিল আর সবুজঘেরা ভালুকা ছিল জঙ্গলাকীর্ণ নিভৃত পল্লী। কিন্তু কালের বিবর্তনে এই জঙ্গল বিলীন হতে থাকে। সেই সঙ্গে বিলুপ্ত হতে থাকে এই বনাঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণি ও পাখ-পাখালি।

এখানকার বনভূমি রক্ষার মাধ্যমে জীব বৈচিত্র সংরক্ষণের কথা চিন্তা করে ২০১০ সালে ভালুকা উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নের পালগাঁও ও কাদিগড় মৌজায় প্রায় ৯৫০ একর বন ভূমিতে আকর্ষণীয় ইকোট্যুরিজম কাদিগড় জাতীয় উদ্যান গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু উদ্যোগের নয় বছরেও উদ্যানটির চার পাশের সীমানা প্রাচীর ও যোগাযোগ ব্যবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। এতে উদ্যান এলাকার ৬০ প্রজাতির উদ্ভিদ ও ২০ প্রজাতির বন্যপ্রাণিসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি সংরক্ষণে উদ্যোগটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। তাছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশার কারণে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কাদিগড় জাতীয় উদ্যানটি  ভ্রমণপিয়াসীদের আকৃষ্ট করতে পারছে না। 
 
কাদিগড় জাতীয় উদ্যানে যেতে ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের সীডস্টোর বাজারে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পশ্চিম দিকে ছয় কিলোমিটার যেতে হয়। এরপর দুই কিলোমিটার উত্তরে পালগাঁও চৌরাস্তায় জাতীয় উদ্যানের প্রধান প্রবেশদ্বার চোখে পড়ে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উদ্যানে যাওয়ার পথে সীডস্টোর-সখীপুর রাস্তাটি প্রায় এক যুগ ধরে সংস্কার না করা ফলে ভালুকার অংশের কার্পেটিং ওঠে খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সীডস্টোর বাজার থেকে লাউতি খালের সেতু পর্যন্ত রাস্তার পুরু অংশেই ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। এছাড়া রানারের ২ নম্বর গেইট এলাকার ভাঙা রাস্তায় পানি জমে ছোট জলাশয়ের আকার ধারণ করেছে। এছাড়াও রানারের ১ নম্বর গেইট, তাহের খানের বাড়িরে পাশে, আফছর খাঁ মোড়ে রাস্তার মধ্যে ছোট-বড় গর্ত দেখা গেছে। উদ্যানে যাতায়াতের আট কিলোমিটার রাস্তা জুড়েই এই বেহাল অবস্থা। সীডস্টোর-সখীপুর রাস্তাটি বেহালের কারণে বড় ধরনের কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না।

তারা বিকল্প রাস্তা হিসেবে পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে বাটাজোর বাজার হয়ে ডাকাতিয়া চৌরাস্তার মোড় হয়ে ভালুকা উপজেলা সদরে প্রবেশ করেন। ওই রাস্তাটির সংস্কার হলে ছয় কিলোমিটারের দুর্ভোগ কমে যাবে। কাচিনা বাজার থেকে মল্লিকবাড়ী রাস্তার সংস্কার কাজ শুর হয়েছে। এতে দুই কিলোমিটারের দুর্ভোগ কমে যাবে।

এদিকে কাদিগড় জাতীয় উদ্যানের প্রবেশদ্বার গিয়ে দেখা যায়, উদ্যানের প্রধান ফটকের সামনের রাস্তায় ছোট একটি গর্তে পানি জমে আছে। মূল রয়েছে ফটকটি খোলা অবস্থায় আছে। দুই পাশে দুটি টিকিট কাউন্টার রয়েছে। তবে সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। 

আর ভেতরে ঢুকেই দেখা গেল, একপাল গরু চরছে। কিছুক্ষণ হাঁটার পর বাম দিকে দুটি একতলার ভবন। একটি দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য আরেকটি বন কর্মকর্তাদের। সেখানে পাওয়া গেল বন বিভাগের এক মালিকে। তার কাছে এই উদ্যানের কোনো তথ্য নেই। 

আর একটু দক্ষিণে দেখা গেল ওয়াচ টাওয়ারের। সেখান থেকে পূর্ব-দক্ষিণে দেখা মেলে বানরের পালের। এক গাছ থেকে আরেক গাছে লাফালাফি করছে। দক্ষিণ দিকে উদ্যানের ভেতরে বেশ কয়েকজন রাখাল গরু চরাচ্ছেন। ওয়াচ টাওয়ারের চার দিকে বিভিন্ন বয়সের অন্তত ১৭ জন ব্যক্তিকে ধানের ক্ষেতের আইলে বসে থাকতে দেখা যায়।

সেখানে গেলে ষাট ছুঁই ছুঁই আমছার আলী নামের এক ব্যক্তি জানান, তার জমিতে (উদ্যানের ভেতরেই) তিনি ধান লগিয়েছেন। বানর এসে সেই ধান নষ্ট করে ফেলে। তাই তিনি সেখানে লাঠি হাতে নিয়ে বসে আছেন। বানর আসা মাত্রই লাঠি ছোড়া হয়। অন্যরাও একই কায়দায় ধান ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন। 

দর্শনার্থীদের বিশ্রামাগারে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় এক বহিরাগত পরিবারের বসবাস।  কিন্তু তাদের দাবি, বেহাল রাস্তার কারণে পর্যটকেরা না আসার কারণে তারা এখানে বসবাস করছে।

পাশেই দর্শনার্থীদের ব্যবহারের জন্য টয়লেটের চারপাশের ঝোপ-জঙ্গল ওপরে লতানো গাছ জন্মেছে। দীর্ঘ দিন ধরে দরজা তালা না খোলার কারণে মরিচা ধরেছে। লেকের পাড়সহ অন্যান্য স্থানের পর্যটকদের বসার স্থানগুলোতে গাছের পাতা পচে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে আছে। 

এ ব্যাপারে ভালুকার কাচিনা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাদিগড় গ্রামের বাসিন্দা সালেহ ইমরান জানান, সীডস্টোর-সখীপুর রাস্তাটি প্রায় এক যুগ ধরে সংস্কার করা হয় না। এতে এই রাস্তার কার্পেটিং উঠে গর্তে বৃষ্টির পানি জমে যাতায়াতের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফলে এই এলাকার মানুষের বিশেষ করে কৃষক, পোলট্রি খামারি  ও মাল্টা- কমলা চাষিদের বিপাকে পড়তে হয়।

ভালুকা উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, অবকাঠামো গত উন্নয়নের অভাব ও উদ্যানে আসার রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে কাদিগড় জাতীয় উদ্যানটি কাঙ্খিত পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারেনি। আমাদের চারপাশের রাস্তাগুলোই মূল সমস্যা। রাস্তার কারণেই আমাদের এলাকায় দর্শানার্থীরা আসতে পারে না। 

এ বিষয়ে ভালুকা উপজেলা রেঞ্জের কর্মকতা মোজাম্মেল হোসেন দৈনিক অধিকারকে জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা বেহালের কারণে কাদিগড় জাতীয় উদ্যানে দর্শনার্থীদের আগমন কম। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান জানান, কাদিগড় জাতীয় উদ্যানকে জেলা ব্র্যান্ডিং এর আওতায় এনে প্রচারণার কার্যক্রম চালানো হয়েছে। জেলার পর্যটন খাতকে গুরুত্ব দিয়ে ভবিষ্যতে আরও উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। 

যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল অবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, এই সম্পর্কে ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সেটি দেখার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন